ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনরত রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। হামলায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছয়জন ছাত্রী আহত হন। হামলার পরপরই অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নামে যা ইচ্ছা তাই করা নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চাঁদাবাজি, মাস্তানি এমন কোনো দুষ্কর্ম নেই যা এ ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মী নামধারীরা করছে না। এ সংগঠনের ক্যাডাররা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রায়শ আবির্ভূত হচ্ছে যমদূতের ভূমিকায়। যেখানে প্রতিপক্ষ নেই সেখানে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র শানাচ্ছে। তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সরকারি দলের সুনাম। বলা হয়ে থাকে ছাত্রলীগ নামের ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব যাদের সহযোগী সংগঠন তাদের বিপদে ফেলার জন্য প্রতিপক্ষের কোনো দরকার হয় না। দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের অবদান অবিস্মরণীয়। গর্ব করে বলা হয়, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। কিন্তু বর্তমানে যারা নিজেদের ছাত্রলীগ দাবি করে শিক্ষাঙ্গনে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছেন তাদের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের প্রেতাত্মা বলাই শ্রেয়। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি তাদের অভ্যাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাস থেকে প্রতিপক্ষকে উচ্ছেদের পর তারা নিজেরাই নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে। রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ছাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার পর তিনজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করব, বহিষ্কৃত তিনজন ছাড়াও আরও যেসব সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে সবাইকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে। ছাত্রসংগঠনের নামে যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুণ্ন করছে তাদের মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের ভাবমূর্তিতে চুনকালি লাগাচ্ছে সন্ত্রাসের যেসব বরপুত্র তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের নৈতিক কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।