বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

থামছে না রোহিঙ্গা ঢল

মগমুল্লুকে বিপন্ন মানবতা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গাশূন্য করার মিশন থেকে সে দেশের সরকারকে কিছুতেই বিরত করা যাচ্ছে না। এদিক থেকে গণতন্ত্রের লেভেল আঁটা অং সান সু চি ও মগমুল্লুকের নিয়ন্ত্রক শক্তি বর্মি জেনারেলদের ভূমিকার কোনো পার্থক্য নেই। বিশ্ববাসীর ধিক্কার ও নিন্দা সত্ত্বেও প্রতিদিনই রাখাইনে ঘটছে রোহিঙ্গা উচ্ছেদের ঘটনা। কৌশলগত কারণে গণহত্যার গতি থামলেও সমানে চলছে নির্যাতন। বাড়িঘর পুড়িয়ে, নারীদের সম্ভ্রম কেড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। সরাসরি বলা হচ্ছে, রাখাইন ছেড়ে না পালালে নির্যাতন-নিপীড়ন চলতেই থাকবে। গত সোমবার শুধু উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। ওপারে অপেক্ষা করছে আরও ২০ হাজার। এটিই এ পর্যন্ত আসা সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা ঢল। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বরাবরের মতো এবারও রয়েছে নারী-শিশুর আধিক্য। ৫ থেকে ৭ দিন হেঁটে মিয়ানমারের নাইছাদং ও কুয়াংছিদং, পাদংছা সীমান্তে রবিবার রাতে জড়ো হয় এসব রোহিঙ্গা। ভোর হতেই নদী পার হয়ে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। বিজিবি সদস্যদের বাধার মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করতে না পারলেও সকাল ১০টার দিকে তারা বানের স্রোতের মতো খাল, বিল, জলা, ধানক্ষেত মাড়িয়ে এপারে চলে আসে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা আঞ্জুমানপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, পার্শ্ববর্তী স্কুল-মাদ্রাসায় অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার পর থেকে বিজিবির দুই শতাধিক সদস্য তাদের পুনরায় সীমান্তের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ পাঠিয়ে দেয়। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দিনভর চিৎকার, কান্নাকাটি ও ক্ষুধাতুর রোহিঙ্গাদের আকুতিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থার কারণে বিজিবি রোহিঙ্গাদের নতুন কোনো দলকে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। তবে মানবিক কারণে শেষ পর্যন্ত যে তাদের আশ্রয় দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না এটিও একরকম নিশ্চিত। মিয়ানমারে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ থাকায় দুই প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারত সে দেশের ক্ষমতাদর্পী জেনারেলদের রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে বাদ সাধতে অনীহা দেখাচ্ছে। রাশিয়া মিয়ানমারের কাছে পারমাণবিক চুল্লি ও অস্ত্র বিক্রির সুবিধা পেতে তাদের মদদদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন দুই পরাশক্তি চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষ নেওয়ায় জাতিসংঘ বর্মি দুর্বৃৃত্তদের সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।  রাখাইনে বিপন্ন হয়ে পড়ছে মানবতা। মানব সভ্যতার জন্য যা কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর