মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বর্মি জেনারেলের গাঁজাচর্চা

রোহিঙ্গাদের অস্বীকার অসুস্থতার লক্ষণ

গাঁজার নৌকায় করে পাহাড় ডিঙানো যায়। মিয়ানমারের ক্ষমতাদর্পী সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল সিন অং হ্লাইয়াং ইতিহাসচর্চার নামে সে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গত শনিবার মিয়ানমারের ডিফেন্স সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্কুলের ডিপ্লোমা বিতরণ অনুষ্ঠানে সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনি দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা বলে কোনো জাতিসত্তা মিয়ানমারে কখনই ছিল না। তিনি এ প্রশ্নে মিয়ানমারবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাঙালি ইস্যু বলে অভিহিত করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোরও চেষ্টা করেছেন মিয়ানমারের শাসনক্ষমতার ওপর ছড়ি ঘোরানোর অপকর্মে লিপ্ত এই জেনারেল। রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাঙালি ইস্যু বলে মিয়ানমারের অলিখিত শাসক যে দাবি করেছেন তা কাণ্ডজ্ঞানহীনতারই নজির। সবারই জানা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একসময়ের পরিচয় ছিল আরাকান। এটি ছিল একটি স্বাধীন দেশ। ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে বার্মার রাজা মেং শো আই আরাকান দখল করেন। আরাকান রাজা নরমেখলা পালিয়ে আসেন প্রতিবেশী বাংলাদেশের তৎকালীন রাজধানী গৌড়ে। বাংলার সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ তাকে রাজ্য উদ্ধারে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেন। রাজা বার্মার কাছ থেকে আরাকান উদ্ধারে সমর্থ হন। বাংলাদেশ থেকে তিনি যে সৈন্যদের নিয়ে গিয়েছিলেন রাজার অনুরোধে তারা সে দেশেই থেকে যায়। বাঙালি সৈন্যরা রাখাইন মেয়েদের বিয়ে করে নতুন জীবনও শুরু করে সে দেশে। যারা মূলত বাস করতেন আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গে। তাদের বংশধরেরাই আজকের রোহিঙ্গা। আরাকান রাজ্যের সঙ্গে বার্মাকে বিচ্ছিন্ন করেছে সুউচ্চ পর্বতমালা। সেহেতু ঐতিহ্যগতভাবে আরাকানের সঙ্গে বার্মার চেয়ে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল গভীর। রাখাইন রাজাদের আমলেও আরাকান দরবারে বাংলা ভাষার চর্চা হতো। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে রোহিঙ্গারা আরাকানে বসবাস করছে তারা সে মাটির সন্তান নয়— এমন দাবি গাঁজার কলকের গুণেই বলা সম্ভব। যারা এমন দাবি করেন তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়। রাখাইনে রোহিঙ্গারা বহিরাগত হলে বর্মিরা আরও বেশি বহিরাগত। রাখাইনে তারা এসেছে দখলদারের বেশে। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের নিজস্ব এবং একে বাঙালি ইস্যু বলে বর্মি শাসকরা নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না। সভ্য দুনিয়ার কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিজেদের জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই হঠকারী পথ থেকে মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠী সরে আসবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর