সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এতিমের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

এতিমের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে

আমাদের সমাজে ধনবান-বিত্তশালী মানুষ যেমন আছে, তেমনি আছে এতিম-অসহায় ও বিধবা। কেউ তাদের পাশে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক, তারাও একভাবে না একভাবে বেঁচে থাকে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকে। ইসলাম সব সময় এতিমদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার তাগিদ দেয়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা জিজ্ঞাসা করছে এতিমের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে? বলে দিন, যে কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য কল্যাণকর তাই অবলম্বন করা ভালো। তোমরা যদি তোমাদের নিজেদের ও তাদের খরচপাতি ও থাকা-খাওয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাখ তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তারা তো তোমাদের ভাই। অনিষ্টকারী ও হিতকারী, উভয়ের অবস্থা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আল্লাহ চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ও পরাক্রমের অধিকারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ও হিকমতের অধিকারী।’ (সূরা বাকারাহ : ২২০)। এতিমের সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অন্য আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, ‘এতিমদের তাদের ধন-সম্পদ বুঝিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সঙ্গে মন্দ সম্পদ বদল কর না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাস কর না। এটা মহাপাপ।’ (সূরা নিসা : ২)। এতিমের সম্পত্তি গ্রাস করলে কঠোর পরিণতির কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা এতিমের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা মূলত আগুন দ্বারাই নিজেদের পেট বোঝাই করে। তারা নিশ্চয়ই জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সূরা নিসা : ১০)। এতিমের প্রতি কঠোর না হওয়ার প্রতি নির্দেশ দিয়ে মহান পরওয়ারদিগার বলেন, ‘এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না। সাহায্য প্রার্থীকে তিরস্কার কর না। আর নিজের রবের নেয়ামত প্রকাশ কর।’ (সূরা আদ-দুহা : ৯-১১)। হাদিসের কিতাবগুলোতেও এতিম-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি জানানোর প্রতি ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করাকে ধ্বংসাত্মক কাজ বলে ঘোষিত হয়েছে। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাক। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, সেগুলো হলো- ১. আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, ২. জাদু করা, ৩. অহেতুক আল্লাহর নিষিদ্ধ জীবজন্তু হত্যা করা, ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের মাল ভক্ষণ করা, ৬. জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং ৭. সতী-সাধ্বী মুসলিম নারীর ওপর ব্যভিচারের মিথ্যা দোষারোপ করা। (বোখারি ও মুসলিম)। এতিমকে যে আশ্রয় দেবে, কাছে টেনে নেবে তার পুরস্কার ঘোষণা করে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, আমি আর এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি (নিজের পরিবারভুক্ত এতিম হোক অথবা অন্য এতিম হোক তার দায়িত্ব গ্রহণ করলে) জান্নাতে এভাবে থাকব। এই বলে প্রিয়নবী (সা.) নিজ হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন। (বোখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ হাতের দুই আঙ্গুল যেমন পাশাপাশি, তেমনি এতিমের অভিভাবক ও প্রিয় রসুল (সা.) একসঙ্গে জান্নাতে থাকবেন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর