ঢাকার অদূরে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত পানাম নগরী। নামটি আধুনিক হলেও পানাম একটি প্রাচীননগরী। এর স্থাপত্য বেশ পুরনো। পানাম নগর পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি। অযত্ন-অবহেলায় ক্রমশই জৌলুস হারাচ্ছে এই নগরীর বিভিন্ন স্থাপনা। ফিকে হয়ে যেতে বসেছে এর সৌন্দর্য। পর্যাপ্ত সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে আমাদের নতুন প্রজন্ম বঞ্চিত হবে বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য ও স্মৃতিচিহ্ন থেকে। সোনারগাঁ একটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনপদ। চারু ও কারুশিল্পের ইতিহাসে সোনারগাঁ কিংবদন্তি হয়ে আছে। বাংলার প্রাচীন রাজধানী খ্যাত সোনারগাঁয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শত শত বছর আগের। এ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের শেষ অধ্যায়ের বর্ণাঢ্য ইতিহাস হয়ে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক পানামনগরী। পনেরো শতকে ঈশা খাঁর আমলে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠে এই নগরী। মূলত পানাম ছিল হিন্দু ধনী ব্যবসায়ীদের বসতক্ষেত্র। তারাই গড়ে তোলেন এ নগর। এতে কয়েক শতাব্দীর পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বারোভূঁইয়াদের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। পানামের টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। এতে ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই-লোহার তৈরি ব্রাকেট, ভেন্টিলেটর আর জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ। পানামনগরীর পরিকল্পনাও নিখুঁত।
এই নগরীর অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান হলো বাংলাদেশ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর। এখানে গ্রামবাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনে নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী প্রদর্শনের মাধ্যমে লোকশিল্পের আসল রূপ ফুটে উঠেছে। গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে অযত্ন-অবহেলায় ছড়িয়ে থাকা লোকশিল্পকে রক্ষার্থে এই ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে মোট ১১টি গ্যালারি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে দুর্লভ ঐতিহ্যের নিদর্শন। এ ছাড়াও ফাউন্ডেশন চত্বরে দৃষ্টিনন্দন লেক, দুজন অশ্বারোহীর ভাস্কর্য, গরুর গাড়ির সংগ্রামী ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলী রয়েছে, যা দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য নির্মল বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে।