সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেহাল সরকারি হাসপাতাল

শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নজর দিন

চিকিৎসা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা স্বাধীন স্বদেশের যে স্বপ্নকল্প হৃদয়ে ধারণ করতেন, সেখানে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। স্বীকার করতেই হবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে যখন দেশ গড়ার কাজ শুরু হয়, সে সময়েও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার পূরণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ-সুবিধা খাতা-কলমে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাংলাদেশের বাস্তবতায় খুব একটা কম নয়। কিন্তু তারপরও স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা কাটছেই না। দেশে তৈরি হচ্ছে একের পর এক ক্লিনিক ও হাসপাতাল। যন্ত্রপাতি ওষুধপথ্যের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে। আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী; শুধু নেই কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। রাজধানী থেকে নিভৃত পল্লী পর্যন্ত বিরাজ করছে অভিন্ন অবস্থা। চিকিৎসকের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়ারা রোগী দেখা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করছে অবলীলায়। যে কারণে মাঝেমধ্যেই রোগীর পেটের ভিতর গজ-ব্যান্ডেজ, ছুরি-চাকু রেখে সেলাই করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু হয়েছে দালালদের রাজত্ব। তারা নানা কায়দা-কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। খোদ রাজধানীতেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবার হতশ্রী অবস্থা বিরাজ করছে। বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব খুব একটা না থাকলেও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিরাজ করছে আয়া দারোয়ানসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের রামরাজত্ব। হাসপাতালের আঙিনায় তারা পরিচালনা করছে দোকানপাট। মাদক ব্যবসায়ও জড়িত এদের অনেকে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকার প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও তার সুফল অনেকাংশে পৌঁছাচ্ছে না সাধারণ মানুষের কাছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা উঠে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সম্মান জানাতে এই অকাম্য অবস্থার অবসানে সরকারকে যত্নবান হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক তথা স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর