শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ট্রাম্প এবং তুঘলক

জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য

মুহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন দিল্লির সুলতান। উদ্ভট পরিকল্পনার জন্য তিনি ইতিহাসে নিজের নাম স্থায়ী করে নিয়েছেন। তুঘলকের মনে হঠাৎ উদয় হলো রাজধানী হিসেবে দিল্লি নিরাপদ নয়। তিনি দিল্লি থেকে রাজধানী ৭০০ মাইল দূরে দক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলেন। এ সিদ্ধান্ত হাজার হাজার মানুষের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনে। মান্ধাতা আমলের সেই যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে সুলতানের নির্দেশে রাজ কর্মচারী ও অভিজাত অধিবাসীরা দিল্লি ছেড়ে দেবগিরিতে যাত্রাপথেই অনেকে প্রাণ হারান। তুঘলক জমানার পর ৬৬৬ বছর কেটে গেছে। সেই মধ্যযুগে ভারত বর্ষ ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। বিশ্বের সে সময়ের জিডিপির ২০ শতাংশের বেশির উৎস ছিল এই উপমহাদেশ। সে সময় যে দেশটি ছিল সভ্য দুনিয়ার অগোচরে সেই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা যায়, সারা বিশ্বের সুলতানের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত তিনি। সেই প্রাচীনকালে তুঘলকের খেয়ালিপনায় ক্ষতিগ্রস্ত হতো শুধু ভারতবর্ষের মানুষ। আধুনিক এই জমানায় ট্রাম্প সাহেবদের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি শক্তিমত্তার কারণে সে দেশের শাসকদের কোনো ভুল সিদ্ধান্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্ববাসীর জন্যও বিড়ম্বনা ডেকে আনে। কেড়ে নিতে পারে সারা বিশ্বের শান্তি। ট্রাম্প সাহেব তেমন একটি হঠকারী কাজই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ৭০ বছর ধরে জেরুজালেম প্রশ্নে যে নীতিগত অবস্থান অনুসরণ করেছে তা হলো এ সম্পর্কে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। ফিলিস্তিন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকার একপেশে নীতি গ্রহণ করলেও এ ক্ষেত্রে তারা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা সে সিদ্ধান্ত থেকে শুধু সরে আসেনি— ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যকে অগ্নিগর্ভ অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ট্রাম্পের তুঘলকি সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনজুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়েছে। শত শত বছর আগে আমাদের এই উপমহাদেশের খেয়ালি শাসক তুঘলক রাজধানী স্থানান্তর, তামার মুদ্রা চালুসহ বেশকিছু অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিহাসে সমালোচিত হয়েছেন। তবে তুঘলক তার ভুল বুঝতে পারার পর সেসব অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরেও এসেছেন।  ট্রাম্পের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে হঠাৎ করে যে অগ্নিগর্ভ অবস্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে, তা থামানোর একমাত্র পথ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একপেশে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। ট্রাম্পের সুমতিই এ বিপদের একমাত্র সমাধান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর