রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঋণখেলাপি বন্ধ হোক

লুটেরাদের কেউ যেন রেহাই না পায়

খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে বিপর্যস্ত অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে বললে কম বলা হবে। প্রকৃত অর্থে দেশের অর্থনীতির জন্য বিসংবাদ সৃষ্টি করেছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের কশাঘাত। এর মধ্যে অবলোপন করা ঋণের প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না। মুনাফায় ধস নামায় বেশকিছু ব্যাংক গভীর সংকটে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা একসময় মোটামুটি ভালো থাকলেও সেখানে চলছে হরিলুটের ঘটনা। পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগি করায় বাড়ছে খেলাপের সংখ্যা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছে নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলো। মনে হচ্ছে, এ ব্যাংকগুলোর প্রতিষ্ঠা যা ইচ্ছা তাই করার জন্য। সমঝোতাভিত্তিক বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত এসব ব্যাংকের বেশকিছু পরিচালক। চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণে যোগ হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ১১ হাজার ২৩৭ কোটি, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (মার্চ-জুন) ৭৩৯ কোটি ও তৃতীয় প্রান্তিকে (জুন-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে যোগ হয়েছে আরও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। বছর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ঋণ অবলোপন করা ৪৫ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে ব্যাংকিং খাতে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতের বেপরোয়া ঋণখেলাপি দেশে শিল্প স্থাপনে বড় আকারের ঋণ পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের একাংশের মধ্যে সততার সংকট থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেও লুটেরারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে। সরকারের সুনামও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে ব্যাংক লুটেরা দস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারার কারণে। ব্যাংকে যে টাকা সঞ্চিত থাকে তার মালিক সাধারণ মানুষ। এ অর্থ লুটপাট বন্ধে সরকারকে অবশ্যই কড়া হতে হবে। প্রয়োজনে এমন আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে লুটেরাদের কেউই রেহাই না পান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর