শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সস্তার তিন ডিম অবস্থা

শাইখ সিরাজ

সস্তার তিন ডিম অবস্থা

ডিম কী? কেউ প্রশ্ন করলে তত্ক্ষণাৎ উত্তর দেওয়া মুশকিল। সে কি পরীক্ষা দিয়ে আসার পর পরীক্ষার ফলাফল, নাকি অনেক প্রাণিকুলের বংশ টিকিয়ে রাখার মাধ্যম? নাকি খাবার টেবিলের সবচেয়ে খাদ্যবান্ধব তরকারিটির নাম ডিম! এক প্রশ্নের নানা উত্তর, কারণ এক ডিমের বহুবিধ গুণ, আচরণ এবং ব্যবহারবিধি।

ডিমের আভিধানিক একটা ব্যাখ্যা এভাবে পাওয়া যায়— বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর স্ত্রী জাতির পাড়া একটি গোলাকার বা ডিম্বাকার জিনিস যা মেমব্রেন স্তর দ্বারা ঘিরে থাকা ডিম্বক এবং বহিরাবরণের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডিম। আমরা ছোটবেলায় যে ছড়া পড়েছি তার সঙ্গে এ ব্যাখ্যা সাংঘর্ষিক। ‘হাট টিমা টিম টিম/তারা মাঠে পাড়ে ডিম/তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট টিমা টিম টিম’। মাথায় শিংওয়ালা কোনো স্ত্রী প্রাণী আদৌ ডিম পেড়েছে কিনা আমার জানা নেই।

আমাদের সবারই ডিমের সঙ্গে পরিচয় মেলে সেই ছোটবেলায়ই। বাবা-মা, শিক্ষক, গুরুজন সবারই ধারণা; ধারণা বলছি কেন, বলা যায় বিশ্বাস যে, ডিম না খেলে বুদ্ধি খোলে না। সে ধারণা এখনো। এখনকার মায়েরা শুরু থেকেই তার শিশুদের ডিম খাওয়াতে সচেতন। বাড়ির এপাশ থেকে ওপাশ অবধি শিশুর পিছে ছুটে বেড়ায় ডিম নিয়ে। আমাদের সময়টায় মায়েরা এতটা করতেন না। করতেন না বললে ভুল হবে, করার সংগতিও ছিল না। আমার বেশ মনে আছে যে এখন যেমন সবার পাতে একটি বা দুটি ডিম তুলে দেওয়া হয়, আমরা ছোট থাকতে তা দেখিনি। প্রায়ই একটি ডিম হয়তো দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে হতো। তখন সে মুহূর্তে দুই ভাইয়েরই তির্যক দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকত মায়ের হাতের দিকে। কোন ভাগটি বড় হলো, কোন ভাগটি ছোট, কোনটিতে কুসুম বেশি গেল, কোনটিতে সাদা অংশ। মায়ের সাবধানী হাতও কখনই দুই ভাইকে সমান আনন্দ দিতে পারত না। এসব নিয়ে রাগও হতো কখনো মায়ের ওপর। আবার কখনো ভাইয়ের ওপর। ছোটবেলায় খুব আগ্রহ করে ডিম খেতে পছন্দ করতাম। কারণ স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, মাছের ডিম— সবই খেতাম। বড় হয়ে যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করলাম বিশেষ করে টেলিভিশনে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলাম তখন থেকে মাছের ডিম খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিলাম। যখন জানতে পারলাম একটি ডিমওয়ালা মাছ খেয়ে ফেলা মানে প্রকারান্তরে হাজার হাজার মাছ খেয়ে ফেলা। বিশেষ করে একটি পরিপক্ব ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ ধরা মানে অন্তত ১০ লাখ ইলিশ নিধন করা। যে কারণে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরতে নিষেধাজ্ঞা।

যাই হোক মজার বিষয়, যে ডিম আমাদের সবার কাছেই এত কাঙ্ক্ষিত সে ডিমই পরীক্ষার সময় হয়ে যেত অবহেলিত। ডিম নিয়ে কুসংস্কার ছিল। পরীক্ষার দিন কোনোভাবেই ডিম খাওয়া যাবে না, ডিম খাওয়া যাবে না পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনটিতে। তাহলে নাকি পরীক্ষায় শূন্য মানে ডিম মিলবে। আগে একটা দৃশ্য খুব চোখে পড়ত, এখন আর দেখা যায় না। দোকানি আর ক্রেতার খিটিমিটি। বাসায় নিয়ে যদি দেখা গেল যে ডিমটি ভালো নয়, পচা; তাহলে ক্রেতা সেই ডিম এমনকি উনুন থেকে ছোট পেয়ালায় তুলে এনে দোকানিকে দেখাত পচা ডিমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য। দোকানি ক্ষুব্ধ চেহারায় ক্রেতাকে সঙ্গে সঙ্গে তার খাঁচি থেকে নতুন একটি ডিম দিয়ে দিতেন। এখন আর এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। ডিম পচার হার কমেছে। পচা আর ভালো ডিম নির্ণয়েরও নানান পন্থা প্রচলিত আছে। ডিমকে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিলে যদি ঘুরন্ত অবস্থায় ডিমটি কাঁপতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি পচে গেছে। আর যদি ডিমটি না কেঁপে সুস্থিরভাবে ঘুরতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে ভালো আছে। আরও একটি পরীক্ষা আছে। পানিতে ভালো ডিম ডুবে যায়, আর পচা ডিম ভেসে থাকে।

বিশ্বের সব থেকে বেশি ডিম উৎপাদনকারী দেশ হলো চীন। সেখানে প্রতি বছর প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডিম উৎপাদন করে। একটি মুরগি বছরে গড়ে ৩০০ ডিম দেয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে এ হার গড়ে ২৭০ থেকে ২৮০।

বয়সে যারা তরুণ, বিশেষ করে হোস্টেলে জীবনযাপন করে, খাদ্য হিসেবে তাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ডিম। বাজারে যাওয়ার ঝামেলা নেই, অস্বস্তি নেই। কি ছেলে, কি মেয়ে হোস্টেলের নিচের দোকান থেকে ডিম এনে সিদ্ধ, ওমলেট বা রান্না, যে কোনো এক রকমে তৈরি করে নিলেই হলো। অল্পেই ঝামেলা শেষ। বৃষ্টিবাদল বা অন্যান্য দুর্যোগেও ডিমই সেরা বন্ধু।

কিন্তু এত যে বন্ধু আমাদের ডিম, সেই ডিম জন্মের শুরুতে পড়ে যায় বিতর্কের মুখে। ডিম আগে না মুরগি আগে। এর উত্তর আজও মেলেনি। কোনো দিন মিলবে বলেও মনে হয় না। মুরগি প্রসঙ্গ যখন এলোই, তখন এ নিয়ে একটা গল্প না বলে পারছি না।

এক মুরগি বিক্রেতার কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মুরগির স্বাস্থ্য তো বেশ। কী খাওয়াও মুরগিগুলোরে? বিক্রেতার জবাব : চাল আর গম খাওয়াই। এ কথা শুনে ব্যক্তিটি বললেন, কী বল! তুমি মুরগিরে এত দামি জিনিস খাওয়াও! তাইলে তো তোমার পয়সার অভাব নেই। ক্লাবের জন্য তুমি তাইলে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিবা। দুই দিন পরে আর এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, এই! তোমার মুরগিগুলোকে তুমি কী খাওয়াও? বিক্রেতা বলল, কিছুই খাওয়াই না। এক-দুই দিন পরপর ভুসি খাওয়াই। ব্যক্তিটি বললেন, জানো আমি কে? আমি এ এলাকার পশুস্বাস্থ্য কর্মকর্তা। মুরগিদের না খাইয়ে রেখে তুমি খুব অন্যায় করেছ, এজন্য তোমাকে জরিমানা দিতে হবে। কদিন পর অন্য এক ব্যক্তি এসে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল। মুরগিওয়ালা বলল, আমি মুরগিগুলোকে কিছু খাইতে দিই না। ওগো হাতে টাকা দিয়ে দিই। ওরা নিজেরাই কিনে খায়। ওই ব্যক্তি তার পরিচয় দিল ইনকাম ট্যাক্স অফিসার হিসেবে। মুরগির জাতেও এখন বিভেদ— দেশি, পাকিস্তানি আর ফার্ম বা ব্রয়লার। তবে বাজারে ডিম পাওয়া যায় দুই জাতের। ফার্মের আর দেশি ডিম। দেশি ডিমের সংখ্যা খুবই কম। তবে মজার বিষয়, বাজারে পাকিস্তানি কোনো ডিম নেই।

অভাবী এ দেশে ছোটবেলায় ডিম খাওয়ার প্রতি যে আকর্ষণ ছিল, বাবা অফিসে যাওয়ার সময় মা নাস্তায় ডিম ভেজে দিতেন যেন ঘরের কর্তার স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। এ চিত্রটি শুধু আমার পরিবারে নয়, সে সময় বাংলার সব পরিবারেই দেখা যেত এমন। বড় হয়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যখন যুক্ত হলাম সেই অনুধাবন থেকে মনে হয়েছে যে আমার অনুষ্ঠানে হাঁস-মুরগি লালন-পালন, মাছের উৎপাদন এগুলোর জোরালো প্রচার খুব জরুরি। নব্বইয়ের দশকেও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর গৃহিণীর কাছে এমন চিন্তাটাই কাজ করত যে তার শিশু সন্তানটিকে এবং স্বামীর পাতে একটি সেদ্ধ ডিম যদি তুলে দেওয়া যায়। 

সেই দুর্বল জায়গাটি ধরেই আমি পোলট্রি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম মাটি ও মানুষ-এ, যেখানে ডিম ও মুরগি দুটোরই চাহিদা সমানে ছিল। তখন কেউ ভাবতে পারেনি মুরগি আর ডিমে আমাদের দেশ এতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে পোলট্রি গড়ে তোলার সুবিধাদি দেখে আমাদের দেশের মানুষ দারুণভাবে মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সেটা একটা বিপ্লব বলা যায়। আমার ধারণা, সে সময় এ বিপ্লবটা না হলে এখন ডিম আর মুরগি অনেকের ক্রয়সীমার বাইরে থাকত।

নব্বইয়ের দশকের ঠিক মাঝামাঝি তখন বিটিভিতে ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে আমি দেখিয়েছিলাম ঘরের মধ্যে খাঁচার ভিতর কী করে পোলট্রি করা যায়। মিসেস জামানের বাসায় তিনি বারান্দায় একটা বিশাল কেজে মাত্র কটি মুরগি দিয়ে পোলট্রি শুরু করেছিলেন। ঘরবাড়ি যাতে নোংরা না হয়, অপরিষ্কার না হয়, সেজন্য ‘কেজ’-এর নিচে ড্রয়ারও দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে মিসেস জামান প্রতিদিন দশটি করে ডিম পেতেন। এ প্রাপ্তিটা সে সময় বাঙালি টিভি দর্শকদের কতটা আলোড়িত করেছিল বলে বোঝাতে পারব না। ডিমকে বিশ্বে একটি উন্নতমানের ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে। সংস্থাটি প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন এবং সর্বোপরি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় প্রথম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ পালন করে। পরবর্তী থেকে প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে প্রথম পালিত হয় ২০১৩ সালে। এ বছর ১৩ অক্টোবর পালিত হলো বিশ্ব ডিম দিবস। বাংলাদেশে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মজার বিষয় হলো, দিবসটি সামনে রেখে আয়োজক প্রতিষ্ঠান রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করে। ঘোষণা দেওয়া হয় মাত্র ৩ টাকায় ডিম বিক্রি করা হবে। যেমন ঘোষণা তেমন কাজ। শুক্রবার ভোর থেকে খামারবাড়িতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সস্তা দরে ডিম কিনতে ভিড় জমাতে থাকে। হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে জনসমাগম খামারবাড়ি থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। হট্টগোল। হৈচৈ। তাণ্ডব। হাতে গোনা কজন মাত্র ডিম পেলেও পেতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা খুবই কম। মঞ্চ ভেঙে হৈ-হুল্লোড়ে অনেক ডিম ভেঙে গেছে।

এমন যে সাধারণ ডিম, তাকেও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা গেল না। ডিমও জড়িয়ে পড়ল বিতর্কে। অবশ্য আমাদের এখানে প্রশংসিত হতেও সময় লাগে না। সময় লাগে না বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে। টস জিতে ব্যাটিং না ফিল্ডিং নিলাম তা নিয়েও জড়িয়ে পড়তে হয় বিতর্কে।

ডিম বলে কথা। একে তো আর এমনিতে ছাড়া যায় না। ডিম না পেয়ে ব্যর্থ যারা, তারা তো আর এমনিতে ফিরতে পারেন না। রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তাপমুক্ত বলে কোনো স্লোগান কানে আসে না। ডিম না পাওয়ার বেদনায় আশাহত ক্রেতাদের নানা ধরনের স্লোগানে মুখরিত হলো খামারবাড়ি প্রাঙ্গণ— ডিম চাই, ডিম চাই। ডিম চাই, বিচার চাই। ডিম চোরের বিচার চাই। ভুয়া ভুয়া। এমনি আরও নানান স্লোগান। যাক, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আন্দোলনের একটা বিষয় তো পাওয়া গেল। অন্যদিকে শুক্রবার দিনটি সংবাদপ্রাপ্তির দিক থেকে খরার দিন। সংবাদমাধ্যমগুলো ভালো একটা ইস্যু পেল। ডিম নিয়ে ডামাডোল, ডিম নিয়ে তুলকালাম, ডিম নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড। এমনই আরও নানান শিরোনাম। ব্যর্থ ক্রেতাদের অনেকের সাক্ষাৎকার শুনে মনে হলো, ১৩ অক্টোবর ডিম কেনার ব্যাপারে তারা এক ধরনের ব্রত গ্রহণ করেছিল।

পাশাপাশি আয়োজকদের বক্তব্যও বেশ মজাদার। তারা বলেছেন, ডিম সুষ্ঠুভাবে বিক্রি করতে না পারলেও সাধারণ মানুষের মাঝে ডিম নিয়ে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। তারা বলছেন, অন্যান্য বছর এ দিবসটি পালনের জন্য র‍্যালি বা আলোচনা- সেমিনারের আয়োজন করেন। সেসব অনুষ্ঠানে অনেক অনুরোধের পর তাদেরই আত্মীয়স্বজন উপস্থিত থাকেন। তাতে সাকল্যে শ দুয়েক লোকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০০৮-০৯ সালে পোলট্রি ফার্মগুলো বার্ডফ্লুর কারণে ধ্বংসের মুখে পড়ে। বাংলাদেশও এর থেকে নিস্তার পায়নি। সে সময়টায় দাফতরিক কাজে আমি মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। ঢাকা ফেরার পথে প্লেনে বসে সে দেশের দৈনিক পত্রিকার একটি সংবাদ দেখে কিছুটা শিহরিত হয়েছিলাম। সংবাদের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছিল যে ইন্দোনেশিয়ার একটি খাবারের দোকানে ফ্রাইড চিকেনের ওপর ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। বলাই বাহুল্য, ইন্দোনেশিয়ায়ও তখন বার্ডফ্লুর প্রকোপ প্রকট আকার ধারণ করেছিল। আর একটা বিষয় তখন আমার মধ্যে কাজ করছিল যে কম দামে বেশি পাওয়া বা একেবারে ফ্রি পাওয়ার ব্যাপারে বাঙালি একাই দুর্বল নয়, বরং সবাই এগিয়ে। ডিম নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের গল্পটি সবারই জানা। সেই যে এক ডিমওয়ালা তার ডিমের ঝুড়ি পায়ের কাছে রেখে স্বপ্ন দেখছিল। স্বপ্নে সে দেখছিল যে ডিম বিক্রি করে একসময় সে মহাজন হবে, শহরে ব্যবসা করবে, জমি কিনবে, বাড়ি করবে। বাড়িতে অনেক কাজের লোক থাকবে। একদিন মেজাজ খারাপ হলে কাজের লোককে জোরে লাথি মারবে। ঘুমের মধ্যে গরিব ডিমওয়ালার লাথি গিয়ে পড়ল ডিমের ঝুড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে সব ডিম মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল। ডিমওয়ালার স্বপ্ন ভাঙল। ডিম কিনতে আসা ব্যর্থ ক্রেতাদেরও একরকম স্বপ্নভঙ্গ হলো। বিষয়টা আংশিক কষ্টকর হলেও, ব্যর্থ ক্রেতাদের কাণ্ডকারখানায় বিস্মিত না হয়ে পারিনি। ডিম কিনতে আসা সবাই বিষয়টাকে স্পোর্টিংলি নিতে পারতেন।

ডিম নিয়ে আর একটি ছোট গল্প দিয়ে এ লেখা শেষ করছি। এক মুরগি দোকানে গেছে ডিম কিনতে। দোকানদার মুরগিকে জিজ্ঞাসা করল, কীরে তুই তো নিজেই ডিম পাড়িস! তুই কেন ডিম কিনতে এসেছিস? মুরগি জানাল, মোরগ আমাকে ডিম পাড়তে নিষেধ করেছে। বলল, কয় টাকার জন্য ফিগার নষ্ট করবি কেন? ডিম কিন্যাই খাই। আমাদের এমন কাণ্ড দেখে সত্যিই যদি মোরগ আর মুরগি এভাবে সচেতন হয়ে যায় তাহলে আমরা তো বিপদেই পড়ব।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর