মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন

ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমার

মিয়ানমার সরকার সে দেশ থেকে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে তারা যে হাস্যকর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তাতে ৫০ বছরেও তাদের স্বদেশে ফেরা সম্পন্ন করা যাবে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আল জাজিরা বলেছে, দৈনিক ১০০ জন রোহিঙ্গার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ থেকে ২৫ বছর লাগার কথা। রোহিঙ্গারা জন্মহারের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু জাতিগোষ্ঠী, বাংলাদেশে যে ৯ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরত না নিলে ২৪-২৫ বছরের মধ্যে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার কথা। দৈনিক ১০০ জনকে ফেরত নিলেও তাতে অন্তত অর্ধশতাব্দী কেটে যাবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে আল জাজিরা বলেছে, যাদের পরিচয় মিয়ানমার সরকারের নথিতে রয়েছে শুধু তাদের ফেরত নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের প্রামাণ্য উদাহরণ বলে আখ্যায়িত করেছে। চতুর্দিকের সমালোচনার মুখে মিয়ানমার বলছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চলতি মাসের শেষ দিকে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে বসবে। যাদের ফিরিয়ে আনা হবে তাদের বাড়িঘর না থাকলে আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হবে। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা সারা বিশ্বের নিন্দা কুড়িয়েছে। বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করতে সে দেশের সরকার একের পর এক অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিরোধিতা না করলেও প্রতিদিন ১০০ জনকে ফেরত নেওয়া এবং পরিচয়পত্র যাদের আছে শুধু তাদের নেওয়ার বক্তব্য ধোঁকাবাজির শামিল। প্রথমত, প্রতিদিন ১০০ করে রোহিঙ্গা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে তাতে ৫০ বছর কেটে যাবে। দ্বিতীয়ত, গণহত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার একটি জাতিগোষ্ঠীর যে সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছেন তারা কতজন পরিচয়পত্র নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন তাও একটি প্রশ্নের বিষয়। এ প্রহসন রোধে স্বল্প সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারকে রাজি করতে বিশ্বসম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর