শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ খুশি হন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ খুশি হন

বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর মোকাবিলার সাধ্য মানুষের নেই। তবে মানুষ চাইলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমাতে পারে এবং বন্যার পর আবার নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বন্যার আগে সতর্ক থাকলে, সময়মতো আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবার বন্যার পর যদি মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে নতুন উদ্যমে জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তবে বন্যার ক্ষত পুরোটাই সারিয়ে ওঠা সম্ভব। মাস দেড়েক আগে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা আঘাত হানে। বন্যার আক্রমণে ফসলি জমি, চাষের পুকুর, দোকানপাট তো বটেই মানুষের বসতভিটাও তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে। গ্রামের পর গ্রাম পরিণত হয়েছে নদীতে। এখনো মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে দিন পার করছে। যাদের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে তারা কোনো প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের বাড়িতে কোনোরকম ছালার বেড়া, টিন দিয়ে দিন পার করছে। এক কথায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে বন্যাদুর্গত হতভাগ্য আদম সন্তানেরা।

 

বন্যা চলাকালে আমাদের বিত্তবানেরা সাধ্যমতো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠন, মসজিদ-মাদ্রাসা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বন্যাদুর্গতদের প্রতি। প্রয়োজনের তুলনায় সাহায্যের হাত কম ছিল এটি যেমন ঠিক, সাহায্য করতে পারে এমন হাতগুলোও দিন দিন গুটিয়ে আসছে এও সত্য। পুঁজিবাদী পৃথিবীতে মানুষের প্রতি মানুষের মমতার হাত দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানবতার জন্য, ধর্মের জন্য এটা বড়ই চিন্তার বিষয়। আমরা যারা সামর্থ্যবান আছি অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য দিয়েছেন তাদের অবশ্যকর্তব্য আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের উজাড় করে দেওয়া। অর্থের মায়ায় আর্তপীড়িত-দুর্গত মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। এ ধরনের আচরণ দুনিয়া ও পরকালের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই ডেকে আনবে না। হাদিসে এসেছে, ‘দুনিয়ায় যারা দুঃখী মানুষের দুঃখ দেখে চোখ ফিরিয়ে রাখে, মুখ ঘুরিয়ে নেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালাও তাদের দুঃখ-দুর্দশা, আজাব দেখে মুখ ফিরিয়ে রাখবেন।’

বন্যা-আক্রান্ত এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। মানুষ আশায় বুক বাঁধছে। নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে ঘরহীন-সহায়হীন লাখো মানুষ। এত দিন আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্যই করেছি। তারাও যা-ই পেয়েছে তাই নিয়েই কোনোরকম দিন পার করেছে। কিন্তু এখন তাদের ভিটায় ফিরতে হবে। যাদের ভিটা নদীতে তলিয়ে গেছে তাদের নতুন কাজের সন্ধান করতে হবে। নতুন বাড়ি তৈরি করতে হবে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে হতভাগ্য বনি আদমরা আপনার-আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা ভাবছে এই বুঝি কোনো দরদি মানুষ দরদের ডালি বিছিয়ে অর্থের জোগান নিয়ে আসবে। এক বস্তা চাল, এক ডজন টিন অথবা কোনো প্রয়োজনীয় সাহায্য তাদের হাতে তুলে দেবে। তুলে দেবে ফসলি বীজ, যা দিয়ে চাষ করে অভাব ঘোচাতে পারবে তারা।

লাখো মানুষের মনের কাকুতিভরা আহ্বানে যদি সাড়া দিতে পারি তবেই আমরা সফলতার সিঁড়ি ভেঙে অনেক দূর চলে যেতে পারব। পৌঁছে যেতে পারব আখিরাতের উচ্চ মাকামে। কিয়ামতের দিন হাউসে কাউসারের একদম কাছে। প্রিয় নবী (সা.)-এর পাশে দাঁড়াতে পারব আজকের এই আমলের বিনিময়ে।

সামর্থ্যবান ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, দুর্গত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। তাদের বসতভিটা ও ফসলের জমি লাগানোর ব্যবস্থা করে দিন। জীবনযুদ্ধে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের একান্ত কর্তব্য। মনে রাখতে হবে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়তে এসব হাড়হাভাতে মানুষের ঘামই মূল চালিকাশক্তি। তাদের পরিশ্রমেই সোনা ফলছে এ দেশের মাটিতে। সে সোনা দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বহির্বিশ্বেও। তাই এদের ছোট করে দেখার বা এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ বন্যাদুর্গতদের জীবনের বৃক্ষে সবুজ ফুল ফুটিয়ে দিন— এই কামনা করেই শেষ করছি আজকের লেখা।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

 

সর্বশেষ খবর