শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা

যুবায়ের আহমাদ

ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা

বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন দেশপ্রেমের মূর্তপ্রতীক। মাতৃভূমিকে কতটা ভালোবাসতে হবে তা তিনি শিখিয়েছেন হাতে-কলমে। মক্কাবাসী যখন তাকে মক্কা থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দিচ্ছিল তখনো মক্কার ভালোবাসা তাকে চুম্বকের মতো টানত। মক্কার মায়া ছাড়তে পারছিলেন না তিনি। মক্কার প্রতি ভালোবাসায় তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় পেছন ফিরে বার বার মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! হে মক্কা, নিশ্চয়ই তুমি সবচেয়ে প্রিয় ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান। আমাকে যদি এখান থেকে বের করে না দেওয়া হতো আমি কিছুতেই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ (তিরমিজি)। একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য দীর্ঘদিনের সাধনার পর রসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনাকে নিজের দেশ হিসেবে গণ্য করে মদিনার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মদিনার ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিককে নিয়ে এর সুরক্ষার জন্য অনেক প্রতিরোধযুদ্ধ করেছেন। ঐতিহাসিক মদিনা সনদের অন্যতম মৌলিক ধারা ছিল এই যে, শত্রু কর্তৃক মদিনা আক্রান্ত হলে এখানকার ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে।

যারা রাষ্ট্রের স্বাধীনতার পক্ষে অবদান রাখেন তাদের মর্যাদাও ঘোষণা করেছেন আমাদের প্রিয়নবী (সা.)। একাধিক হাদিসে নবীজি (সা.) মুসলমানদের তাদের মাতৃভূমির সীমান্ত পাহারা দেওয়ার অনেক মর্যাদা বর্ণনা করেন। এক হাদিসে তিনি শত্রুর আক্রমণ থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য এক রাত পাহারা দেওয়াকে এক মাস নফল নামাজ ও রোজার চেয়ে উত্তম বলে গণ্য করেছেন। ইসলাম আক্রান্ত হলে যেমন সে আক্রমণ প্রতিহত করে দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য তেমন মাতৃভূমি আক্রান্ত হলেও তা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই তো সাহাবায়ে কিরাম যেমন অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের কোরবান করে দিয়েছিলেন তেমন দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা রক্ষায়ও ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি চোখ জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হলো ওই চোখ যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে আর আরেকটি হলো যা সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনী যাপন করে।’ (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরীদের জন্য জান্নাত অবধারিত।’ (আবু দাউদ)।

মহান আল্লাহর বড় নিয়ামত স্বাধীনতা। আমাদের প্রিয় লাল-সবুজের পতাকাকে রক্তের বিনিময়ে কিনতে হয়েছে। বাংলার পবিত্র মাটির স্বাধীনতা পেয়েছি মহান ব্যক্তিদের জীবনদান ও ভালোবাসার মাধ্যমে। আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা মজলুম মানুষের অধিকার আদায়ে লড়েছিলেন। কেউ যদি নিজের অধিকার, প্রাপ্য সম্পদ বা প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন তবে ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি শহীদ। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ, পরিবার-পরিজন, নিজের প্রাণ বা নিজের ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)। একবার নবী (সা.) এক সাহাবির জানাজা পড়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। হজরত উমর (রা.) নবীজিকে (সা.) বলেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! এই ব্যক্তি খারাপ ছিল, তার জানাজা পড়বেন না।’ নবী (সা.) উপস্থিত সাহাবিদের দিকে ফিরে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কেউ কি এই লোকটিকে ইসলামের কোনো কাজে দেখেছ?’ একজন সাহাবি বললেন, ‘হ্যাঁ, সে আল্লাহর জন্য সীমান্ত (স্বাধীনতার) পাহারায় একটি রাত জেগে ছিল।’ নবী (সা.) তাঁর জানাজা পড়লেন এবং তাকে দাফন করলেন। তারপর (সেই সাহাবির বিষয়ে) বললেন, ‘তোমার সাথীরা মনে করছে যে তুমি একজন জাহান্নামি মানুষ, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি জান্নাতের অধিবাসী।’ (বায়হাকি)। আল্লাহ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দুনিয়ায় নেক হায়াত এবং পরকালে জান্নাত দিয়ে ধন্য করুন!

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর