বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আজ বিশ্ব সমাজের অভিন্ন দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে কোনো কোনো দেশ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তারাও চায় এ সমস্যার সমাধান হোক। সমস্যার সমাধানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধান শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার দশক ধরে রাখাইন রাজ্যের এ ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীটি সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশের বেশি স্বদেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে এ ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ৫ লাখ সদস্য বাংলাদেশে রয়েছে। সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছে আরও ৮ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে শত শত বছর ধরে রাখাইনে বসবাসকারী এ ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর সদস্যদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি আজ খুবই প্রাসঙ্গিক। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সুমতি ছাড়া শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কারণ কথায় কথায় রাখাইনে জাতিগত নিধনের যে ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে, সে অবস্থায় কোনো রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরে যাওয়া ও আত্মহত্যার মধ্যে গুণগত খুব একটা পার্থক্য থাকবে না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, অবাধ চলাচলের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে এখন আগের চেয়ে নমনীয়। তারা কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে দৃশ্যত ইতিবাচক মনোভাবই দেখিয়েছে। তাদের আপত্তি রোহিঙ্গাদের একাংশের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড নিয়ে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে রাখাইনে জঙ্গিবাদের বিপদ এড়ানো যাবে, সে বিষয়টিও সব পক্ষকে ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যৌথ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। সীমান্তের ওপারে জঙ্গিবাদের নিঃশ্বাস শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়, বাংলাদেশের জন্যও বিসংবাদ সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিন্ন বন্ধু চীন, রাশিয়া ও ভারতের সহযোগিতা থাকতে হবে। সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাবও গ্রন্থিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারে।

সর্বশেষ খবর