শিরোনাম
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কুফল

মাওলানা মো. মুহিবুল্লাহিল বাকী
পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

প্রিয় মুসল্লিবৃন্দ! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের প্রথমত নারী-পুরুষের সৃজন, স্বভাব ও প্রকৃতি বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি : নারীপুরুষনির্বিশেষে সব মানুষ মহান আল্লাহর সৃষ্টি, মহান আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে, যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত নারী ও পুরুষ। আর আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামে তোমরা একে অন্যের কাছে বাঞ্ছনা করে থাকো এবং আত্মীয় ও বঞ্চিতদের ব্যাপারে সাবধান থেকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ (সূরা নিসা : ১)।

নারীপুরুষনির্বিশেষে সব মানুষের দুনিয়ায় আগমন আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় এবং পুরুষের পুরুষরূপে জন্ম নেওয়া আর নারীর নারীরূপে জন্ম নেওয়া নিশ্চিতভাবে আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতিফলন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল পুরুষ ও নারী।’ (সূরা নাজম : ৪৫)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল পুরুষ ও নারী।’ (সূরা কিয়ামাহ : ৩৯)।

নারী-পুরুষকে মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছামতো রূপ, গুণ, সৌন্দর্য, স্বভাব, প্রকৃতি, সামর্থ্য ও কর্মক্ষমতা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দর অবয়বে।’ (সূরা ত্বিন : ৪)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের বিভিন্ন ধরনের।’ (সূরা আল লাইল : ৪)। সুতরাং পুরুষ তার পৌরুষকেন্দ্রিক শক্তি-সমর্থ ও মেধা দিয়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করবে এবং নারী তার নারীত্বকেন্দ্রিক স্বভাব-প্রকৃতি ও মেধা-সমর্থ দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবে। নারী-পুরুষ সবাই আল্লাহর নির্দেশ পালনে আদিষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন-ইনসানকে আমার ইবাদত ও বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জারিয়াত : ৫৬)। প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুসরণে, আল্লাহর আনুগত্য ও নির্দেশ পালনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের ইহকলীন ও পরকালীন সাফল্য। আল্লাহর এসব আদেশ-নিষেধ তিনি হুদুদ বা সীমারেখায় বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশমতো চলে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত সেখানে সে থাকবে চিরকাল এবং এটি মহাসাফল্য। পক্ষান্তরে যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্য হয় এবং তার সীমা অতিক্রম করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে থাকবে চিরদিন। তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা নিসা : ১৩, ১৪)।

নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা লঙ্ঘনের শামিল। আল্লাহর দেওয়া সীমারেখার অন্যতম একটি দিক হলো নারী ও পুরুষ নিজ নিজ স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের নিরিখে তাদের জীবন পরিচালিত করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটিতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। তাদের কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ স্ববিশেষ অবহিত। আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সূরা নূর : ৩০, ৩১)।

আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়াময়।’ (সূরা আহজাব  : ৫৯)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে অন্যের সতর ও আবরণযোগ্য অংশ দেখে এবং যারটি দেখে উভয়ের প্রতি আল্লাহ লানত।’ (মিশকাত)।

মহান আল্লাহ নবীর স্ত্রীদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের বাসস্থানে অবস্থান করবে এবং জাহেলি যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মতো তোমরা তোমাদের প্রদর্শন করবে না, তোমরা যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে এবং জাকাত প্রদান করবে।’ (সূরা আহজাব : ৩৩)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ ভিন্ন মহিলাকে নিয়ে নির্জনে গেলে সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে শয়তান উপস্থিত হয়।’ (মিশকাত)।

আমরা আবার বলছি, নারী-পুরুষের বাধাহীন মেলামেশা মহান আল্লাহর দেওয়া সীমারেখার লঙ্ঘন। এতে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনের ভারসাম্য এবং স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়। এতে তরুণ- তরুণী নির্লজ্জ জীবনযাপনের সুযোগ পায়। তারা মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হয়। মাদকের অর্থ জোগাতে পিতা-মাতার প্রতি নির্যাতন করে। তারা জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এতে পরকীয়ার দুয়ার উন্মুক্ত হয়। এতে সংসার-পরিবারে ভাঙন সৃষ্টি হয়। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় ভর করে মানুষের জঘন্য শত্রু শয়তান তার কুটিলতা ও কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মানুষের ইহ ও পরকাল ধ্বংস করে দেয়।

রসুলুল্লাহ (সা.) জাহান্নাম পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন, একদল নারী-পুরুষ লোহার শিকে ঝুলছে। তাদের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত ও পুঁজ ঝরছে। জিবরাইল (আ.) বলেছেন, ‘এরা জিনাকার’ ব্যভিচারী নারী-পুরুষ।

নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় আশরাফুল মাখলুকাত জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে মদ-নেশায় ও পরকীয়ায় জড়িয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ইহলৌকিক ও পারলৌলিক জীবন ধ্বংস করে দেয়। এমনটি অবশ্যই পরিহারযোগ্য, অবশ্যই বর্জনীয়। আল্লাহ আমাদের সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও তাঁর দেওয়া সীমারেখা মেনে জীবনযাপনের তাওফিক দিন। আমিন।

 

[খুতবাটি লিখেছেন ড. সৈয়দ এমদাদ উদ্দিন : খতিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ]।

সর্বশেষ খবর