মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিচিত্রিতা

পূর্ব তিমুর

তিমুর একটি বড় দ্বীপ। যার পশ্চিম অংশ ইন্দোনেশিয়ার অধীন, পূর্ব অংশ স্বাধীন দেশ। তিমুরের পূর্ব অংশে প্রথমে পা রাখে পর্তুগিজরা ১৫৫১ সালে। ১৬৫১ সালে ওলন্দাজরা তিমুরের পশ্চিমে কুপাং রাজ্যটি দখল করে নেয়। ১৮৫৯ সালে পর্তুগালের সঙ্গে ওলান্দাজদের একটা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পূর্ব তিমুর পর্তুগালের উপনিবেশ হিসেবে থেকে যায়। পশ্চিম তিমুর হয় ইন্দোনেশিয়া তথা ডাচ ঔপনিবেশিকদের অধীনে। ১৯৪৫ সালে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীন হলে পশ্চিম তিমুর ইন্দোনেশিয়ার অংশ হিসেবেই থেকে যায়।

১৯৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল পর্তুগালের স্বৈরশাসক সালাজারের পতন হয়। পর্তুগিজ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আর উপনিবেশ রাখবে না। পঁচাত্তরের ২৮ নভেম্বর বামঘেঁষা রাজনৈতিক দল ফ্রেতিলিন পূর্ব তিমুরের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর ফলে পূর্ব তিমুরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তিমুরের অধিবাসীদের একাংশ ছিল ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে থাকার পক্ষপাতী। তাদের ইন্ধনে ইন্দোনেশিয়া সৈন্য পাঠিয়ে পূর্ব তিমুর দখল করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া এ আগ্রাসনে ইন্দোনেশিয়াকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেয়। কারণ পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতাকামীরা ‘মার্কসবাদী’ হিসেবে পরিচিতি ছিল। ইন্দোনেশীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে শুরু হয় ফ্রেতিলিনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব তিমুরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নিহত হয়। ১৯৯৬ সালে পূর্ব তিমুরে মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের সৈনিক জোসে রামোস হোর্তা এবং রাজধানী দিলির বিশপ জিমেনেস বেলো যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ইন্দোনেশীয় সরকার ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট পূর্ব তিমুরে গণভোটের আয়োজন করে। নব্বই শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেন। আটাত্তর শতাংশেরও বেশি মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন।

গণভোটের রায়ে প্রতিহিংসায় মেতে ওঠে ইন্দোনেশীয় বাহিনী, তারা পূর্ব তিমুরে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। জাতিসংঘ পূর্ব তিমুরের জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ২০০২ সালের ২০ মে গণপরিষদে নতুন সংবিধান অনুমোদিত হয় এবং ওই দিনটি পূর্ব তিমুরে ‘স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার দিবস’ হিসেবে গণ্য হয়। পূর্ব তিমুরের লোকসংখ্যা ১১ লাখের মতো। আয়তন প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। পূর্ব তিমুরের প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান। মুসলমানের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম।

স্থানীয় ভাষা ‘জেতুন’। একই সঙ্গে পর্তুগিজ ও ইন্দোনেশীয় ভাষার চল আছে। শহরাঞ্চলে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার আছে। পূর্ব তিমুরের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হলেও দারিদ্র্য প্রকট। কারণ সে আয় সাধারণ মানুষের উপকারে আসে না। পূর্বতিমুরে তেল ও গ্যাসক্ষেত্র সবই অস্ট্রেলিয়া কোম্পানিগুলোর দখলে। তারা যে লভাংশ দেয় তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় পূর্ব তিমুর সরকারকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর