শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাস্তুহারা নারীর পুনর্বাসনে রসুলুল্লাহ (সা.)

মুফতি মুহাম্মদ রাশিদুল হক

বাস্তুহারা নারীর পুনর্বাসনে রসুলুল্লাহ (সা.)

আরবের এক কৃষ্ণকায় দাসী মুক্তিলাভের পরও ওই গোত্রের কাছেই রয়ে যায়। ইতিহাসে সে ‘ওয়ালিদাহ সাওদা’ নামে পরিচিত। সে যেই গোত্রে বসবাস করত তাদের একটি মেয়ে একদিন গলায় মূল্যবান পাথরখচিত হার পরেছিল। গোসলখানায় ঢোকার আগে হারে পানি লাগার ভয়ে হারটি খুলে দেয়ালের ওপর রেখে যায়। তখন সবার অলক্ষ্যে একটি চিল এসে ছো মেরে হারটি নিয়ে যায়। গোত্রের লোকেরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও যখন হারটি পাচ্ছিল না তখন তারা ওই দাসীকে সন্দেহ করল এবং একপর্যায়ে তার ওপরই চুরির দোষ চাপিয়ে দিল। তার কোনো ওজর-আপত্তিই তারা শুনল না। তল্লাশি করতে শুরু করল। এমনকি তার যৌনাঙ্গেও তারা তল্লাশি চালাল! ঠিক সেই সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি তাদের সামনে ফেলে গেল। তখন সে তাদের উদ্দেশে বলল, তোমরা আমাকে সন্দেহ করেছিলে। তোমরা তো এ হারটি চুরির দোষই আমার ওপর চাপিয়েছিলে। অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। দেখ এই সেই হার! (বুখারি, উমদাতুল কারি)। নিগ্রহের শিকার সম্ভ্রমহারা অসহায় সেই নারী গোত্রের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভে ওই এলাকা ত্যাগ করল। কিন্তু তার যাওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিল না। কারণ তিন কুলে তার কেউ ছিল না। তবে সে আরবের সবার মতো দূর থেকে শুনেছিল রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দয়া-অনুগ্রহের কথা, তার মানবতার কথা। তাই সোজা এসে উপস্থিত হলো প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে। নবী (সা.) তাকে আশ্রয় দিলেন। সব কথা শুনে তার বাসস্থানের ব্যবস্থা করলেন। মসজিদে নববীর আঙিনায় তাঁবু গেড়ে তার থাকার বন্দোবস্ত করলেন। (ফতহুল কারি)। মুসলমানদের মানবতাবোধ দেখে সে অভিভূত হলো। ইসলামের শীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করল। সাহাবি হওয়ার পরম সৌভাগ্য অর্জন করল। নববী দরবারে আসার কারণে একজন নিগৃহীত মজলুম নারী হয়ে উঠল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষের অন্তর্ভুক্ত। সে প্রায়শই তার এই সৌভাগ্যের নেপথ্যের ঘটনাটি স্মরণ করে কবিতার ভাষায় বলত, ‘হার হারানো ছিল আমার রবের পক্ষ থেকে বিস্ময়কর বিষয়। শুনুন, সেই ঘটনাটি আমাকে অবিশ্বাসের ভূখণ্ড থেকে মুক্তি দিয়েছে।’। (বুখারি)। 

লেখক : মুহাদ্দিস, গবেষক।

সর্বশেষ খবর