সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগের মর্যাদা

অনভিপ্রেত বিতর্কের অবসান হোক

দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে যে অনভিপ্রেত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। বিচার বিভাগের মর্যাদার স্বার্থে এ বিতর্কের লাগাম টেনে ধরা সবারই কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে আস্থার সম্পর্কে চিড় ধরে সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত অংশের কিছু মন্তব্য নিয়ে। সংসদ ও রাজপথেও সে মন্তব্যের বিরুদ্ধে আপত্তি উচ্চারিত হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিতর্ক কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে পড়ে। প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি শেষে দেশে এসে চিকিৎসার উদ্দেশে আবারও এক মাসের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার মুহূর্তে গণমাধ্যমের কাছে একটি লিখিত বিবৃতি হস্তান্তর করলে নতুনভাবে শুরু হয় বিতর্ক। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির লিখিত বিবৃতিকে বিভ্রান্তিমূলক বলে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, প্রধান বিচারপতির পদ একটি প্রতিষ্ঠান। এ পদের এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতিপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগগুলো রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে দিলে তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি অভিহিত করেন। অভিযোগ সম্পর্কে তার জবাব চাইলে কোনো সদুত্তর তারা পাননি। এ অবস্থায় তারা প্রধান বিচারপতিকে জানান, অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি বলেন সে ক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন ও এ ব্যাপারে পরদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২ অক্টোবর পাঁচ বিচারপতিকে কিছু না জানিয়ে প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি চেয়ে দরখাস্ত দিলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। একই সঙ্গে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতির পর এ নিয়ে যে অনভিপ্রেত বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তা থেমে যাবে আমরা এমনটিই আশা করতে চাই। সর্বোচ্চ আদালত দেশের মানুষের আশা ভরসার স্থল। এ আদালতের মর্যাদার স্বার্থেই প্রকাশ্য বিতর্ক কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদার স্বার্থেই এ নিয়ে মেঠো রাজনীতিরও অবসান হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক অটুট রাখাও জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর