রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকার

খোলা মন নিয়ে বসলে দুই দিনেই সমস্যার সমাধান

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

খোলা মন নিয়ে বসলে দুই দিনেই সমস্যার সমাধান

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে আলোচনার টেবিলেই। খোলা মন নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে পারলে অবশ্যই দুই দিনেই দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। মৌলিক জায়গাগুলোয় বেশি একটা সমস্যা নেই। সমস্যার মূল হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। আমরা মনে করি, ওই সময় সরকার পরিবর্তন হতে হবে। কোনোভাবেই শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকতে পারবেন না। সংবিধান সংশোধন না করেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। দুই পক্ষকেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। গোঁ ধরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নতুন বছর নিয়ে আশা-নিরাশা দুই ভাবেই বিশ্লেষণ করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় দলে প্রায় দুই বছর ধরে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিজের কর্মতৎপরতা, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও চলমান রাজনীতি নিয়েও বিস্তারিত কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তার মতে, দুই দলকে আলোচনায় বসাতে বাধ্য করতে পারে তরুণ সমাজও। তাদের চুপচাপ দর্শকের মতো বসে থাকার সুযোগ নেই। মহাসচিব হিসেবে দলের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি দলকে গতিশীল করতে। সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মামলা-হামলা, গুম-খুন সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা আজ উদ্দীপ্ত ও সক্রিয়। এটা ধরে রেখেই আগামী নির্বাচনে যেতে চাই।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— মাহমুদ আজহার

 

নতুন বছরের প্রত্যাশা কী?

বাংলাদেশকে যারা স্থিতিশীল দেখতে চান, তারা এখন খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। দেশে এখন একটা অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছে তাতে আশাবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিদায়ী বছরটিতে বেশকিছু ক্ষতিকর ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুটি যুক্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতি চরম পর্যায়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এরই মধ্যে রেমিট্যান্স ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বিদেশে কর্মী নিয়োগও একেবারেই কমে যাচ্ছে। গার্মেন্টও কিছু মানুষের হাতে জিম্মি। এটাও নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশি শক্তি। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি তাসের ঘরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনো সময় ধাক্কা লাগলে পড়ে যাবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সামনের বছরেও আশাবাদী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

 

দুই মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

বর্তমানে যারা ক্ষমতাসীন তারা একটা চালাকি করে, প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছে। অন্য কোনো মত-পথ মেনে নিতেই চায় না। আমরা যদি একটু পেছনে তাকাই তাহলে দেখব ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল অবস্থা চলে আসছিল। একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে শুরু করে। এতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে যে বিরোধ এর আগে ছিল তা চলেই গিয়েছিল। সব মহলই এ বিষয়টি সুন্দরভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। তারা সুপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে কাজে লাগিয়ে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে একদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে সংবিধান পরিবর্তন করে। তারা সংবিধানকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে আসে, যাতে এক তৃতীয়াংশ নিয়ে কোনো কথাই বলা যাবে না।

অন্যদিকে বাকি সংবিধান তারা পদে পদে লঙ্ঘন করেই চলেছে। গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজনৈতিকভাবে দেশ ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবেও একই অবস্থা। সরকার ঢোল বাজাচ্ছে, চারদিকে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। তাদের উন্নয়নটা পুরোটাই লোক দেখানো, ইউজল্যাস। অর্থনৈতিক সব প্রতিষ্ঠান আজ ভেঙে পড়ার উপক্রম। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশিরা বিনিয়োগে ভয় পাচ্ছে। ব্যাংকিংয়ের সব ব্যবস্থা কলাপস হয়ে গেছে। পুরোপুরি ভেঙে পড়ার উপক্রম। সরকারের মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। ১ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে  উড়ালসড়ক সর্বত্রই একই অবস্থা। যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, তা গুটিকয় মানুষের হাতেই সীমাবদ্ধ। আয়ের বৈষম্য বেড়েছে।

 

বিদায়ী বছরটি কেমন গেল? রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন চাই।

বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধই করেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। এটাই ছিল মূল চেতনা। কিন্তু এই সরকার গণতান্ত্রিক সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানবাধিকার বলতে আজ কিছু নেই। সর্বশেষ বিচারব্যবস্থাকে তারা শেষ করে ফেলেছে। প্রধান বিচারপতিকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। আইনের শাসন বলতে এখন কিছু নেই। শিক্ষাব্যবস্থা বলতেও আজ কিছু নেই। প্রতিদিনই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। প্রাইমারি স্কুল থেকে বিসিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ জাতি। কিন্তু এ সরকার চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। তারা যে উন্নয়নের রোল মডেলের প্রচার চালাচ্ছে, এই হচ্ছে সেই রোল মডেল।

এসব কারণেই আমরা মনে করি, সামনের বছরও ভালো হবে না। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, আমাদের দাবি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। একটি জবাবদিহিমূলক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশ এ অবস্থায় থাকবে না। আর এই সরকারব্যবস্থা আমরা চাইনি, এটা আওয়ামী লীগই চেয়েছিল। তাদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে সেদিন আমরা নির্বাচন দিয়েছি। কিন্তু তারা সে পথে নেই। তারা কোনো যুক্তি বা বাস্তবতার ধার ধারে না। তবে পৃথিবীতে অনেক দেশে অনেকেই জোর করে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তারা বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি।

সবচেয়ে বড় সমস্যা আজ মানুষের মনে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। কেউ আজ নিরাপদ নেই। আজ প্রশাসনের অত্যাচারে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কোনো কিছু হলেই শুধু টাকা দাও, ঘুষ দাও। নইলে গুম, খুনের হুমকি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে মানুষকে হয়রানি করছে, তা কল্পনাও করা যায় না। সেজন্য নতুন বছরকে নিয়ে আমরা তেমন আশাবাদী হতে পারছি না বরং আমরা নির্বাচনী বছরটাকে মনে করছি, অস্থিরতার, অস্থিতিশীলতার ও সংঘাতের বছর। এটা বাংলাদেশের জন্য হবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

 

এটা কি নির্বাচন ঘিরে?

তাও হতে পারে। অর্থনীতির কারণেও হতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও হতে পারে। সব মিলিয়েই ক্ষেত্রগুলো তৈরি হয়ে আছে। যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।

 

বিএনপির দায়িত্ব কী হবে?

সরকার যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করে; যখন গুম-খুন অহরহ চলে; ফরহাদ মজহার, মাহমুদুর রহমান মান্না, আসিফ নজরুলের মতো গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যখন নাজেহাল হন; সাংবাদিকরা নির্যাতিত হন; সরকার যখন নিজেই অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন করে; বিরোধী দলের কর্মসূচি দমন করে তখন একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিই বা কী করতে পারবে। পুলিশের কর্মকর্তারা যখন বলেন, আমরা তুলে নিয়ে যাই বলি না, তখন এ দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় থাকে? তখন বিএনপির পারফর্ম করার কী থাকে? বিএনপির কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে আশা করি, বিএনপি স্বাভাবিকভাবে তাদের গণতান্ত্রিক দাবিগুলো আদায় করবে। তার পরও এরই মধ্যে আমরা বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমাদের বহু নেতা-কর্মী মারা গেছেন। গুম হয়েছেন। এখন পর্যন্ত আমরা ঠাণ্ডা মাথায় রাজনীতি করছি। তাদের কোনো চক্রান্তে পা দিচ্ছি না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই কথা বলে যাচ্ছি।

 

সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি কি কোনো রূপরেখা দেবে?

এটা অবশ্যই সময়মতো দেওয়া হবে। সেটা নতুন বছরেই দেওয়া হতে পারে। তবে দেওয়া না দেওয়া নির্ভর করবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির ওপর। এ সম্পর্কে এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না, কৌশলগত কারণে। এটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে একটি দরকষাকষি হবে। এটা যদি আগেই আমরা ঘোষণা করি, তখন তা নিয়ে আমরা ঝামেলায় পড়তে পারি। এ কারণে উপযুক্ত সময়ে রূপরেখা দেব। এখানে একগুঁয়ে হয়ে থাকা যাবে না। সরকার কিংবা বিরোধী দল সবারই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কোনো কারণেই জনগণকে সাফার করতে দেওয়া যাবে না। আজ ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানে সরকার সমঝোতা করে সমাধান করছে। উলফাদের সঙ্গেও ভারত সরকার বসেছে। আসাম, মেঘালয়ে প্রায়ই গোলমাল হচ্ছে, সেখানেও সরকার বসে সমাধান করছে। বাংলাদেশেও সম্ভব। সব সমাধান হবে আলোচনার টেবিলেই। আমি মনে করি, আলোচনার টেবিলে খোলা মন নিয়ে বসতে পারলে অবশ্যই দুই দিনেই দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। বেসিক জায়গাগুলোয় বেশি একটা সমস্যা নেই। সমস্যার মূল হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। আমরা মনে করি, ওই সময় সরকার পরিবর্তন হতে হবে। কোনোভাবেই শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকতে পারবেন না। সংবিধান সংশোধন না করেই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সংবিধানের মধ্যে থেকেই বহু পথ বের করা সম্ভব। ’৯০-এ এরশাদও তো সংবিধানের মধ্যে থেকেই সবকিছু পরিবর্তন করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। তাকে রেখে কাটছাঁট করে হবে না। তার নিজের অস্তিত্বের কারণেই সরে যাওয়া উচিত।

 

আগামী দিনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?

এই সরকার আগামীতেও ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো লক্ষণই নেই।

 

তো একটি দায়িত্ব আছে?

আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন গঠনেও একটি রূপরেখা দিয়েছি। ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করে নতুন প্রজন্মকে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে স্বপ্ন দেখিয়েছি। ক্ষমতায় গেলে ভিশন বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপেও সুষ্ঠু নির্বাচনে বেশকিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি কমিশনের কাছেও তুলে ধরেছি। তবে সরকারি দল তো মুখ ঘুরিয়ে আছে। বিরোধী দলের সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে। কথা না বলে জোর করে ক্ষমতায় থাকা বেশি দিন টিকবে না। পৃথিবীর ইতিহাস তা বলে না। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনমত তৈরি করছি। নেতারা জেলা সফর করছেন। নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও ক্ষমতাসীন ১৪ দল ছাড়া প্রতিটি দলই সুষ্ঠু নির্বাচনে সেনাবাহিনী চেয়েছে। নিরপেক্ষ সরকার চেয়েছে। সব দলই আমাদের দাবির সঙ্গে একমত।

 

যথাসময়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা?

এটা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। রাজনীতি মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন হয়। সরকার কী করবে, বিরোধী দল কী করবে, আন্তর্জাতিক মহল কী ভূমিকা পালন করবে, তা এখনই বলা যাবে না। তবে নতুন বছরটি রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট। টার্বুলেন্ট ইয়ার।

 

আশাবাদী হওয়ার কোনো পথ খোলা আছে?

আশাবাদী হওয়ার একটাই রাস্তা, তা হলো তরুণ সমাজকে জেগে উঠতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলের সংলাপ-সমঝোতায় বাধ্য করতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে। তারা কিছু না করে বসে বসে দেখবে, তা হবে না। একটি জবাবদিহিমূলক সরকারের জন্য তাদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে।

 

প্রায় দুই বছর ধরে আপনি পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব, দল পরিচালনায় নিজেকে কতটুকু সফল মনে করেন?

আমি মনে করি, এই দুই বছরে বেশকিছু কাজ করতে পেরেছি। কতটুকু সফল তা মূল্যায়ন করবে দল। এরই মধ্যে আমরা অনেক জেলা কমিটি দিতে পেরেছি। অঙ্গসংগঠনগুলোরও নতুন কমিটি। হামলা-মামলা, গুম-খুন সত্ত্বেও কর্মীরা আজ সক্রিয়, উদ্দীপ্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিন মাস লন্ডন সফরের সময় আমরা বহু কাজ করেছি। উত্তরবঙ্গে সফলভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম করেছি। ম্যাডাম আসার পর তাকে নিয়ে উখিয়া গিয়েছি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবার আগে বিএনপিই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। ম্যাডামকে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে, রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক জনসভা করেছি। এগুলোয় আমি আশাবাদী।

 

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো উদ্বেগ আছে কিনা?

বিশ্বরাজনৈতিক ইতিহাসে জাতীয়তাবাদী নেতাদের এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ারপারসন মামলা ফেস করছেন। প্রতি সপ্তাহেই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আদালতে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি আপসহীন। একে আমরা তেমন কোনো সমস্যা মনে করি না। সরকার যত নির্যাতন করবে, বিএনপি ততই আরও শক্তিশালী হবে। বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়বে। এটাই বাস্তবতা। জেল দিয়ে একটি দলকে শেষ করা যায় না। শেখ মুজিবকেও পারেনি। এটা সরকারের চিন্তা করা উচিত।

 

মামলায় সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হলে বিএনপি কী করবে?

ম্যাডামের নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া ম্যাডাম কোনো কারণে জেলে গেলেও নেতৃত্বশূন্যতায় পড়বে না বিএনপি। ছয় দফা আন্দোলনের সময় যখন আওয়ামী লীগের সব নেতাকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তখন কি কোনো সমস্যা হয়েছিল? আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বাতি দেওয়ার লোক ছিল না। তার পরও আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি। ’৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের সময় বিএনপিকে দমাতে পারেনি। ’৮২ সালে এরশাদ এসেও বিএনপিকে দমাতে পারেননি। এ ছাড়া ওয়ান-ইলেভেনসহ গত ১০ বছরে কয়েক দফায় বিএনপিকে নির্মূল করার চেষ্টা হয়; কিন্তু সরকার তো পারেনি। খালেদা জিয়ার তিন মাস দেশে অনুপস্থিতিতেও বিএনপিতে কোনো ক্রাইসিস হয়নি। ঐক্যবদ্ধভাবে দল চলেছে। বিএনপি এখন সবচেয়ে শক্তিশালী দল। সুতরাং নেতৃত্ব সংকটের সৃষ্টি হবে না।

 

বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী কতটুকু?

আমি আশাবাদী এ কারণেই, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। এটা আমি নিশ্চিত আগামীতেও তাই হবে। বেগম জিয়াকে নিয়ে আমরা সারা দেশে মার্চ করতে শুরু করেছিলাম, এটা কনটিনিউ করতে পারলে আমি জোর দিয়ে বলছি, এ দেশে গণঅভ্যুত্থান হবে। তারা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারেনি, পারবেও না। তিনি রাস্তায় বেরোলে লাখ লাখ লোক রাস্তায় বেরোচ্ছে। বংশীকবাদকের মতো। ম্যাডাম দিন-রাত কাজ করতে পারেন।

 

আপনাকে ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের অগণিত পাঠককেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর