শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করতে হবে

মহান আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি রসুলে আকরাম (সা.) প্রতি দরুদ পাঠ করতে হবে। নইলে কোনো আমল কবুল হবে না। নবীজীর প্রতি যে যত বেশি দরুদ পাঠ করবে সে তত বেশি আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে। আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা তত বেশি বাড়িয়ে দেবেন। নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলেও তাশাহুদ (আত্তাহিয়াতু) এর পর দরুদ পাঠ করতে হয়। তাই অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও দরুদের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের সূরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্য রহমতের দোয়া কর এবং সালাম পাঠ কর। হাদিসের কিতাবগুলোতে এ বিষয়ে অনেক বর্ণনা এসেছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহপাক তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন। এ ছাড়াও তার ১০টি গুনাহ মাফ করা হবে এবং ১০টি দরজা বুলন্দ করা হবে অর্থাৎ তার মর্যাদা ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে (নাসায়ী ১ : ১৪৫, মেশকাত পৃ. ৮৬)। তারাগীব নামক হাদিসগ্রন্থের এক বর্ণনায় এসেছে, একদিন নবী করিম (সা.)-এর চেহারা মুবারকে মহাখুশির এক উজ্জ্বল আভা চমকাচ্ছিল এবং খুশির বিচ্ছুরণ খুবই অনুভূত হচ্ছিল। এটা দেখে সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ রসুল! আজ আপনার চেহারায় যত খুশি দেখছি ইতিপূর্বে তো এমনটি আর কখনো দেখিনি। হুজুর (সা.) বললেন, আমি কেন খুশি হব না। অথচ এখনই জিবরাইল আমার কাছে এসে বলে গেলেন যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি একবারও দরুদ পড়বে আল্লাহপাক এর বিনিময় তার আমলনামায় ১০টি নেকি লিখবেন। ১০টি গুনাহ মাফ করবেন এবং ১০টি দরজা বুলন্দ করবেন (মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন)। অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই-ই হবে, যে আমার ওপর অধিক দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিযি ১ : ১১০, মেশকাত পৃ. ৮৬)  আমরা যখনই দরুদ পাঠ করি বা রসুলের প্রতি সালাম পাঠ করি তা প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছানো হয়। এ বিষয়ে হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছেন, যারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করেন এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান (নাসায়ী ১ : ১৪৩, দারিমি, মেশকাত পৃ. ৮৬) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে এসে আমার ওপর দরুদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনি। আর যে দূর থেকে আমার ওপর দরুদ পাঠায় তা আমাকে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। (বায়হাকি, মেশকাত পৃ. ৮৭) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বিখ্যাত হাদিস বিশারদ এবং ব্যাখ্যাকারক মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, এর মধ্যে কোনোই সন্দেহ নেই যে, রওজা মোবারকের কাছ থেকে দরুদ পড়া দূর থেকে পড়া অপেক্ষা অধিক উত্তম। কেননা কাছে হওয়ার দ্বারা যে খুশু-খুজু (বাহ্যিক এবং আন্তরিক একাগ্রতা) অর্জিত হয় তা দূর থেকে হয় না। দৈনিক কতবার আমরা দরুদ পাঠ করব? এ বিষয়ে হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনার ওপর বহু দরুদ পাঠ করতে চাই। তাই তার কত পরিমাণ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করব? তিনি বললেন, যে পরিমাণ তুমি চাও। আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ। তিনি বললেন, তুমি যা চাও। তবে যদি আরও বেশি কর তা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম, তাহলে কি অর্ধেক? হুজুর (সা.) বললেন, তুমি যা পছন্দ কর, তবে যদি আরও বেশি কর তা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম তাহলে কি তিন ভাগের দুই ভাগে? হুজুর (সা.) বললেন, যা তুমি পছন্দ কর, তবে যদি এটা অপেক্ষাও অধিক কর তা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম, তাহলে সম্পূর্ণ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করব। হুজুর (সা.) বললেন, তবে এখন তোমার মাকসাদ (উদ্দেশ্য) পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (তিরমিযি ২ : ৭২, মেশকাত পৃ. ৮৬)

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর