শিরোনাম
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় লজ্জা প্রশ্নফাঁস

সরকারকে কঠোর হতে হবে

প্রশ্নপত্র ফাঁস জাতীয় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতির মাধ্যমে যে জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছে, সে জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যেক কণ্টকিত করছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। প্রাথমিক সমাপনী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি—প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তাব্যক্তিরা বাস্তবতাকে স্বীকার করে এ ভয়াবহ অপরাধ রোধ করার বদলে বালুর স্তূপে মুখগুজে তা অস্বীকার করার কসরতেই ব্যস্ত। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মেধা যাচাইয়ের প্রধান মাধ্যমই হলো পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে কতটা জানল, তাদের অর্জন কতটুকু তা এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় খুব একটা বিবেচ্য নয়। পরীক্ষার ফলাফলে নির্ধারিত হয় মেধার মান। সে পরীক্ষার ক্ষেত্রেই যদি স্বচ্ছতার অভাব থাকে, যদি পরীক্ষার আগে ফাঁস হয়ে যায় প্রশ্নপত্র, তবে কী অবস্থা দাঁড়ায় সহজে অনুমেয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে অশুভ বাণিজ্যের অংশ হিসেবে। কালোবাজারে চলছে প্রশ্ন বিকিকিনি। কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কুশীলবরা। লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেও থাবা বিস্তার করেছে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র। এই অশুভ চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে তথাকথিত ছাত্রনেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, প্রেসের কর্মচারীসহ আরও অনেকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দুই তথাকথিত ছাত্রনেতাসহ ১৪ জন দুর্বৃৃত্তকে আটক করার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়েছে। আটক ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের পাঁচজন আদালতে নিজেদের অপরাধের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পড়াশোনার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। মেধাহীন গতিতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এ অকাম্য অবস্থার উত্তরণে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে এখনই কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। প্রশ্নফাঁস বাণিজ্যের অনুষঙ্গ কোচিং ব্যবসা বন্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শিক্ষাব্যবস্থাকে পরীক্ষানির্ভর করার ভুল পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত তিনটি পাবলিক পরীক্ষার বিলাসিতার প্রয়োজন আছে কিনা ভেবে দেখা দরকার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর