মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে নাগরিক সমাবেশ ছিল ১৮ নভেম্বর। এর মধ্যে আবার আমার রাখী বোন শর্মিষ্ঠা বক্শী মিলু ১৮ বছর পর ঢাকায় এসেছে। দিল্লির যন্ত্রণাকর দিনগুলোতে ওরা বারোখাম্বা রোডের মডার্ন স্কুলে পড়ত। সেখানে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা ও আমার ভাইস্তা-ভাস্তি শঙ্খু-গার্গী এবং মিলুও পড়ত। শঙ্খু-গার্গী ডাকত কাকু বলে। মিলু বাপ-মায়ের একমাত্র মেয়ে। ওর দাদা নেই, ভাই নেই। তাই আমায় দাদা বলে ডাকত। হিন্দু বোনেরা ভাইফোঁটা দেয়, রাখী বাঁধে— এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরাট ব্যাপার। মিলু সেই ’৭৮ সাল থেকে ভাইফোঁটা দেয়। সেই শিলিগুড়ি থেকে দিল্লি গিয়ে ভাইফোঁটা নিয়েছি। ভারতে যত দিন ছিলাম কোনো বছর বাদ পড়েনি। দেশে ফেরার পরও কয়েকবার গেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলে তার এক পাকিস্তানি রাখী বোন কমর মহসিনের ভাইফোঁটা নিয়ে মিডিয়ায় অনেক কথা হয়। ১৯ বছর যাবৎ নরেন্দ্র মোদিকে ভাইফোঁটা দেয় কমর মহসিন আর আমাকে মিলু ভাইফোঁটা দেয় ৩৯ বছর। প্রধানমন্ত্রীর মুসলিম বোন হিন্দু ভাইকে ফোঁটা দেয় আর আমার হিন্দু বোন মুসলমান ভাইকে ভাইফোঁটা দেয়— এই যা পার্থক্য। সেই রাখী বোন মিলু আর তার মা অধ্যক্ষ অরুণা চক্রবর্তী এসেছে বাংলাদেশ-ভারত কী এক কালচারাল প্রোগ্রামে। মিলুর বাপ-দাদার বাড়ি নড়িয়ার ডিঙ্গামানিক। কোনো দিন বাপ-দাদার বাড়ি দেখেনি। অনেকবার বলেছি, চল, তোমাকে বাবার ভিটে দেখিয়ে আনি। তাদের বাড়িতেই রাম-সাধুর আশ্রম। গতকাল সেখানে গিয়েছিলাম। বাপের ভিটা দেখে অভাবনীয় খুশি হয়েছে। ডিঙ্গামানিক আশ্রম নিয়ে লিখলে এক পর্বেও হবে না। কিন্তু ১৮ তারিখের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সমাবেশ নিয়ে কিছু না লিখলে নিজের কাছেই অপরাধী হব। তাই ডিঙ্গামানিক নিয়ে পরবর্তীতে লিখব।

প্রায় বছরখানেক পর ১৫ নভেম্বর সখীপুরে আমাদের আদরের ধন কুশিমণির বাড়িতে রাত কাটিয়েছি। ওর যখন পাঁচ-ছয় বছর বয়স তখন একবার সখীপুর গিয়ে খোলামেলা আঙিনায় বাচ্চাদের সঙ্গে ছোটাছুটি করতে করতে বার বার বলছিল, ‘এই বাড়ি আমার পছন্দ। এটা আমার খুব পছন্দ।’ অনেকবার ওর মুখের আলতো আলতো ‘পছন্দ পছন্দ’ শুনে শুনে দীপ-কুঁড়ির মা বলেছিল, ‘বাড়িটা যখন ওর এত পছন্দ। এটা ওকে দিয়ে দাও।’ পরদিনই বাড়িটা ওকে লিখে দেওয়া হয়। ১৫ নভেম্বর ’৯৯ ছিল সখীপুর উপনির্বাচনে জঘন্য ভোট ডাকাতির দিন। আওয়ামী লীগ সরকার কাজটা না করলেই ভালো করত। নিম্নচাপের কারণে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল। যদিও আমার জীবনে ঝড়-তুফানের কারণে এ পর্যন্ত কোনো সভা-সমাবেশ বানচাল বা নষ্ট হয়নি। আল্লাহর কি কুদরত, আমি যখন কথা বলি তখন কোনো বৃষ্টি ছিল না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও অসংখ্য লোক হয়েছিল। সখীপুরের মানুষ যে গামছাকে ভালোবাসে, আমাকে ভালোবাসে এটা ছিল তারই প্রমাণ। অনেক কথার মাঝে বলেছিলাম, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেভাবে চলছে, এভাবে চললে কোনোক্রমেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না। পরদিন ১৬ নভেম্বর আজিমপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে সেই একই কথা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন। আজিমপুর ঢাকার মধ্যে সব থেকে বড় গোরস্থান। মুসলমান হিসেবে পরপারে যাওয়ার গেট। সেখানে কি এক পার্ল হারবার আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি পার্ল হারবার জাপানিরা ধ্বংস করে দিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে ওর আগে ও পরে অমন শক্তিশালী নৌঘাঁটি আর কেউ কখনো ওভাবে ধ্বংস বা গুঁড়িয়ে দিতে পারেনি। জাপানিরা সেদিন তা পেরেছিল। জাপানিরা ভালো করেই জানত অমন বিপুল বিশাল মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে তারা কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু পড়ে পড়ে মার খাওয়ার চেয়ে ছোট ছোট জাপানিরাও যে পারে তা দেখানোর জন্য জাতীয় মর্যাদার দিকে তাকিয়ে তারা আমেরিকার শ্রেষ্ঠ নৌঘাঁটি পার্ল হারবার গুঁড়িয়ে তছনছ করে দিয়েছিল। আজিমপুরে সরকারি দলের এই ঘটনা কীসের ইঙ্গিত বলতে পারি না। তবে কাজটা ভালো নয়। রাজনৈতিক দলে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে, কিন্তু তা এত দূর যাওয়ার কথা নয়।

১৬ তারিখ সকালে সখীপুর থেকে টাঙ্গাইলের পথে ছিলাম। বহুদিন পর বহেড়াতৈল কালিহাতী হয়ে টাঙ্গাইল ফিরেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহেড়াতৈল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছে। আমরা সেখানে শপথ নিয়েছিলাম, ‘জীবন দেব তবু স্বাধীনতা দেব না, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ আমরা আমাদের কথা রেখেছি। বহেড়াতৈল পার হতে হতে হঠাৎ ফোন বেজেছিল। প্রথমবার বুঝতে পারিনি, আর আমার ফোন খুব একটা বাজে না, আমিও বাজাই না। তাও ছিল ১৭ তারিখ। ১৬ তারিখ নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলাম। জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলায় সংলাপ বর্জন করেছিলাম। পরদিন ১৭ অক্টোবর সকালে ফোন করেছিলেন আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক আমার প্রিয় ওবায়দুল কাদের। তিনি সব সময় ফোন করেই ‘কাদের ভাই’ বলে আগ্রহের সঙ্গে কথা বলেন। এটা আমি আজীবন দেখেছি। নামের নাম জমে টানে। যত কিছুই হোক নামের মিলে সত্যিই একটা স্বভাবের মিল থাকে। দ্বিতীয়বার রিং এলে তাকিয়ে দেখি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। হ্যালো বলতেই, বললেন, ‘কাদের ভাই! ১৮ তারিখ নাগরিক কমিটির মিটিং। সভনেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি। কার্ড পাঠাব। অবশ্যই আসবেন। আপনার যা মনে হবে দুই কলম লিখবেন।’ ১৮ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক কমিটির সভার বিন্দুবিসর্গও জানতাম না। আর বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সভা এর কিছুই জানা ছিল না। ১৬ তারিখ টাঙ্গাইল ছিলাম কারণ ১৭ তারিখ হুজুর মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতি বছর যাই আর উপলব্ধি করি, দেশে যে মানবতার অবক্ষয় চলেছে তাতে জীবিতদেরই মূল্য নেই, সে যত বড়ই হোক যত মহানই হোক মৃতের আবার মূল্য কী? হুজুরের কবরে ফুল দিতে গিয়ে দেখলাম ৫০-৬০টি পুষ্পস্তবক, পাশে দাদি আলেমা ভাসানীর কবরে কিছু নেই। তাই আমাদের সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করে দাদি আলেমা ভাসানীর কবরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পুষ্পস্তবক দিয়েছিলাম। আমি পুষ্পস্তবক দিতে যাইনি, গিয়েছিলাম খোলা দিলে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে। ফেরার পথে কাগমারী আটিয়া করটিয়া হয়ে এসেছিলাম। পাথরাইলের কাছে হঠাৎ দেখি অনেক মোটরসাইকেল। তারপর কয়েকটা গাড়ি, বিএনপি মহাসচিব যাচ্ছিলেন। প্রথম বুঝতে পারিনি, তিনি নাকি হাত তুলেছিলেন। আমিও গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলাম। চার-পাঁচটা গাড়ি পেছনে পড়ায় ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর দাঁড়াননি, সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেছিলাম। ভদ্রলোক ভদ্রতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। ওদিক থেকে বলছিলেন, ‘ভাই হাত তুলেছিলাম।’ আমি বলেছিলাম আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। আপনারা চলে গেছেন। ভালো থাকেন।

পরদিন ছিল ১৮ নভেম্বর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাব কি যাব না এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল মনে। ৭ মার্চ আমাদের মন-প্রাণ-আত্মা। যে ভাষণ নিজ কানে শুনেছি যে ভাষণে সে সময় সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে আগুন জ্বলেছিল, ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’ কেউ পেরেছে কেউ পারেনি। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নয় মাস নিরন্তর যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছিলাম। আর আমিই একমাত্র ভাগ্যবান বাঙালি মিত্রবাহিনীর এক জেনারেল দুই ব্রিগেডিয়ারের সঙ্গে বাঘ বন্দী করতে তার ডেরায় গিয়েছিলাম। কারও দয়ায় নয় নিজের বাহুবলে বিশাল কাদেরিয়া বাহিনী নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়াজিকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলাম। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এ কে খন্দকার কলকাতা থেকে এসেছিলেন। কীভাবে যেন মেজর হায়দার এসেছিলেন। পাকিস্তানিদের সহায়তায় ডেমরা থেকে সফিউল্লাহ এসেছিলেন। কিন্তু কেউ যুদ্ধ করে নিজের মাজার জোরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেননি, আসতে পারেনওনি। বেঁচে থাকতেই সেই ৭ মার্চের অমর বাণী বিশ্বস্বীকৃতি পাওয়ায় গর্ব ও আনন্দে বুক ভরে গেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে কোনো দিন আওয়ামী লীগের ভাবিনি, ৭ মার্চের ভাষণও কারও একার মনে করিনি। আমি সব সময় মনে করেছি, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সম্পদ, বাঙালি জাতির সম্পদ, বিশ্বের নিপীড়িত সংগ্রামী মানুষের সম্পদ। ঠিক তেমনি তার ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অমর বাণী। তাই অনেক ভাবনা-চিন্তার পর ঠিক করেছিলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাব। নাগরিক কমিটি আহূত সভায় যেতে অসুবিধা কী। আমি যাব ৭ মার্চের অমর বাণী হৃদয়ে লালন করতে। এমনকি দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগও যদি সভাটি করত এবং আমাদের দাওয়াত করত অবশ্যই যেতাম।

জানি আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী আমাকে দেখলে খুশিতে উদ্বেলিত হয়। তাই যাওয়া যখন ঠিক করেছিলাম তখন গেলে জায়গা পাব কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এক. যিনি আহ্বান করেছিলেন সেই ওবায়দুল কাদেরকে, দুই. আমি যাকে খুবই স্নেহের চোখে দেখি। ভাগ্য কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। যিনি এক দিনের জন্য তেজগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাননি, এমপি হতে চাননি, মন্ত্রী হতে চাননি সেই আসাদুজ্জামান খান কামাল এখন একজন বেশ ক্ষমতাবান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। লোকটি যে নিরহংকারী এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বলেছিলাম, দাওয়াত পেয়েছি। যাব, ঢুকতে পারব তো? বসার জায়গা পাব তো? বলেছিলেন, ‘একটু পর জানাচ্ছি।’ একটু পর তার লোকজন ফোন করেছিল। তারপর তিনি ফোন করেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার লোকেরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? আপনাকে সাধ্যমতো সম্মান করা হবে।’ সভায় গিয়ে সত্যিই সেটা পেয়েছি। যারা রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সামনের রো-তে কোনো চেয়ার ছিল না। দৌড়াদৌড়ি করে চেয়ার এনেছিল। অনেক চেয়ারে হাতল ছিল না। আমাকে যেটা দেওয়া হয়েছিল তাতে হাতল ছিল। যে কারণে আড়াই-তিন ঘণ্টা বসে থাকায় কোনো অসুবিধা হয়নি। কাকতালীয় কিনা জানি না, আমার পাশে ছিল ড. আবদুর রাজ্জাক। আমার একজন প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। গাড়ি থেকে নেমে সাবেক মন্ত্রী জামালপুরের হীরা মিঞাকে পেয়েছিলাম। তাকে নিয়ে একেবারে দাওয়াতিদের গেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হলো হীরা মিঞাকে সেখানে যেতে দেওয়া হলো না। তাকে অন্যদিকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি। আমার জন্য চেয়ার এলেও দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারণ রাজ্জাকের জন্য তখনো চেয়ার আসেনি। অনেক কষ্টে রাজ্জাকের জন্য চেয়ার আনা হলে দুজন পাশাপাশি বসি। ডানে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও এইচ টি ইমাম। বাঁয়ে রাজ্জাক, তারপর প্রবীণ নেত্রী পরম শ্রদ্ধেয়া সাজেদা চৌধুরী। পেছনে হাসানুল হক ইনু, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। কিন্তু তোফায়েল আহমেদ এবং আমীর হোসেন আমু ভাইকে চোখে পড়েনি। তারা ডান দিকে একটু দূরে ছিলেন। পরে বেরোবার সময় তাদের সঙ্গে দেখা।

সেখানে মহীউদ্দীন খান আলমগীরও ছিলেন। আগাগোড়াই তিনি একজন ভদ্রলোক। আমি তার বহু কাজের সমালোচনা করি। তিনি জিয়ার সঙ্গে খাল কাটা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। ডক্টরেট করেছেন জিয়ার খাল কাটার ওপর। মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের এডিসি ছিলেন। পাকিস্তানের সেবা করেছেন। তার পরও যখন যেখানে দেখা হয়েছে অসম্ভব উষ্ণ আচরণ করেছেন। সেদিনও আমাকে দেখেই বলেছিলেন, ‘আপনার শরীরটা একটু ভেঙে গেছে।’ তার এই সামান্য কথা আমাকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে। সভা শেষে বেরোতে গিয়ে বেশ ঝকমারিতে পড়েছিলাম। যে কোনো জায়গায় রাষ্ট্রীয় বা বড় কোনো ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে বেরোতে গিয়ে আমার ড্রাইভার যীশু কখনো পিছে পড়ে না। কিন্তু সেদিন পড়েছিল। যার জন্য না হলেও ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাতে অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, খ ম জাহাঙ্গীর, ইসমত কাদির গামা, মমতাজ, অধ্যাপক এ কে আজাদ আরও অনেকে। কিন্তু যেটা সব থেকে অসুবিধার সেটা হলো এক. সবার সেলফি তোলার আগ্রহ, দুই. আপনি আওয়ামী লীগে ফিরে আসুন। আমি সেলফি তোলা পছন্দ করি না। আমার কাছে মনে হয়, সব থেকে নিঃস্বরিক্তরা নিজের ছবি নিজে তোলে। মনে হয় তাদের ছবি তোলার মতো কেউ নেই। আর বিষয়টা যেন কেমন।

গা ঘেঁষে ভেক ধরে ছবি তোলা খুবই বিরক্তিকর। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর চাপে দু-এক বার বলেছি, আমি ইনু সাহেবদের পাশাপাশি বসতে পারব না, বঙ্গবন্ধুর চামড়া তোলাদের সঙ্গে রাজনীতি করব না। কী হবে, বঙ্গবন্ধু ৫৫ বছর বয়সে এই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। আমি ৭১-এ পা দিয়েছি তাও প্রায় ছয় মাস। সম্মানের সঙ্গে এক দিন বাঁচতে পারলেই যথেষ্ট। আপনারা তো আছেন। থাকেন কাজ করেন। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে রাজনীতিতে পা দিয়েছিলাম, তাকে বুকে নিয়েই এ দুনিয়া থেকে যেতে চাই। তাই আমাকে নিয়ে ভাববেন না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। অনুষ্ঠান খুবই সুশৃঙ্খল ছিল আর প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিহীন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য ছিল সেদিন। লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। পরের পর্বে মূল অনুষ্ঠান নিয়ে লিখব।

লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর