বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্যাতিত মুসলিম ও ইসলামের শিক্ষা

মুফতি আবু হোরাইরা রায়পুরী

নির্যাতিত মুসলিম ও ইসলামের শিক্ষা

আজ সারা বিশ্বে মুসলিম জাতি কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত। বিশেষভাবে আরাকানের মুসলমান আজ রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতনে নিষ্পেষিত। তাদের সব থেকে বড় অপরাধ তারা মুসলমান, তারা এক আল্লাহর বিশ্বাসী। আমাদের কাছে যদিও তারা রোহিঙ্গা বলে পরিচিত তথাপি তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো- তারা মুসলিম। রসুল (সা.) বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সুতরাং তাদের শুধু রোহিঙ্গা বা শরণার্থী মনে না করে নিজের ইমানী ভাই মনে করে, নিজের শরীরের এক অবিচ্ছেদ অংশ মনে করে, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আর এটাই হলো ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা।  

নবী করিম (সা.) বলেছেন : মুসলমান পরস্পর ভাই, তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে সাহায্য না করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে না। যে ব্যক্তি নিজ ভাইয়ের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যস্ত থাকে, আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে থাকে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের সমস্যা সমাধান করবে, আল্লাহপাক কেয়ামতের দিন অসংখ্য সংকট থেকে তাকে হেফাজত করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে কেয়ামতের দিন আল্লাহও তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বোখারি)।

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, যে মুসলমান অপর মুসলমানের এমন সংকট মুহূর্তে সাহায্য করল না যখন তার সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি সাহায্য কামনা করলেও আল্লাহতায়ালা তার সাহায্য করবে না। আর যে মুসলমান অপর মুসলমানকে এমন ক্ষেত্রে সাহায্য করে যখন তার মানহানি করা হচ্ছে, আল্লাহতায়ালাও তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন যেখানে সে সাহায্য পাপ্তির প্রত্যাশা রাখে। (আবু দাউদ)।

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, মুসলমানেরা পরস্পর ভাই। একে অন্যের আমানত নষ্ট করবে না, একে অন্যের প্রতি মিথ্যাচার করবে না, অন্যকে অসহায় করে রাখবে না। মুসলমান একে অপরের মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ ও প্রাণ নষ্ট করা হারাম। খোদাভীতির স্থান এটাই। মানুষ মন্দ হওয়ার জন্য মুসলমান ভাইকে অস্থির রাখাই যথেষ্ট। (তিরমিজি)।

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব পেরেশানিসমূহের যে কোনো একটি দূর করবে আল্লাহপাক কেয়ামতের দিন তার বড় পেরেশানি দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের প্রতি ইহকালে সহানুভূতিশীল হবেন, আল্লাহপাকও তার প্রতি ইহকাল ও পরকালে সহানুভূতিশীল হবেন। আল্লাহপাক বান্দার সাহায্যেই থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে থাকে। (তিরমিজি)।

সুতরাং, আমাদের কর্তব্য হলো— (ক) তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকার উপযুক্ত বাসস্থান ও টয়লেট ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। (খ) খাদ্য-পানি ও চিকিৎসা সংকট দূর করার চেষ্টা করা। (গ) মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগ করে দেওয়া। (ঘ) তাদের জান-মাল বিশেষভাবে মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার্থে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থাৎ স্থানীয় ও বহিরাগত সব চরিত্রহীন, নারীলোভী লম্পটদের হাত থেকে মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা। আল্লাহতায়ালা জালেমদের ধ্বংস করে মুসলমানদের সারা বিশ্বে বিজয়ী হওয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : পরিচালক, ইস্পাহানী দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা, আগানগর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর