বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সু চির ভাষণ

সত্য লুকানোর চেষ্টা অগ্রহণযোগ্য

ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না তত্ত্বের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি। প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে স্বদেশ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাখাইন মিলিশিয়ারা। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী যেমন বাঙালিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান চালিয়েছিল, ঠিক তেমন বর্বর আচরণের জন্য মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীও আজ বিশ্ব সমাজের কাছে অভিযুক্ত। কিন্তু মিয়ানমার নেত্রী সু চি টেলিভিশন ভাষণে রোহিঙ্গাদের নাম উহ্য রেখে বলেছেন, মুসলমানরা কেন তার দেশ থেকে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে তা তিনি জানেন না। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে রোহিঙ্গাদের নাম উল্লেখ না করে তাদের রাখাইনের মুসলিম হিসেবে অভিহিত করে সু চি সুস্পষ্টভাবে অসততার পরিচয় দিয়েছেন। রাখাইনে শুধু মুসলমান নয়, রোহিঙ্গা হিন্দুরাও গণহত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। কয়েক হাজার মুসলমানের পাশাপাশি শতাধিক রোহিঙ্গা হিন্দুও নিহত হয়েছেন সে দেশে। রাখাইন থেকে বাংলাদেশে যে সব রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে তার মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। মিথ্যাচার করলেও তিনি মুসলিমরা কেন দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে তার কারণ খুঁজতে তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা একটি ইতিবাচক দিক। রাজ্যে সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সেনাবাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়ার যে কথা   সু চি বলেছেন তাও ভিন্নমাত্রার দাবিদার। রাখাইনের দেশত্যাগীদের পরিচয় নিশ্চিত করে ফেরত নেওয়ার যে কথা মিয়ানমার নেত্রী বলেছেন তাও সমর্থনযোগ্য বিষয়। তবে সু চি এবং তার সহযোগীদের এসব বক্তব্য তাদের মনের কথা না নিছক মুখের কথা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে মিয়ানমার সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর জন্য দোজখ সমতুল্য দেশ। দেশের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ ১৩৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত-নিপীড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে বীভৎস অত্যাচার-অবিচারের শিকার রোহিঙ্গারা। ছয়শ বছরের বেশি সময় ধরে রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংস অত্যাচার চালানো হচ্ছে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলারের ইহুদি নিধন এবং একাত্তরে পাকিস্তানিদের বাঙালি নিধনের সঙ্গে তুলনীয়। হিটলার ও পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়ার মতো লজ্জাজনক পরিণাম না চাইলে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করে সমস্যার সম্মানজনক সমাধানে ব্রতী হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর