মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হজরত হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগের শিক্ষা

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

হজরত হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগের শিক্ষা

পবিত্র আশুরার দিনে ইরাকের ফোরাত নদের তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেছিলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) ও তার অনুসারীরা। কারবালার ঘটনার আগেই এমনকি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়ায় আবির্ভাবের আগে থেকেই আশুরা সব নবী-রসুলের সময়ে স্মরণীয় দিন হিসেবে বিবেচিত। রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পবিত্র দিনে রোজা রাখতেন। অন্যদের রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতেন। কারবালায় হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ১০ মহররম বা আশুরার দিনকে আরও তাত্পর্যমণ্ডিত করেছে। ১০ মহররম মহিমান্বিত দিন হিসেবে পরিচিত মানব সৃষ্টির আগে থেকেই। আল্লাহ এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টিও হয়েছে এই দিনে। আল্লাহর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের দায়ে জান্নাত থেকে এই দিনে হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-কে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। প্রথম মানব-মানবীর তওবা কবুল করা হয় এই দিনে। হজরত ইবরাহিম (আ.) এই দিনে রাজা নমরুদের অগ্নিকাণ্ডে নিক্ষিপ্ত হলে আল্লাহর হুকুমে আগুন তাকে গ্রাস করার বদলে সেখানে জান্নাতের সুশীতল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুনিয়ার প্রথম মানব ও প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত অসংখ্য নবীর সঙ্গে ১০ মহররম বা আশুরার যোগসূত্র রয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতদের কাছে দিনটি কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার কারণে তাত্পর্যপূর্ণ। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-সহ ৭০ জনেরও বেশি আওলাদে রসুল ও তাদের অনুসারী আশুরার দিনে শাহাদাতবরণ করেন। আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে তারা শহীদ হন ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার অবৈধ হুকুমত ঠেকানোর যুদ্ধে। হজরত হাসান (রা.)-এর আমলে সমঝোতা হয় তার পরে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর পরে খিলাফত যাবে হজরত হোসাইন (রা.)-এর কাছে। এ সমঝোতা লঙ্ঘন করে তার মদ্যপ ও লম্পট পুত্র ইয়াজিদ খিলাফতের উত্তরাধিকার হলে প্রতিবাদ ওঠে। হজরত হোসাইন (রা.) জীবন দিয়ে হলেও ইসলামী হুকুমতের পবিত্রতা রক্ষায় ব্রতী হন। আওলাদে রসুল (সা.)-এর প্রতি বিদ্বেষমনোভাবাপন্ন ইয়াজিদ নবী-দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপ্রয়োগে হত্যা করে। আরেক দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-কে কারবালার প্রান্তরে দীর্ঘ এক মাস অবরুদ্ধ করে এক অসম যুদ্ধে পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করা হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াইয়ে রচিত হয় নতুন ইতিহাস। কারবালায় মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের পতাকা তুলে ধরেছিলেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। শাহাদাতবরণ করে তিনি মুসলমানদের শিক্ষা দেন জীবনের চেয়েও আদর্শ অনেক বড়। কারবালায় ৭০ জনেরও বেশি আওলাদে রসুল ও তাদের অনুসারীর জীবনদান মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে মুসলমানদের যুগ যুগ ধরে অনুপ্রাণিত করবে।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর