রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

কামরূপ অভিযান

হুসাইন শাহ্ বঙ্গদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিজয়ী বীর হিসেবে পরিচিত। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে হুসাইন শাহ পূর্ববর্তী শাসনামলে বঙ্গদেশের যেসব স্থান লুপ্ত হয়েছিল সেগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য মনোযাগী হলেন। তিনি কোচবিহারের কামরূপ বা কামতাপুরে অভিযান পাঠিয়ে এটি অধিকার করলেন। কামতাপুরের রাজা বন্দী হয়ে গৌড়ে প্রেরিত হলেন। হুসাইন শাহের পুত্র কামতাপুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেন।

কামতাপুর বা কামরূপ বিজয়ের পর হুসাইন শাহ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অভিযান করলেন। অহোম নরপতি পার্বত্যাঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। সমভূমি অঞ্চল মুসলিম বাহিনী কর্তৃক অধিকৃত হলো। বর্ষা এলে পার্বত্যাঞ্চল থেকে অহোম নরপতি বের হয়ে এলেন এবং মুসলিম সৈন্যদলকে আক্রমণ করে বিপর্যস্ত করলেন। বাংলার সুলতানের ব্যর্থতার সুযোগে উড়িষ্যাধিপতি বাংলার অভ্যন্তরে রাজ্যসীমা বিস্তার করেন। ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সৈন্যবাহিনী ইসমাঈল গাজীর নেতৃত্বে উড়িষ্যা আক্রমণ করে। উড়িষ্যাধিপতি প্রতাপরুদ্র তখন উপস্থিত ছিলেন না। পরে তিনি ইসমাঈল গাজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান করেন এবং গড়মন্দারণে তাকে অবরোধ করেন। কিন্তু কর্মচারী বিদ্যাধরের বিশ্বাসঘাতকতায় প্রতাপরুদ্র অবরোধ তুলে নিলেন। উড়িষ্যা অভিযানের ফলাফল সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। কামতাপুর ও উড়িষ্যা বিজয়ের পর হুসাইন শাহ ত্রিপুরা রাজ্য জয়ের চেষ্টা করেন।

এ উদ্দেশ্যে তিনি পর পর চারটি অভিযান প্রেরণ করেন। কিন্তু মহারাজ ধন্যমাণিক্য ও সেনাপতি চরচাগের জন্য হুসাইন শাহের চেষ্টা সম্পূর্ণ সফল না হলেও ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশ তার রাজ্যভুক্ত হয়।  এর পর হুসাইন শাহের সৈন্যবাহিনী গোমতী নদী পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং চট্টগ্রাম অধিকার করে। আরাকান রাজ্যও এ সময়ে বঙ্গের সীমান্ত স্পর্শ করে।

আরাকান বিজয়ের জন্য সুলতানের পুত্র নসরৎ খানের অধীনে সৈন্য প্রেরণ করা হয়। আরাকান বিজিত হলো এবং হুসাইন শাহের সেনাপতি পরাগল খান এর শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেন। তার সামরিক অভিযান সম্বন্ধে ড. এ এম হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আসাম অভিযান ব্যতীত হুসাইন শাহের সব সামরিক পরিকল্পনা সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল।’

জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর