মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইসির সঙ্গে সংলাপ বর্জন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইসির সঙ্গে সংলাপ বর্জন

গতকাল ১৬ অক্টোবর ১১টায় ইসির সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নির্ধারিত আলোচনা ছিল। আমরা খোলা মনে ২৭ সদস্যের দল নিয়ে ইসিতে গিয়েছিলাম। ইসির সভায় সিইসিসহ কমিশনারের আন্তরিক ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। যদিও সব দলের প্রতি আলোচনার বিষয় মিডিয়ায় একই রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, তবু গিয়েছিলাম। আমাদের প্রস্তাবসহ ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ২০১৫ সালে টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী উপনির্বাচনে কমিশনের সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হওয়ায় আমরা হাই কোর্টে গেলে হাই কোর্ট আমাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে। সেই হিসেবে রিটার্নিং অফিসার মার্কা বরাদ্দ করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বাদী হয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ‘রকিব’ নির্বাচন কমিশনের বাদী হয়ে আপিল করা যে যুক্তিযুক্ত নৈতিক হয়নি এটা নির্বাচন কমিশন অকপটে স্বীকার করে এবং তাদের সময় মনোনয়ন বৈধ-অবৈধতার প্রশ্নে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তারা কখনো আপিল করবেন না। আমরা এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা আলোচনায় শেষ পর্যন্ত থাকতে পারিনি। আলোচনা বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। তার কারণ দেশের একটি বড় দল, জনগণের কাছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শেষে সিইসির মন্তব্য আমরা মেনে নিতে পারিনি। সিইসি মন্তব্য করেছেন, ‘জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন।’ বহুদলীয় গণতন্ত্র যদি জিয়াউর রহমান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে থাকেন তাহলে কেউ না কেউ সেটাকে ধ্বংস বা হত্যা করেছিলেন। সে ধ্বংসকারী বা হত্যাকারী কে? নিশ্চয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার দল আওয়ামী লীগ। ইসি একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। তিনি যদি বিএনপি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেন তাহলে গণতন্ত্রের হত্যাকারী কে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান? ব্যাপারটা মেনে নিতে পারি না। তাই বয়কট করে চলে আসার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, বক্তব্যটা সিইসির নিজের, না অন্য কমিশনারদের সঙ্গে আলাপ করে দিয়েছেন? না, কমিশনারদের সঙ্গে আলাপ করে দেননি, তিনি নিজে ওই বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি সহস্র কণ্ঠে জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নায়ক বলেন- এটা তারা বলতেই পারেন। কিন্তু সিইসি এটা বলতে পারেন না। বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না, তাই চলে এসেছি। এখন যেমন ভোট ছাড়া গণতন্ত্র, আয়ুব খানের সময় ছিল বুনিয়াদি গণতন্ত্র। কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সময় অবশ্যই গণতন্ত্র ছিল। সময় সময় গণতন্ত্রের রূপ বদল হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র বদল হয়নি।

প্রধান বিচারপতি নিয়ে এমন ভানুমতির খেল পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কেউ কোথাও দেখেছে বলে মনে হয় না। আমরা অনেক নতুন ইতিহাসের স্রষ্টা। প্রধান বিচারপতি নিয়ে এটাও একটা নতুন ইতিহাস। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের অনেক কিছু না পড়েই অনেকে অনেক কথা বলেছেন। এর আগে আমরা সবসময় শঙ্কিত থাকতাম কোর্টের কোনো রায় নিয়ে বলতে গেলে আদালত অবমাননা হবে। এখন দেখছি সরকার এবং আওয়ামী লীগ যা বলে তাই আইন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাবার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। এইচ টি ইমাম যেমন বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভার শপথের আয়োজন করেছিলেন, ঠিক তার উল্টো সিরাজুল হক বঙ্গভবনে এমপিদের সভায় মোশতাকের মুখে মুখে বলেছিলেন, ‘তুমি খুনি। তোমাকে রাষ্ট্রপতি মানি না।’ তারই ছেলে আনিসুল হক। তার কথাবার্তায় আইনের স্পর্শ আশা করেছিলাম। প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে, বাইরে যাওয়া নিয়ে তিনি যা বলছেন তার অনেক কিছুই ঠিক না। ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না’ এই বাজে কথা বলে আইন নষ্ট করার কোনো মানে হয়? একজন প্রধান বিচারপতি, তিনি তো কোনো ব্যক্তি নন, প্রতিষ্ঠান। একজন সাধারণ বিচারপতিকে অপসারণ করতে অথবা তার আসন থেকে সরাতে কত কিছু করতে হয়। পদে বহাল থাকা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি, না ১৩টি অভিযোগ— এও কি সম্ভব? প্রধান বিচারপতির নামে অভিযোগগুলো কে করেছে, কার কাছে করেছে? এরকম একটি স্পর্শকাতর ব্যাপারে হেলাফেলা করা যায় না, উচিতও না। একজন বিচারপতির অনিয়মের প্রতিকারে যদি জুডিশিয়াল কাউন্সিলে যেতে হয় তাহলে প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রেও তো কিছু বিধি-বিধান আছে বা থাকার কথা। আইনমন্ত্রী বললেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তাতে তার প্রধান বিচারপতির চেয়ারে ফিরে আসা খুব কঠিন। তাহলে রাস্তাঘাটে লোকজন যা বলছে তাদের কথাই সত্য? একজন যথার্থ ত্যাগী সংগ্রামী জননেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। রাজনীতিতে যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলা শুরু করেছিলাম তখন থেকেই তার সংগ্রামী জীবনের দেখা পেয়েছি। দোষে গুণে আমরা, তার মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠতমদের একজন। আমি জেগে ঘুমিয়ে সবসময় বঙ্গবন্ধুকে দেখি, তাকে অনুভব করি। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তেমন না হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনা এত বড় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নেতা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়- এর সব কিছুতেই সাজেদা চৌধুরীর অবদান আছে। বেগম মতিয়া চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আরও অনেক কমিউনিস্টের চেয়ে তার অবদান অনেক বেশি। তিনি ছাত্রী থাকতে যেমন বঙ্গবন্ধুর জন্য, দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বীরপ্রতীক তারামন বিবির মতো ট্যাংক-কামান চালিয়েছেন ওসব কথা সাজেদা চৌধুরী কোনো দিন বলেননি। মুক্তিযুদ্ধের জন্য একজন নারী নেত্রীর যতখানি যা করা সম্ভব সাজেদা চৌধুরী তা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে অতিরিক্ত করেছেন। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। বাংলাদেশের সৃষ্টির ইতিহাসে নারীর ভূমিকা যদি তুলে ধরা হয় তাহলে যে ক’জন নারী নেতৃত্বের নাম আসবে তাদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরী অন্যতম প্রধান। আমেনা বেগম, নুরজাহান মোর্শেদ, রাফিয়া আক্তার ডলি, আইভী রহমান— এ ধরনের কিছু মহিলা নেত্রীর মধ্যে সাজেদা চৌধুরী অন্যতম প্রধান। ২-৪ জন তার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ, কিছু কনিষ্ঠ। বীরপ্রতীক তারামন বিবি রাজীবপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ভাত রাঁধতেন, পানি আনতেন, এটা-ওটা কোটা-বাছা করতেন। একদিন নদীতে পানি আনতে গিয়ে কয়েকটি হানাদার লঞ্চ দেখে ছুটে এসে খবর দেন। সে যাত্রায় রাজীবপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প বেঁচে যায়। এ ঘটনা জানিয়ে শাফায়েত জামিল এবং জিয়াউর রহমানের হেড কোয়ার্টারে রিপোর্ট করা হয়েছিল।

রাজীবপুর-রৌমারীর কেউ কোনো খেতাব পাননি, যিনি সুপারিশ করেছিলেন সেই হাবিলদারও না। কোনো কোনো সময় কোনো কোনো জিনিসকে তুলে ধরার জন্য নমুনা হিসেবে কিছু করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা তুলে ধরার জন্য সে সময় তারামনকে ওইভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং কাজটা যথার্থই হয়েছে। সে জন্য পরবর্তীতে তারামনকে ট্যাংক-কামান, মিসাইল চালানোর কোনো প্রয়োজন পড়ে না। আমরা কিছু ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধকে এবং অনেক ভালো জিনিস খারাপ করেছি কোনোটা হলুদ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে, কোনোটা দলীয় সংকীর্ণতার জন্য। কেন যেন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমরা ভালো কিছু করতে ভুলে গেছি। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আজও সংসদের উপনেতা, একজন প্রবীণ নেত্রী। তাকে অপমান-অপদস্থ করা সংসদকেই অপমান-অপদস্থ করা। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং মালেক উকিল জিয়াউর রহমানের কাছে যৌথভাবে দরখাস্ত করে বঙ্গবন্ধুর কবর দেওয়া আওয়ামী লীগ যদি পুনর্জীবিত না করতেন তাহলে আজকের এই অবস্থানে বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা আসতে পারতেন না। হিটলার, মুসেলিনি বলা জনাব মেনন, চামড়া তোলা মতিয়া চৌধুরী, গলা কাটা হাসানুল হক ইনু, ভারতীয় অ্যাম্বাসি আক্রমণ করা গণবাহিনীর জনক-জননী কর্নেল তাহেরের পরিবার-পরিজনের সবাই এমপি, ভিসি ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হতেন না। সে দিন নগরকান্দা নিজের বাড়ি যাওয়ার পথে তার গাড়িতে হামলা সে এক অমার্জনীয় অপরাধ। সেটা দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীদের দিয়ে হোক অথবা সন্ত্রাসী দ্বারা হোক। সাজেদা চৌধুরীর গাড়ি ভাঙা তো দূরের কথা, বিনা অনুমতিতে তার গাড়িতে ফুল ছুড়ে মারাও অপরাধের শামিল। একটা রাষ্ট্রে চলতে গেলে যেমন ধৈর্যের প্রয়োজন, চালাতে গেলেও ধৈর্যের প্রয়োজন, বড় ছোটর পার্থক্য থাকা উচিত। বড়র প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ না থাকলে সমাজ ভেঙে খান খান হয়ে যায়।

আজও আমার মনে আছে, ’৬৯ সালে গণআন্দোলনের সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আমাদের গৌরব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তার বাড়ির পাশে নাগবাড়ী হাইস্কুল মাঠে এক জনসভার আয়োজন করেছিলেন। তখন সদ্য কারামুক্ত লতিফ সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তা বিশ্বজোড়া, তার জ্যোতি প্রায় সূর্যের কাছাকাছি। আমরা জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ির ৫০ গজের মধ্যে তাকে মিটিং করতে দেইনি। আমাদের প্রতিবাদের কারণ ছিল তিনি তখনো সরকারি কর্মচারী, বিচারপতি। পদত্যাগপত্র লিখে দিয়ে সানন্দে সভা করতে পারেন। আমরা অভিনন্দন জানাব। কিন্তু বিচারপতি থেকে তিনি জনসভা করতে পারেন না। সেটা ’৬৯-এর গণআন্দোলনের প্রতি কোনো মতেই সম্মান প্রদর্শন হবে না। আমরা তাকে সভা করতে দেইনি। কিন্তু তাকে অপমান-অপদস্থ করিনি, তার গায়ে আঘাত করিনি, গাড়িতে ঢিল ছুড়িনি।

’৬২-৬৩ সালে জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর বাবা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের স্পিকার। কালিহাতীতে তার এক জনসভা ভেঙে দিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। লাঠিসোঁটা দিয়ে নয়। স্পিকার জনাব আবদুল হামিদ চৌধুরীর জন্য সুন্দর মঞ্চ সাজিয়ে স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল। লতিফ সিদ্দিকী ও ছাত্রলীগ এবং অন্য নেতৃবৃন্দ মাঠের এক কিলোমিটার দূরে মসজিদের পাশে মাইক লাগিয়ে আইউব খানের কুকীর্তির বয়ান করেছিলেন। লতিফ সিদ্দিকীর মিটিংয়ে লোক হয়েছিল ১০-১৫ হাজার। আর মাননীয় স্পিকারের সভায় ছিল কয়েকশ। সেখানেও জনাব আবদুল হামিদ চৌধুরীর মিটিংয়ে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়নি। কিন্তু কেন যেন আজকাল সব কিছু বদলে গেছে। নিজের বাড়িতে যাওয়ার পথে সাজেদা চৌধুরীর মতো একজন প্রবীণ মহিলা নেত্রীকে যদি এভাবে আক্রমণ করা হয় এ তো দেখছি পাকিস্তান হানাদারদের চাইতেও জঘন্য খারাপ। সরকারের কর্মকাণ্ডে বলিহারি যাই। সরকারি ইন্ধন না থাকলে এমন লাগামহীন আক্রমণ কী করে হয়? নিশ্চয়ই দলীয় কোনো রেষারেষি আছে। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃত্বের সুশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। মিলিটারি চেইন অব কমান্ডের চেয়ে আমাদের সময় রাজনৈতিক চেইন অব কমান্ড ছিল অনেক শক্ত। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন এখনকার মতো নেতাদের ঠেলেঠুলে ক্যামেরার সামনে গলা বাড়িয়ে দিতে হুজুর মওলানা ভাসানী সহ্য করতেন না, বঙ্গবন্ধু, আতাউর রহমান খান, মনসুর আলী, সালাম খান এ ধরনের কোনো প্রবীণ নেতা-কর্মীদের উচ্ছৃঙ্খলায় উৎসাহী করতেন না। আজকাল কোনো শৃঙ্খলা নেই। টিভি ক্যামেরা দেখলে কেউ কেউ ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ আশরাফ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ সেলিমের মতো নেতাদের পেছনে ফেলে সবার আগে মুখ দেখায়। এটা কোনো ভালো কাজ নয়। আবার যতক্ষণ রাজনীতিতে বড়-ছোটর পার্থক্য, শ্রদ্ধা-ভক্তি, ভালোবাসা ও সম্মানবোধ ফিরে না আসছে, ততদিন আমরা অধঃপতনের পথেই এগিয়ে যাব।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর গাড়িবহরে আক্রমণের নিন্দার ভাষা নেই। রাজনীতির ইতিহাসে এ চরম নিন্দনীয় অপরাধ হয়ে থাকবে। যে যত যুক্তিই দেন দেশের এরকম একজন নিবেদিত প্রবীণ নেতার প্রতি অশ্রদ্ধা, তার গাড়িতে আক্রমণ আমাদের জাতীয় কৃষ্টি-সভ্যতার ওপর আক্রমণ। এটা পাকিস্তানি মানসিকতা, বাঙালি সভ্যতা নয়।

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের সময় রাস্তাঘাটে শুনতাম, আমেরিকা বন্ধু হলে তার আর শত্রুর প্রয়োজন পড়ে না। এক সময় আমেরিকাই তাকে হত্যা করে, গলা টিপে মারে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ—এটা এখন আর কথার কথা নয়, এটা সত্য কথা। আওয়ামী লীগ তার জন্মদাতা মওলানা ভাসানী, জননেতা শামসুল হক ও অন্যদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে ইতিহাসের পাতায় তার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমেনা বেগমের খবর নেই, যে আওয়ামী লীগকে কবর থেকে তুলেছিলেন সাজেদা চৌধুরী, মালেক উকিল। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আজ বাড়ি যেতে পথে পথে আক্রান্ত হন। কোনো প্রতিকার নেই। এক সময়ে টাঙ্গাইলে ফজলুল করীম মিঠু, আল মুজাহিদী, ফজলুর রহমান খান ফারুক, শাজাহান সিরাজ, লতিফ সিদ্দিকী ছাড়া ভাবা যেত না। এদের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন সব থেকে বেশি নির্যাতন ভোগকারী। সেই তাদের কোনো খবর নেই, ভাবতেও অবাক লাগে। মন্ত্রী থাকতে আমেরিকায় হজ এবং রসুল (সা.)কে নিয়ে এক মন্তব্যের কারণে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত, মন্ত্রিত্ব থেকে পদচ্যুত। বগুড়ার মান্নানের ভাইয়ের বউ, না কে তার লেপটপে ‘এখানে পেশাব করিবেন, না করিলে ১০ টাকা জরিমানা’ ওরকম কিছু সাজিয়ে-গুছিয়ে তাকে কতল করেছে। সে সময় টাঙ্গাইলে দেখেছি খান পরিবারের কয়েকজন কুকুরের শরীরে তার মাথা লাগানো পোস্টার ছেপে এখানে-ওখানে লাগিয়েছে। যে লতিফ সিদ্দিকী না জন্মালে আমরা রাজনীতিতে আসতে পারতাম না, আইউব-মোনয়েমের পতন হতো কিনা বলা যায় না। নিশ্চয় বঙ্গবন্ধুই সব, কিন্তু ছায়া বাদ দিয়ে এই পৃথিবীতে কোনো কায়ার মূল্য নেই। সাজেদা চৌধুরীর ওপর আক্রমণ, তাকে অপমান-অপদস্থ সেই ছায়াকে বাদ দিয়ে কায়া নিয়ে টানাটানির প্রয়াস। এর পরিণতি বড় ভয়ঙ্কর। আমি আবারও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে যথাযথ শাস্তির দাবি করছি।

লেখক : রাজনীতিক

Website: www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর