রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

মাওলানা মাহফুজুল হক

দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

ইসলামের মৌলিক মানবীয় গুণাবলির মধ্যে সামাজিক বন্ধন এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা অন্যতম। দুর্বল অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সমবেদনার গুণাবলিকে ইসলাম সর্বদা উৎসাহ দেয়। নিঃস্ব, অসহায়, অভাবী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে তাদের দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে, তাদের অসহায়ত্ব লাঘব করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং তাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কষ্ট দূর করতে সর্বাত্মক চেষ্টার জোর নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।  বিশ্বমানবতার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখী ও বিপন্ন মানুষের সহায়তার ক্ষেত্রে সদা প্রস্তুত থাকতেন। কাফেরদের প্রতিও তার দয়া ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত ছিল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, দুঃখী ও বিপন্ন মানুষের কান্না শুনে যদি কেউ এগিয়ে না আসে, তবে একদিন এমন হতে পারে, সে কাঁদবে অথচ তখন কেউ এগিয়ে আসবে না। এ কারণে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মানবসেবার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন— ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উত্পন্ন করেছি, তা থেকে উত্কৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর।’ (বাকারাহ-২৬৭)। হে ইমানদারগণ আমি তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছি, সে দিন আসার আগেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত জালেম। (সূরা বাকারাহ : ২৫৪)। তোমরা কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজে একে অপরের সহযোগিতা কর (মায়েদাহ-২)। যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত যাপন করে, সে মুমিন নয়। (মুসনাদে আহমদ-৩৯০)। দ্বীন হলো কল্যাণকামিতার নাম। আমরা (সাহাবিরা) বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রসুলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য এবং মুসলিম সর্বসাধারণের জন্য। (মুসলিম-২০৫)। তোমরা বন্দীকে মুক্তি করে দাও, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর। (বোখারি-৩০৪৬)। আর যেসব দানশীল ব্যক্তি দুঃখী মানুষকে সমবেদনা জানায়, অকৃপণভাবে তাদের সহযোগিতা করে, তাদের প্রয়োজন পূরণ করে, তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, অনুগ্রহকারীদের প্রতি দয়াময় আল্লাহ অনুগ্রহ করেন।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিজি-১৯২৪)। দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর সন্নিকটে, জান্নাতের কাছাকাছি মানুষের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে। আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী (তিরমিজি ১৯৬১)। কোরআন মাজিদে ও হাদিস শরিফে যতগুলো সত্কর্মের নির্দেশ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুর্গত ও বিপন্ন মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অর্থকড়ি, খাদ্য, আবাসন, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা বহুগুণ সওয়াবের কাজ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে তাদের উপমা হচ্ছে একটি শস্যবীজের মতো যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে আছে একশ শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে বহুগুণে দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় মহাজ্ঞানী’ (সূরা বাকারাহ-২৬১)।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবার উদ্দেশ্যে দেখতে যায় সে যেন জান্নাতের বাগানে অবস্থান করে (মুসলিম-৪২)।

ইসলাম বিত্তবানের ও সামর্থ্যবানের ধনসম্পদে দুর্গত, বিপন্ন ও অভাবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দান-খয়রাত হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে গিয়ে দাতার গ্রহীতার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অহঙ্কার বা বড়াই করার কিছু নেই। কারণ দাতা দান করার মধ্য দিয়ে মানবতার দাবি পূরণ করে এবং সেই সঙ্গে লাভ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। অন্যদিকে দানগ্রহীতা বিপন্নতা থেকে রেহাই পেয়ে মানবতার ছোঁয়ায় ধন্য হয়ে আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হিসেবে গণ্য হতে পারে। দান-খয়রাত করতে হবে খাঁটি নিয়তে ও খালেস অন্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। নাম-যশ হবে এই মানসিকতা নিয়ে দান করলে তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না।  আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য দান করলে তা দানকারীর নিজের জন্য কল্যাণকর হবে।

লেখক : প্রিন্সিপাল, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, সাতমসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর