রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অবৈধ গ্যাস সংযোগ

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরুন

গ্যাস দেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অন্যসব প্রাকৃতিক সম্পদের মতো এর মালিক মোক্তার দেশের ১৬ কোটি মানুষ। দেশে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় এবং বর্তমানে যে হারে গ্যাস ব্যবহূত হচ্ছে তাতে সমুদ্রসীমায় বড় মাপের গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে আগামী এক দেড় দশকের মধ্যে দেশ গ্যাসশূন্য হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও চলছে এ মূল্যবান সম্পদের অপচয়। আবাসিক ক্ষেত্রে বা বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া বন্ধ নেই। এ গ্যাস দিয়ে ঘরে ঘরে চলছে রান্না। কোথাও কোথাও আবাসিকের নামে গ্যাস সংযোগ নিয়ে চালানো হচ্ছে ছোটখাটো কারখানা। যেসব কারখানায় গ্যাসের সংযোগ আছে তার কোনো কোনোটিতে ঢালাওভাবে চলছে গ্যাস চুরির ঘটনা। এতে করে সরকার টাকা না পেলেও একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেট ভরছে। গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে সে অভিযান কার্যত খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ। অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে অপচয়ের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনাও। গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর বালুর মাঠ লাল মসজিদ এলাকার একটি ভবনের নিচতলার একটি বাসায় অগ্নিকাণ্ডে তিন শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হয়। শ্বাসনালিসহ শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় একে একে তাদের চারজন মারা যায়। তদন্তে বের হয় সেই বাড়ির লোকজন গ্যাসের লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে রান্নার চুলাতে ব্যবহার করত। সংযোগে ত্রুটি থাকায় গ্যাস বের হয়ে অগ্নিকাণ্ড হয়। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের দাবি অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে তারা অভিযান চালিয়ে গত তিন বছরে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতের ৮২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন উচ্ছেদ করেছেন। সন্দেহ নেই অঙ্কের হিসেবে এটি এক বিরাট সাফল্য। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাকের ডগায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিশাল লাইন বসানো হয়েছিল কীভাবে? অবৈধ গ্যাস সংযোগে তিতাসের কর্মচারী-কর্মকর্তারা জড়িত কিনা তা তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করলেই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বে। জাতীয় সম্পদ গ্যাসের অপচয় বন্ধে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরই আগে নজরদারি প্রয়োজন। অবৈধ সংযোগের হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপেরও কোনো বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর