রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চাই নৈতিক অর্থনীতি

রাজনীতিতেও শুদ্ধাচারের বিকাশ ঘটাতে হবে

দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতির নৈতিক দিকগুলো মজবুত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তারা বলেছেন এ উদ্দেশে ব্যক্তি উদ্যোক্তা এবং রাষ্ট্র ও সমাজের সবার মধ্যে সংবিধান মান্যতা থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে খোলামেলা আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন, ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শনের সুযোগ থাকতে হবে। সরকারের নীতি-নির্ধারকদের আত্মতুষ্টি ও বাস্তবায়নকারীদের গাফিলতি সমাজ ও অর্থনীতিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। নীতিনির্ধারকদের বলা হয়, সবকিছু ভালো চলছে। অনেক কাজ করা হয়েছে— আর কিছু করার দরকার নেই। এ কথা শুনে তারা আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। আর যারা বাস্তবায়নকারী তারা কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর গাফিলতি শুরু করেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সম্মেলনে দেশের যে হাল হকিকত তুলে ধরা হয়েছে তা বাস্তবতারই প্রতিবিম্ব। গত ৪৬ বছরে দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দৃষ্টিগ্রাহ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও অর্থনীতির নৈতিক ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ায় দেশবাসী তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে সাম্যভিত্তিক। গ্রাম-শহর বা নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য আনা যাবে না। সমাজ, ব্যক্তি, উদ্যোক্তা সবাই মিলে যদি সংবিধানের এই নির্দেশনা মানা হয়, তাহলে অর্থনীতির নৈতিক দিকগুলো মজবুত হবে। সোনার বাংলা গড়ার যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তা অর্জন করা সহজ হবে। সম্মেলনে দেশের অর্থনীতির অকাম্য অবস্থার জন্য রাজনীতির বেহাল অবস্থাকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার হাতে কুক্ষিগত হয়ে গেছে। ফলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া সরকারগুলো আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির কোনো তোয়াক্কা করছে না। এ অবস্থার উত্তরণে সমাজে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলে রয়েছে রাজনৈতিক অপরাধীদের অস্তিত্ব। তৃণমূল পর্যন্ত রয়েছে যাদের বিস্তৃতি। অনৈতিক রাজনীতিই দুর্নীতির মূল উৎস। অর্থনীতি সমিতির সম্মেলনে দেশের অর্থনীতিকে নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুধরে চলার যে তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা তাৎপর্যয়ের দাবিদার। রাজনীতি ও অর্থনীতি এর একটি অপরটির পরিপূরক। রাজনীতি যেহেতু অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু অর্থনীতিতে নৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটাতে রাজনীতিতেও শুদ্ধাচারের বিকাশ ঘটাতে হবে। যা এখন সময়ের দাবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর