শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্প্রীতির বাতিঘর

বাংলাদেশের মাহাত্ম্য যেখানে অমলিন

মিয়ানমারের রাখাইনে চলছে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা। নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাদান সভ্য দেশের সরকারের অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত। সে কর্তব্য লঙ্ঘন করে মিয়ানমারের বর্বর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নিধনে উঠেপড়ে লেগেছে। জাতিসংঘ বর্মি সেনাদের সর্বশেষ সহিংস অভিযানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গার প্রাণহানির কথা বললেও এ সংখ্যা লাখে গিয়ে পৌঁছেছে কিনা এ আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার যে সভ্য সমাজের অংশ নয়, এটি বহুলভাবে প্রতিষ্ঠিত। শুধু রোহিঙ্গা নয়, ১৪০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিটিই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। কোনো কোনো জাতিসত্তার বিরুদ্ধে দমন অভিযানে মিগ ও হেলিকপ্টার গানশিপও ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকা দিয়ে যে অস্ত্র কেনা হয়েছে তা ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেই। রাখাইনের রোহিঙ্গা জাতিসত্তা নিধনে মিয়ানমারের নব্য ফ্যাসিবাদীরা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অহিংসা ও মানবতার মূর্তপ্রতীক গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা পদদলিত করে তারা বৌদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিপথগামী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একাংশকে তারা কাজে লাগিয়েছে মহামতি বুদ্ধের মহিমা কলঙ্কিত করার কাজে। মুসলিম বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দেশবাসীর কাছে গণহত্যাকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ রাখাইনের মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়ায় মুসলমান, বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত রেখেছে এই স্পর্শকাতর মুহূর্তেও। শত বছর ধরে এ জনপদে মসজিদ-মাদ্রাসা ও বৌদ্ধ বিহারের সহাবস্থান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতিঘর হিসেবে এ জনপদকে বৈশিষ্ট্য দান করেছে। বাংলাদেশকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। উখিয়া এ ক্ষেত্রে সারা দেশের প্রতিবিম্ব হিসেবে বিরাজ করছে। উখিয়ায় মসজিদ ও মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় ৪০টি বৌদ্ধ বিহার। বৌদ্ধ বিহার ও মন্দিরের সুরক্ষায় মসজিদের মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররাও রাখেন সজাগ ভূমিকা। বৌদ্ধ ও হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মাহাত্ম্য বুকে ধারণ করছে উখিয়ার মানুষ; যা সবার জন্যই অনুকরণীয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর