শিরোনাম
সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর সমস্ত জীবন ও কর্মকাণ্ডই অমূল্য সম্পদ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

বঙ্গবন্ধুর সমস্ত জীবন ও কর্মকাণ্ডই অমূল্য সম্পদ

গত ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেটি সংস্থাটির মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ এবং সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এটি বিশাল অর্জন ও গৌরবের কথা। এখন থেকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এই ভাষণ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়বে। নতুন নতুন গবেষণা হবে। শোষিত নির্যাতিত জাতিকে পথ দেখাবে, মুক্তির কৌশল বলে দেবে। আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর সমস্ত জীবন ও কর্মকাণ্ড যদি বিশ্ব অঙ্গনে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সঠিকভাবে তুলে ধরা যায় তাহলে বিশ্বের গ্রেটেস্ট লিডারদের তালিকায় একদিন বঙ্গবন্ধুর নাম আরও বেশি উচ্চকিত হবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে ক্ষেত্রে যথার্থ উদ্যোগ দরকার। এ বিষয়ে আজকের এই লেখার শেষাংশে সামান্য আলোচনা করার চেষ্টা করব। তার আগে এই ভাষণ আমাদের কী দিয়েছে তার ওপর একটু আলোকপাত করি। একাত্তরের যুদ্ধক্ষেত্রে ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য শক্তির সঞ্জীবনী টনিক হিসেবে কাজ করেছে। অস্ত্র, গোলাবারুদ, কামান, বন্দুক থেকে এই ভাষণের শক্তি ছিল বহুগুণ বেশি। চেতনা মানুষকে কীভাবে উজ্জীবিত ও শক্তিশালী করতে পারে তার অনন্য উদাহরণ এ ভাষণটি।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছোট ছোট গেরিলা দলগুলো, যারা স্বতন্ত্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করেছে, তাদের সেই কঠিন কষ্টের সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বজ্র কণ্ঠের আওয়াজ যে কত বড় টনিক ছিল তা এখন ভাবনায় এলে স্মৃতিকাতরতায় পেয়ে বসে। তখন যে তিনটি বিষয় যুদ্ধের মাঠে আমাদের উজ্জীবিত ও জাগ্রত করত এবং অসীম শক্তি জোগাত তার মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অন্যতম। অন্য দুটির একটি হলো জয় বাংলা স্লোগান এবং অপরটি আমাদের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। চেতনার শক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি, তার উপরে নেই। বিশ্বখ্যাত সেনাপতি সম্রাট নেপোলিয়ান আটলান্টিক সাগরের মাঝখানে অবস্থিত ছোট দ্বীপ সেন্ট হেলেনার নির্বাসন জীবনের শেষপ্রান্তের উপলব্ধি থেকে নাবালক পুত্রের জন্য লিখেছিলেন, ‘There are only two powers in the world. The Spirit and the sword. In the long run the sword will always be conquered by the spirit’ (জওহরলাল নেহেরু গ্লিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি, পৃ. ৩৯১)। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের অন্যরকম বিশেষত্ব তো আছেই, তার সঙ্গে ভাষণের একেকটি জায়গায় এসে সেই নির্দিষ্ট কথার গুরুত্ব বোঝাতে বঙ্গবন্ধুর উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি ও কণ্ঠস্বরের অভাবনীয় সংমিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া ছন্দের তালে উত্তাল তরঙ্গের মতো সাড়ে সাত কোটি বাঙালি সেদিন মুক্তিপাগল বাঙালিতে পরিণত হয়েছিল। বাঙালি আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। চেতনার শক্তিকে অবলম্বন করে যুদ্ধে নেমেছে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। একবারের জন্যও পিছপা হয়নি। বঙ্গবন্ধু যখন ভাষণটি দেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫১ বছর। এর আগে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় তেমনভাবে ছিলেন না। একবার কয়েক মাস প্রাদেশিক মন্ত্রী ছিলেন মাত্র। কিন্তু ৭ মার্চে দেখা গেল একজন দূরদৃষ্টিপূর্ণ রাষ্ট্রনায়ক ও অভিজ্ঞ সমরনায়কের মতো ভাষণের মধ্যে এক নিঃশ্বাসে তিনি গেরিলা যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি বলে দিলেন। বললেন, এক. প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। দুই. জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা-যা আছে সব কিছু তোমরা বন্ধ করে দিবে। তিন. আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। একটি অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে, মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে, নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য যে পথ দেখিয়ে গেছেন এবং নিজের জীবন ও কর্মের ভিতর দিয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন তা পৃথিবীতে বিরল। একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মী থেকে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ সোপান। কিন্তু চরিতকাল স্বল্প। এই স্বল্প সময়ে রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলি ও তার সব বৈশিষ্ট্যের পূর্ণ পরস্ফুিটন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের মধ্যে। অকুতোভয় সাহস, দূরদৃষ্টি দৃষ্টিভঙ্গি, সীমাহীন ত্যাগ, সব প্রকার বস্তুগত প্রলোভনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান, মানুষের প্রতি নিখাঁদ ভালোবাসা, মানবতার প্রতীক ক্ষমা করার উদারতা, প্রতিহিংসা প্রতিশোধমুক্ত মন, সব কিছুই তিনি আত্মস্থ করেছিলেন এই স্বল্প জীবনের পরিসরে। আর এর মূল উৎস ছিল বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ। বঙ্গবন্ধুর কথা ও সুর আর বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কথা ও সুর ছিল এক ও অভিন্ন। যে কারণে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো বাংলাদেশের মানুষ তার পেছনে ছুটেছে, মৃত্যুকে পরোয়া করেনি। তাই শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। একটি দেশ, একটি জাতি ও তার সঙ্গে মিশে থাকা সব চেতনা, সেই চেতনার উৎসমূল এবং আদর্শের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ব দরবারে দাঁড়িয়ে তিনি নির্দ্বিধায় বলেছেন, বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত-শোষক ও শোষিত, ‘আমি শোষিতের পক্ষে।’ বিশ্বের শোষিত মানুষকে তিনি শিখিয়েছেন, মরতে শিখলে সে জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। ৭ মার্চের ভাষণের এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু বলেছেন, রক্ত যখন দিয়েছি, আরও দিব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।

সাড়ে সাত কোটি মানুষকে রক্ত দেওয়ার হুকুম দিয়ে তিনি কিন্তু আত্মগোপন বা পালিয়ে যাননি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমাকে না পেলে পাকিস্তানি সেনারা সারা ঢাকায় অগণিত মানুষকে হত্যা করত। তাই সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য তিনি প্রস্তুত হয়েছিলেন। কী নেতা, আর কী তার সাহস। ভাবা যায়! একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল গুলি চালাতে চালাতে বাড়ির ভিতরে ঢোকার সময় বঙ্গবন্ধু স্থিরচিত্তে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। নিজের রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কী রকম পরিস্থিতি, কল্পনা করে একবার ভেবে দেখুন। এমন উদাহরণ বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। এই একটি ঘটনাই হতে পারে বিশাল গবেষণার বিষয়। এই নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর হওয়ার জন্য ত্যাগের উদাহরণ যদি সর্বোত্কৃষ্ট উদাহরণ হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, তিনি বাঙালির মুক্তির প্রশ্নে ছিলেন আমৃত্যু আপসহীন। পুরো সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধু একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু একটিবারের জন্যও অস্থির হননি, কারও করুণা প্রত্যাশা করেননি। বরং দৃঢ়চিত্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। ষাট দশকের শেষ দিকে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে হত্যা করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মাথানত করেননি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে নামেমাত্র বিচারের মহড়া করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। কবর খুঁড়ে সেই কবর বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয়। কিন্তু স্থির ও দৃঢ়চিত্তে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ওকালতনামা ফিরিয়ে দেন, স্বাক্ষর করেন না। বঙ্গবন্ধুর জীবনের আকাশসম গুণাবলি এবং পথচলার এত বিশাল নির্দেশনা, এগুলো বংলাদেশের জন্য তো বটেই, সারা বিশ্বের মানুষের কল্যাণে যদি উন্মুক্ত করা যায়, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সেটাই হবে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সঠিক ও উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন। তাতে বঙ্গবন্ধু হবেন বিশ্বজনীন। বিশ্ব অঙ্গনে মর্যাদা বাড়বে বাংলাদেশের। তাই বাংলাদেশকে এ কাজটি করতে হবে।

সবারই মনে রাখা দরকার বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। যুগে যুগে মহান নেতা ও মনীষীদের রেখে যাওয়া আলোর পথ ধরেই বিশ্ব সভ্যতা আজ এ পর্যন্ত এসেছে। বাংলাদেশের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু আমাদের রাষ্ট্রনায়ক ও জাতির পিতা। বিশ্বের অনেক বড় ও মহান নেতাদের জীবন ও কর্মের পথ বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্বখ্যাত থিমপার্ক ও থিঙ্কট্যাঙ্ক। সেখানে ওই রাষ্ট্রনায়কের প্রতিটি কর্ম ও চিন্তার ওপর গবেষণা করা হয়। গবেষণালব্ধ ফলের সঙ্গে বর্তমান সময়ের সংযোগ ঘটিয়ে মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথকে করা হয় গতিময় ও সমৃদ্ধশালী। নতুন প্রজন্মের মনন ও মেধার সঙ্গে মহান নেতার চিন্তা ও চেতনার সংযোগ সৃষ্টি করা হয় থিমপার্ক ও থিঙ্কট্যাঙ্কের মাধ্যমে। মানব সভ্যতাকে চলার পথ দেখায়। সভ্যতার অগ্রায়নের পথে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও কর্ম সারা বিশ্বের মানুষের জন্য বিশাল সম্পদ ও পাথেয়। এই সম্পদের মালিক বাংলাদেশ। এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও চর্চায় বিশ্বমানবতা যদি উপকৃত হয়, তাহলে সেটি হবে আমাদের জন্য বিরাট গৌরবের বিষয়। সুপ্ত সম্পদের কোনো মূল্য নেই। আবার কালের বিবর্তনে এক সময়ে সেটি হারিয়েও যেতে পারে। তাই এখনই উপযুক্ত সময়। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও কর্মকে কেন্দ্র করে বিশ্বমানের একটা থিঙ্কট্যাঙ্ক ও থিমপার্ক তৈরি করা প্রয়োজন। অনেক বড় বড় থিঙ্কট্যাঙ্কের উদাহরণ বিশ্বে রয়েছে।

ওয়াশিংটনে রয়েছে আমেরিকার ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের জীবন ও কর্মকে কেন্দ্র করে উড্রো উইলসন সেন্টার। বিশাল আকার ও পরিধির, বিশ্বের অন্যতম নামকরা থিঙ্কট্যাঙ্কটি ঘুরে দেখার সৌভাগ্য আমার একবার হয়েছিল ২০০১ সালে। এ ছাড়া বোস্টনে আছে কেনেডি সেন্টার, সেটিও তখন আমি দেখেছিলাম। উড্রো উইলসন সেন্টারে মূলত গবেষণামূলক কাজ হয়। অন্তর্জাতিক সেমিনার, ওয়ার্কশপ, আলোচনা, রাউন্ড টেবিল, বিশ্বের বিভিন্ন কর্নারের গবেষকদের গবেষণাপত্রের উপস্থাপন ইত্যাদি কাজ সারা বছরই লেগে আছে। বিশ্বের নামিদামি লেখক ও বিশ্লেষকদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে জার্নাল। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয় উড্রো উইলসন সেন্টার। এখানে রয়েছে সুবিশাল লাইব্রেরি, জাদুঘর, অডিও— ভিজুয়াল সেন্টার, বিভিন্ন আকারের বেশ কয়েকটি হলঘর, স্যুভেনিয়ার শপ এবং ক্যাফেটারিয়া। ওই রকম আয়তনের না হলেও আমাদের অঞ্চলেও এরকম প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আছে সুকর্ন সেন্টার, ভারতের মুম্বাইতে আছে নেহরু সেন্টার। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কেনেডি ও উইলসন সেন্টারের যে পরিধি, তার একটি সময় উপযোগী মিশ্রণে, অর্থাৎ থিমপার্ক ও থিঙ্কট্যাঙ্ক দুটোই রেখে তৈরি করা যায় একটি বঙ্গবন্ধু সেন্টার। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর মতো রাষ্ট্রনায়কের নামে একটি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড বা পুরস্কারের প্রচলন করাও দরকার। তার জন্যও একটা উপযুক্ত গবেষণা সেন্টারের দরকার। সেটা করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সমস্ত জীবন ও কর্মকাণ্ডের সঠিক মূল্যায়ন হবে এবং তাতে বিশ্বব্যাপী আগামী দিনের অনাগত প্রজন্ম উপকৃত হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর