মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রিয় নবী (সা.) যেভাবে পানাহার করতেন

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

প্রিয় নবী (সা.) যেভাবে পানাহার করতেন

প্রিয় নবী (সা.) প্রতিদিন কমবেশি পানাহার করতেন। সাহাবায়ে কিরামও পানাহার করেছেন। আমরাও দৈনিক পানাহার করি। আমাদের পানাহার যদি রসুল (সা.)-এর পানাহারের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে আমরা সুন্নতের ওপর আমলকারী হিসেবে গণ্য হব। আর রসুল (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসল সে আমাকে ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।’ কীভাবে রসুল (সা.) পানাহার করতেন, তা যদি আমরা জানতে পারি, তাহলে খাওয়া-দাওয়ার সুন্নত সহজেই পালন করতে পারব।  প্রিয় নবীর জীবনীবিষয়ক বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ শামায়েলে তিরমিজিতে এ-সংক্রান্ত অনেক হাদিস এসেছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) কখনো টেবিলে আহার করেননি এবং ছোট পেয়ালাবিশিষ্ট খাঞ্চায়ও খানা খাননি। আর তার জন্য কখনো চাপাটি রুটিও (চিকন পাতলা রুটি) তৈরি করা হয়নি। ইউনুস বলেন, আমি কাতাদাহকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে কোন জিনিসের ওপর তারা খানা খেতেন? (অর্থাৎ খাওয়ার সময় কী বিছিয়ে খানা খেতেন) তিনি বললেন, এই (চামড়ার) দস্তরখানার ওপর।  এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় , দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া সুন্নত। বর্তমানে যে কোনো কাপড় বা রেক্সিন বিছিয়ে তার ওপর খাবারের প্লেট  রেখে খেলে দস্তরখানা বিছানোর সুন্নত আদায় হবে। দস্তরখানা বিছানো সুন্নত এ কারণে যে, কোনো খাবার পড়ে গেলে তা যেন আবার তুলে খাওয়া যায়। এতে খাবারের অপচয় থেকে বাঁচা যায়। ওপরের হাদিস থেকে আরও একটি বিষয় জানা গেল, নবী করিম (সা.) টেবিলে বসে খাবার খেতেন না। বরং ফ্লোরে বা বিছানায় বসে দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। অন্য হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) ফ্লোরে বা বিছানায় বসে খাবার খাওয়ার কারণ বর্ণনা করে বলেছেন, ‘আল্লাহ আমাকে বিনয়ী বান্দা বানিয়েছেন। তিনি আমাকে অহংকারী নাফরমান বানাননি।’ (আবু দাউদ) । রসুলে আকরাম (সা.) কখনো একা একা খাবার খেতেন না। বরং সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খেতেন। এ বিষয়ে হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একত্রে খানা খাও, পৃথক পৃথক খেও না। কেননা জামাতের সঙ্গে (খাওয়ার মধ্যে) বরকত হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)। মেহমানের যারা আপ্যায়ন করে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, উটের চোটের দিকে ছুরি যত দ্রুত অগ্রসর হয় তার চেয়েও দ্রুত অগ্রসর হয় কল্যাণ (বরকত) ওই ঘরের দিকে যাতে (মেহমানদের অনর্গল) খানা খাওয়ানো হয়। অর্থাৎ বেশি মেহমানদারি করা হয়। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)। প্রিয় নবী (সা.) কখনো রান্না করা মাংস ছুরি বা কাঁটা চামচ দিয়ে কেটে খেতেন না। তিনি বলেছেন, তোমরা ছুরি দ্বারা গোশত কেটো না। কেননা তা আজমিদের (অনারব) আচরণ-অভ্যাস। বরং তোমরা তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খাও। কারণ এটা অতি সুস্বাদু এবং বেশি হজমদার। (আবু দাউদ, মিশকাত)। খাদ্যপাত্রের তলচাট (নিচে লেগে থাকা অংশ) রসুলুল্লাহ (সা.)-কে মোহিত করত। অর্থাৎ রসুল (সা.) পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য যা তার গায়ে লেগে থাকত তা খেতে খুব পছন্দ করতেন। (তিরমিজি, মিশকাত)। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) আঙ্গুলসমূহ ও খাদ্যপাত্র  চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমরা জানো না যে, কোন আঙ্গুল বা কোন লোকমায় বরকত নিহিত রয়েছে।  (মুসলিম, মিশকাত)।  হজরত নুবায়শা (রা.) রসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো পেয়ালায় খাবার খায় এবং খাবারের শেষে তা চেটে খায়, পাত্রটি তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে।  (আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত)।

লেখক : খতিব, সমিতিবাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর