রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

মহান স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি এ বিশ্ব চরাচর। নীল আকাশ, সবুজ শ্যামল ভূমি, আঁকাবাঁকা নদী, সুউচ্চ পর্বতমালা, মনোরম ঝরনাধারা সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ ধরণী।  যেন নিপুণ কারিগরের এক অপূর্ব কীর্তি। নিখুঁতভাবে সৃজন করেছেন হাজারও মাখলুকাত। আর সর্বোচ্চ সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে তৈরি করেছেন মানব জাতিকে। মহান আল্লাহতায়ালা অতি যত্ন করে তৈরি করলেন সর্বপ্রথম মহামানব হজরত আদম (আ.)-কে। বাসস্থান হিসেবে দান করলেন চির শান্তির নীড় বিলাসবহুল জান্নাত। উন্মুক্ত করে দিলেন জান্নাতের অফুরন্ত সব নেয়ামত। এত কিছুর পরও হজরত আদম (সা.)-এর মাঝে কি যেন অপূর্ণতা? সব কিছু থাকার পরও কি যেন নেই? বুকের গভীরে কিসের যেন হাহাকার?

মহান স্রষ্টা হজরত হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টির মাধ্যমে চিরদিনের জন্য দূরীভূত করলেন সে অপূর্ণতা। দান করলেন আশরাফুল মাখলুকাত মানব জাতির পূর্ণতা। নর ও নারী উভয়ের সমন্বয়ে মানব জাতির পরিচয়। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী নারী জাতি ছিল অবহেলিত।  বিশেষ করে আরবীয় জাহেলিয়াতের যুগে নারী জাতি ছিল চরম নির্যাতিত। তাদের মানবীয় ন্যায্য অধিকার ছিল ভূলুণ্ঠিত। অর্থসম্পদকে পুরুষ নিজেদের মালিকানা স্বত্ব মনে করত। উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে নারীদের ছিল না কোনো নির্ধারিত অংশ। স্বামীর মৃত্যু বা তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর ছিল না দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি। আরবীয় সমাজে নারী জন্মকে চরম অবমাননা, লাঞ্ছনা ও ঘৃণার কারণ মনে করা হতো। নারী জন্মের প্রতি তাদের ঘৃণা এতই প্রবল ছিল যে, নিষ্ঠুর পিতা নির্দয়ভাবে নিজ কন্যাকে জীবন্ত প্রোথিত করতে দ্বিধাবোধ করত না। কিন্তু ইসলামই নারীর সম্মান মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকারের ধারণা মানব মস্তিষ্কে জন্ম দিয়েছে। জাগরিত করেছে হারিয়ে যাওয়া নারীর ন্যায্য অধিকার।

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন— “নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে পুরুষদের ওপর, যেমন পুরুষদের আছে তাদের (নারীদের) ওপর।” (সূরা বাকারাহ, আয়াত-২২৮)

পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : “নেক আমল যেই করবে সে পুরুষ হোক বা নারী যদি সে ইমানদার হয় তাহলে অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর আমি তাদেরকে তাদের সত্কর্মগুলোর বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান দান করব।” (সূরা নাহল, আয়াত-৯৭)

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে নারীদের নামে নামকরণ করে ‘সূরা নিসা’ নামক একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যেখানে নারীদের অধিকারসমূহ বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার বাণী— “তোমরা নারীদের সঙ্গে সত্ভাবে জীবনযাপন কর। অতঃপর তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, তোমরা এরূপ জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহতায়ালা প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।” (সূরা নিসা, আয়াত-১৯)। পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে— “পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ, আর নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ।” (সূরা নিসা, আয়াত-৩২)

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “সেই ব্যক্তি ভাগ্যবান যার প্রথম সন্তান হচ্ছে কন্যা।” রসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন : “যার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে এবং সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে, দীনি শিক্ষা দেয়, সৎপাত্রস্থ করে তাহলে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।” ইসলাম বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর সম্মতি গ্রহণকে করেছে বাধ্যতামূলক। নারীর অমতে জবরদস্তি করে বিয়ে নাজায়েজ ঘোষণা করেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) তার সর্বকনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ে ঠিক করার সময় মেয়ের মতামতকে গ্রহণ করেছেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তার কন্যাসন্তান ফাতেমাকে এত বেশি ভালোবাসতেন যে, কোথাও যাওয়ার আগে এবং ফিরে আসার পরে সর্বপ্রথম ফাতিমা (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। ইসলাম নারীর সচ্ছলতা ও স্বাবলম্বিতা অর্জনের লক্ষ্যে দেনমোহর প্রদান পুরুষের ওপর বাধ্যতামূলক করেছে।  অথচ সংসারের সার্বিক ব্যয় বহন পুরুষেরই দায়িত্ব।

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ।

 

সর্বশেষ খবর