সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্ভোগের নগরী ঢাকা

এ অভিধা গর্বের নয়— লজ্জার

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। চার দশকেরও পুরনো এ মহানগরীর শুরু হয়েছিল মুঘল আমলে সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে। কালের বিবর্তনে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের তীরবর্তী ঢাকা এখন দুনিয়ার শীর্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নগরগুলোর একটি। দেড় কোটিরও বেশি অধিবাসীর বসবাস এ মেগা সিটিতে। মেগা সিটি হিসেবে ঢাকার উত্থান বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেমন গর্বের তেমন যানজট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা এই গর্বকে প্রতিনিয়ত আহত করছে। ইংল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এক জরিপ চালিয়ে বিশ্বের ১৫০টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ এবং কম দুর্ভোগের ১০টি করে শহরকে  চিহ্নিত করেছে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভোগের নগরীর তালিকায় প্রথম হয়েছে ইরাকের বাগদাদ, দ্বিতীয় আফগানিস্তানের কাবুল, তৃতীয় নাইজেরিয়ার ল্যাগোস, চতুর্থ সেনেগালের ডাকার, পঞ্চম মিসরের কায়রো, ষষ্ঠ ইরানের তেহরান, সপ্তম বাংলাদেশের ঢাকা, অষ্টম পাকিস্তানের করাচি, নবম ভারতের নয়াদিল্লি আর দশম ফিলিপাইনের ম্যানিলা। আর নাগরিকদের ভালো জীবনমানের স্বস্তিদায়ক শহরের তালিকায় প্রথম হয়েছে জার্মানির স্টুটগার্ট। এ তালিকায় জার্মানির চারটি শহরের নাম এসেছে। দ্বিতীয় হয়েছে লুক্সেমবার্গের লুক্সেমবার্গ সিটি, তৃতীয় জার্মানির হ্যানোভার, চতুর্থ সুইজারল্যান্ডের বার্ন, পঞ্চম জার্মানির মিউনিখ, ষষ্ঠ ফ্রান্সের বরডিউক্স, সপ্তম যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ, যৌথভাবে নবম হয়েছে অস্ট্রিয়ার গ্র্যাজ ও জার্মানির হামবুর্গ। ঢাকা যে বিশ্বের অন্যতম দুর্ভোগের শহর তা এ মহানগরীর যানজটেই স্পষ্ট। নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে যানজটের কারণে যে সময় লাগে বিমানে সে সময়ে অন্য দেশ থেকে ঘুরে আসা যায়। ট্রাফিক ব্যবস্থা বলে এ মহানগরীতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা সে সংশয়ের অবকাশও রয়েছে। দুনিয়ার আর কোনো শহরে ফুটপাথ ও রাজপথ দখল করে দোকানপাট সাজানো, গাড়ি পার্কিং কিংবা জনসভা করা হয় কিনা তা আমাদের খুব বেশি জানা নেই। বাংলাদেশকে সবুজের দেশ বলা হলেও রাজধানী ঢাকা থেকে সবুজ গাছগাছালি দিন দিন উধাও হচ্ছে। নাগরিকদের সেবাদানের নামে বছরজুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলে এ মহানগরীতে। পরিবহন ব্যবস্থার হতশ্রী অবস্থাও প্রতিনিয়ত পীড়া দেয় নগরবাসীকে, যা ঢাকাকে সাক্ষাৎ দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত করেছে। এ অভিধা গর্বের নয়, লজ্জার। এ লজ্জা থেকে রক্ষা পেতে সরকার ও দুই সিটি করপোরেশনকে যেমন যত্নবান হতে হবে, তেমন নাগরিকদের সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর