শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মাহে রবিউল আউয়ালের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব

মুফতি মাওলানা মুহিবিল্লাহিল বাকী নদভী
পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

মাহে রবিউল আউয়ালের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব অপরিসীম। সাইয়্যেদুল কাওনাইন হাবীবে খোদা মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন এই মাসে। যিনি বিশ্বনবী, শেষ নবী, যার শুভাগমনে ধন্য সমগ্র জগৎ, আলোকিত মক্কার মরুপ্রান্তর, যার কারণে চিরভাস্বর মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন— ‘সমগ্র জগত্বাসীর জন্য আপনাকে রহমত করেই প্রেরণ করেছি।’ ওই আয়াত প্রমাণ করছে রসুলে আকরাম (সা.) গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। আরও ইঙ্গিত বহন করছে আল্লাহ জগৎসমূহের রব এবং তার প্রিয়বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) হলেন এ জগৎসমূহের রহমত। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা মালিকানা যে পর্যন্ত বিস্তৃত, বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত সে পর্যন্ত ব্যাপৃত।

মহানবীর আগমন যে বারাকাতপূর্ণ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত রবিউল আউয়ালে সংঘটিত সঙ্গত কারণেই সে মাসটি উম্মতে মোহাম্মদী তথা জগত্বাসীর কাছে সম্মানিত, তাত্পর্যমণ্ডিত ও মহিমান্বিত। এমনকি বছরের মাসসমূহের মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শ্রেষ্ঠত্ব, গুরুত্ব ও মহত্ত্ব সবচেয়ে বেশি ও অতুলনীয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র রমজান ওই সম্মানিত মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে।’ কোরআন নাজিলের মাস নিঃসন্দেহে তাত্পর্যপূর্ণ, সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ। আরও ইরশাদ হয়েছে— ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ রসুল (সা.)-এর ঐতিহাসিক ও গোটা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেওয়া এবং আধুনিক যুগের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানীদের হার মানিয়ে দেওয়া এমনকি চাঁদের দেশ ও মঙ্গল গ্রহের রকেটযাত্রীদের চিরপরাস্তকারী ও নতিস্বীকারে বাধ্যকারী মিরাজের ঘটনা, আরশে আজিমে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের ঘটনা যা কোরআনে কারিমে আল্লাহ এভাবে উল্লেখ করেছেন— অন্য আয়াতে- ‘পবিত্রতা আল্লাহর যিনি তার বান্দা মুহাম্মদ (সা.)-কে রাতের কিয়দাংশ মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন।’ অনন্তর দুই ধনুক অপেক্ষাও কম ব্যবধান রইল। অতঃপর আল্লাহ তার বান্দার (মুহাম্মদ সা.) কাছে প্রত্যাদেশ করলেন। এবারে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, কোরআনে কারিমে উল্লিখিত এসব আশ্চর্যান্বিত, তাত্পর্য-মণ্ডিত, সম্মানিত মাস, রজনী, দিবস, ক্ষণ, ঘটনাবলি এর অর্জন ও প্রাপ্তিতে উম্মতে মুহাম্মদী তথা জগত্বাসী সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান হয়েছে একমাত্র বিশ্বনবীর (সা.) কারণে ও মাধ্যমে। আর নবীকুল শিরোমনির শুভাগমন হয়েছে মাহে রবিউল আউয়ালে। তাই তো এ মাসটির ফজিলত, গুরুত্ব ও মহত্ত্ব অধিক ও অপরিসীম হওয়াই ইমানের দাবি।

এতদ্ভিন্ন এই রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে আরও বহু ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে, যা মাহে রবিউল আউয়ালের মর্যাদা ও গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে-

* মা খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর সঙ্গে রসুলে আকরাম (সা.)-এর পরিণয় হয়েছিল ১০ রবিউল আউয়াল।

* মহানবী (সা.) হিজরতের উদ্দেশে রওনা করেছিলেন ১ রবিউল আউয়াল। তিনি মদিনায় পৌঁছেন ১২ রবিউল আউয়াল।

* প্রিয়নবী মোস্তফা (সা.) মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন ১৬ রবিউল আউয়াল।

মাহে রবিউল আউয়ালের আগমন ঘটে নবী প্রেমের প্রতীক ও নিদর্শন হিসেবে। যার হৃদয়ে নবীপ্রেম ও নবীর ভালোবাসা থাকবে, রবিউল আউয়াল তার অন্তকরণে আবেগ, উচ্ছ্বাস আর স্পন্দন সৃষ্টি করবে। উৎসাহিত আর প্রত্যয়ী করবে নবী (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নাতের প্রতি। আল্লাহই তো ঘোষণা করেছেন— ‘নিশ্চয়ই রসুল (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ’। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার পিতা-মাতা, সন্তান এবং অন্যান্য মানবকুলের চেয়ে।’

অতএব, আমাদের উচিত হবে রসুলে আকরাম (সা.)-এর আগমনের এই মাসকে কেন্দ্র করে তার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার মহান আদর্শ ও সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরে ইহকালীন ও পরকালীন অগ্রগতি ও মুক্তিলাভে সাফল্যমণ্ডিত হওয়া।  মাহে রবিউল আউয়ালের বারাকাত, রসুলে আকরাম (সা.)-এর মহব্বত ও  পরকালীন নাজাত আল্লাহ আমাদের সবাইকে নসিব করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর