বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাংহাই সফরের সংকীর্তন

আতাউর রহমান

সাংহাই সফরের সংকীর্তন

সরকারের উচ্চপদে চাকরির সুবাদে বহুবার বিদেশ ভ্রমণ, বহু জনপদে বিচরণের সুযোগ আমার হয়েছে। সরকারের আদেশবলে বিদেশে আমাদের দূতাবাসে আমি পোস্টিংও পেয়েছি। বিদেশের আমাদের দূতাবাসগুলোকে সংক্ষেপে ‘মিশন’ বলা হয় এবং এগুলোর গুরুত্ব অনুযায়ী এ বি সি ও ডি— এ চার ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে বিভক্ত থাকে। সাধারণত যারা বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা তারা সুদীর্ঘ চাকরি জীবনে সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে মোট চারবার মিশনে পোস্টিং পান, সব ‘এ’ ক্যাটাগরির পান না। লন্ডন ও রিয়াদ দুটোই ‘এ’ ক্যাটাগরির মিশন এবং আমি বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা না হয়েও এ দুটো মিশনে পোস্টিং পেয়েছি— এটা আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে।

এ ছাড়া চাকরিকালীন আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি ফরাসি ডাক বিভাগের অধীনে প্যারিসে এবং ফরাসি ভাষাও শিখেছি ও দেশের সর্বোত্তম ভাষা ইনস্টিটিউট ‘ক্যাবিলাম’-এ। আর প্যারিস তো প্যারিসই। আমার এক সিনিয়র সহকর্মী একদা কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘হুয়েন অ্যান আমেরিকান ওয়াইজ হিজ সউল মাইগ্রেটস টু প্যারিস’; অর্থাৎ একজন আমেরিকান যখন মারা যায় তখন তার আত্মা প্যারিসে স্থায়ীভাবে চলে যায়। সত্যিই তো, পরবর্তীতে আমি জেনেছি যে, একজন নিম্ন আয়ের আমেরিকানও তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে অন্তত একবার হলেও প্যারিস ঘুরে আসেন। সে যাই হোক। আমি চাকরিকালে যেসব দেশ দেখেছি সেগুলো সবই মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের। দূরপ্রাচ্যের কোনো দেশ দেখা হয়ে ওঠেনি। কলোনিয়াল যুগের ইংরেজ কবি রাডিয়ার্ড কিপলিং একদা লিখেছিলেন, ‘দ্য ইস্ট ইজ ইস্ট অ্যান্ড দ্য ওয়েস্ট ইজ ওয়েস্ট/দ্য টুয়েইন শ্যাল নেভার কাম টুগেদার’; প্রাচ্য প্রাচ্যই আর পাশ্চাত্য পাশ্চাত্যই/দুটো কখনো এক হবে না। আর ইতিহাসের বইতে পড়েছিলাম, জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা সভ্যতায় উন্নত শ্বেতকায় পাশ্চাত্যের লোকেরা একসময় মনে করত, আফ্রিকা ও এশিয়ার কালো, বাদামি ও পীতবর্ণের লোকদের টেনে তোলার দায়িত্ব ওদের ওপরই বর্তায়, যেটাকে ওরা অভিহিত করত ‘হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন’ তথা সাদা মানুষদের বোঝা বলে।

এসব কথা পড়ে, শুনে, দেখে ও আমার নিজের দেশের কাণ্ড-কারখানা প্রত্যক্ষ করে কেন জানি আমার মনে প্রতীতি জন্মেছিল যে, পাশ্চাত্যের সাদা চামড়াওয়ালাদের দাবিই সঠিক, প্রাচ্যের লোকেরা বুঝি পাশ্চাত্যের লোকদের চেয়ে সব দিক দিয়ে ইনফেরিওর তথা নিকৃষ্ট। চাকরি-উত্তর সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে আমার এই ভুল ধারণার কিছুটা উপশম হয়েছিল, এবার তিন কুড়ি পনেরো বছর বয়সে সাংহাই সফর শেষে সেটা পুরোপুরি তিরহিত হলো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের প্রায় ৭৫ শতাংশ লোকই চীনা-বংশোদ্ভূত এবং সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা পরলোকগত লি কু ইয়ান, যার হাত ধরে মাত্র কয়েক বছরে সিঙ্গাপুরের উন্নতির শিখরে আরোহণ, তিনিও তাই-ই। প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ্য, আত্মজের চাকরি আর পুত্রবধূর পিএইচডি ফেলোশিপের সুবাদেই আমার সস্ত্রীক সাংহাই পদার্পণ।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন একটি বিশাল দেশ এবং দেশটির জনসংখ্যাও প্রচুর। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বলা হয় যে, বর্তমান পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রতি চারটি শিশুর একটি হচ্ছে চাইনিজ, যে কারণে নাকি পৃথিবীর অনেক দেশের বহু দম্পতি চতুর্থ সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন, পাছে তাদের ঘরে চাইনিজ শিশু জন্মায়! আর দেশটি বিশাল হলেও ওদের ঢাকঢোল ততটা নেই, যে কারণে ওদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের নামও আমরা অনেকেই জানি না। তবে একসময় ছিল বটে, ওদের মহান নেতা ও প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, ‘লং মার্চ’ খ্যাত মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের নাম উচ্চারিত হতো পৃথিবীর প্রতিটি কোণে। আর কাকতালীয়ভাবে মাও সে তুং ও চৌ এন লাই— দুজনই একসময় কাজ করতেন সাংহাইতে এবং সাংহাইতে সে সময়ের তাদের বাসস্থান আজ অবধি সযতনে সংরক্ষিত।

কিন্তু আমি বসেছি লিখতে সাংহাই সম্পর্কে। অতএব সে দিকটায় প্রত্যাবর্তন প্রয়োজন। সাংহাই হচ্ছে চীনের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নগরী। ২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুসারে এটা ২ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক অধ্যুষিত পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল নগরী, গ্লোবাল আর্থিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল ও ব্যস্ততম কনটেইনার বন্দর। শুধু কি তাই? সাংহাইকে বিবেচনা করা হয় চীনের উদ্ভাবন ও প্রগতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সাংহাইতেই চীনের প্রথম মোটরগাড়ি চালনা ও প্রথম রেললাইন স্থাপন করা হয়, আর পৃথিবীর বর্তমান দ্রুততম ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৩০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন সাংহাই-মাগলেভ রেললাইনের প্রতিষ্ঠাও সাংহাইতেই। আশ্চর্যের কিছুই নয় যে, ইংরেজিতে এই নগরীকে অভিহিত করা হয়েছে কখনো ‘পার্ল অব দ্য ওরিয়েন্ট’ আর কখনো বা ‘প্যারিস অব দ্য ইস্ট’ বলে। সাংহাই নগরীর নামে দুটো চাইনিজ ক্যারেক্টার তথা অক্ষর আছে— ‘সাং’ (মানে ‘ওপরে’) ও ‘হাই’ (মানে ‘সমুদ্র’); দুয়ে মিলে সমুদ্রের ওপরে। সমুদ্রের ওপরে বলতে ঠিক কী বোঝায়, এ নিয়ে মতবিরোধ আছে বটে; তবে ইতিহাসবিদদের সুনির্দিষ্ট অভিমত নাকি এই যে, টাং ডাইনেস্টি আমলে সাংহাই আক্ষরিক অর্থেই সমুদ্রের ওপরে ছিল। বর্তমানে অবশ্য আমরা দেখতে পাই, সাংহাই পূর্ব চীন সাগরের পাড়ে অবস্থিত। আর সাংহাইকে ভাগ করে দিয়েছে হোয়াং হো নদী, যেটাকে একসময় বলা হতো ‘চীনের দুঃখ’— পশ্চিম দিকের অঞ্চলকে বলা হয় ‘পুশি’ (Puxi) ও পূর্বদিকের অঞ্চলকে ‘পুডং’ ((Pudong)। সাধারণভাবে ‘পুশি’ বলতে বোঝায় নগরীর পুরনো কেন্দ্রীয় অঞ্চল আর ‘পুডং বলতে বোঝায় বিগত শতাব্দীর আশির দশকের পর গড়ে ওঠা গগনচুম্বী অট্টালিকার সমাহার। তা সাংহাইর সর্বত্রই হাইরাইজ ভবনের ছড়াছড়ি।

আর নদীর গতিপথ তথা পানি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে আমরা নদীর মাঝপথে কিংবা নদীতীরে বাঁধ তৈরি করি, যেটাকে কথ্য ভাষায় বলা হয় ‘বান্ধ’। বান্ধকে ইংরেজিতে বলে ‘ড্যাম’ কিংবা ‘ব্যারাজ’, যেমন আসোয়ান ড্যাম ও ফারাক্কা ব্যারাজ। এক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আমাদের ‘পণ্ডিত’, ‘বাজার’ ইত্যাদি শব্দের মতো ‘বান্ধ’ শব্দটিও ইংরেজি ভাষায় স্থান করে নিয়েছে এবং ড্যাম ও ব্যারাজের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চাইনিজরা করেছে কী, প্রধানত পর্যটনের আকর্ষণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে হোয়াং হো নদীর পশ্চিম তীরে সুউচ্চ ও সুপরিসর বাঁধ নির্মাণ করে ইংরেজিতে নামকরণ করা হয়েছে ‘দ্য বান্ধ’ (The Band)। ওটা বর্তমানে সাংহাইয়ের শ্রেষ্ঠতম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নদীর পূর্ব তীরে পুডং এলাকায় আশির দশকের পরে কতকগুলো গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে এক. ২০১২ সালে নির্মিত এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ও গোটা পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিল্ডিং ‘সাংহাই সেন্টার টাওয়ার’, যেটার উচ্চতা হচ্ছে ৬৩২ মিটার এবং ফ্লোর সংখ্যা মাটির ওপরে ১২৭ ও নিচে ৫। দুই. ১৯৯১ সালে নির্মিত ৪৬৮ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট সবচেয়ে মনোরম ‘ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ার’। তিন. ১৯৯৭ সালে নির্মিত ৪৯২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট সাংহাই ওয়ার্ল্ড ফিন্যানশিয়াল সেন্টার’। চার. ১৯৯৪ সালে নির্মিত ৪২০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন জিন মাও টাওয়ার। অন্যদিকে নদীর পশ্চিম তীরে পুশি এলাকায় বহুপূর্বে নির্মিত পুরনো হাইরাইজ বিল্ডিংগুলোকে বর্ধিত ও নবায়িত করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

আর সামারে প্রতিদিন বিকালে ‘দ্য বান্ধ’ এলাকা যখন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় ও সন্ধ্যার পরে নদীর উভয় তীরে একটির পর একটি ভবনে আলোকমালা জ্বলে ওঠে ও ক্ষণে ক্ষণে সেটা পরিবর্তিত হয়ে বিচিত্র রূপ ধারণ করে, তখন যে মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয় তা আমার বিবেচনায় সৌন্দর্য ও মোহনীয়তার দিক থেকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানকেও হার মানায়। এক সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অগণিত আগন্তুকের ভিড়ে বান্ধ পরিদর্শনের স্মৃতি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত, যেটা বোধ করি আর খুব একটা দূর নেই আমার স্মরণে থাকবে।

সাংহাই নগরীর আরও যে কটি বৈশিষ্ট্য আমার খোলা চোখে ধরা পড়েছে, সেগুলো অতঃপর আমি এস্থলে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরছি। প্রথমেই আসে সাংহাইয়ের ‘মেট্রো’ তথা পাতালরেলের ব্যাপারটা। আমি প্যারিসের ‘মেট্রো’, লন্ডনের ‘টিউব’, নিউইয়র্কের ‘সাব-ওয়ে’তে চড়েছি; সবশেষে সাংহাইয়ের মেট্রো চড়লাম। আমি নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারি, সাংহাইয়ের ‘মেট্রো’ হচ্ছে সর্বাধুনিক ও সর্বোত্তম। মাত্র ২০ বছর আগে শুরু করে বর্তমানে সেটা লাইন থেকে নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে এবং ছয় শতাধিক কিলোমিটার বিস্তৃত নেটওয়ার্কে আছে ১৫টি লাইন ও প্রায় ৪০০ স্টেশন। আর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ কোটি লোক এটা ব্যবহার করে, যা মোট পাবলিক পরিবহন সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, চীনে চাইনিজ ভাষা না জানলে চলাফেরায় ভীষণ অসুবিধা হয় কিন্তু মেট্রোতে সব জায়গায় ও ট্রেনের ভিতরের ম্যাপে স্টেশনের নামগুলো চাইনিজের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে লেখা থাকে বিধায় একজন ইংরেজি জানা বিদেশির পক্ষ ওখানে পাতালরেলে চলাফেরা করতে মোটেই বেগ পেতে হয় না; কেবল লেখায় চাইনিজ ক্যারেক্টারের তুলনায় ইংরেজি অক্ষরের সাইজ বেশ ছোট থাকে, এই যা। আমি মনে করি, ওটা চাইনিজদের স্বদেশ ও মাতৃভাষার প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।

অতঃপর আসে সাংহাইয়ের শপিং মলগুলোর কথা। ওগুলোর কথা আর কী বলব! বিরাট বিরাট শপিং মলগুলোয় ছোট-বড় নজরকাড়া দোকান, যেগুলোর শোকেসে শোভা পাচ্ছে দুনিয়ার সব নামিদামি ব্র্যান্ডের পারফিউম, পাদুকা, ব্যাগ, জুয়েলারি, পোশাক-পরিচ্ছদ, গৃহস্থালির আসবাবপত্র, টাইমপিস, খেলাধুলার সামগ্রী ও ইলেকট্রনিকের জিনিসপত্র। এস্থলে গুটিকয় ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে— গুচ্চি, চ্যানেল, ডিওর, ক্লার্ক, লরেল, ল্যান্ডর, ল্যানকম্ব, গারলেইন, জারা, এশওয়ার্থ, লাকস্ট, লিও, লেভিস, ক্যানউড, ওয়েজউড, ডাইনোসর, কেলভিন ক্লিন, ওমেগা, টিসট, ক্যাসিও, আডিডাস, গিভেন্সি ইত্যাদি। তবে এগুলোয় জিনিসপত্রের দাম? এক কথায় ম্যাংগো-পাবলিক তথা আমজনতার নাগালের বাইরে। আর কারা এগুলোয় কেনাকাটা করেন? আমাকে বলা হয়েছে বিত্তশালী দেশের পর্যটকরাও, বহুলাংশে কোটিপতি চাইনিজরা, যাদের সংখ্যা নাকি বর্তমানে অগুনতি। অবশ্য সাধারণত চাইনিজরা আজকাল সহজ ও সস্তায় অনলাইনে বাজার-সওদা করে থাকেন। চীনের ‘আলীবাবা’ শীর্ষক অনলাইন কোম্পানির মালিক জ্যাক মা, যে জীবনে ছিল অনেক কিছুতেই ফেল করা, কপর্দকহীন থেকে বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী।

বাকি রইল সাংহাই নগরীর রাস্তাঘাটের বর্ণনা। এমন তকতকে-ঝকঝকে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহুরে রাস্তা ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহরেও আমার চোখে পড়েনি। আর হবে না-ই বা কেন? লোকজনও সজাগ এবং সারাক্ষণই দেখি একদল লোক শিরদাঁড়া সোজা রেখে রাস্তার কাগজ ও ঝরাপাতা কুড়াচ্ছে। তা ছাড়া রাস্তার পাশেও ট্রাফিক আইল্যান্ডগুলোয় নানা রংবেরঙের গুল্ম ও ফুল ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়ানো মেপল ট্রির ও ভাড়ায় খাটানো সাইকেলের সারি সহজেই আমাদের অনভ্যস্ত চোখে ধরা পড়ে। রাস্তা দিয়ে হেঁটেছি আর আমার দেশের শহরগুলোর, বিশেষত রাজধানী শহর ঢাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা চিন্তা করে নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত বোধ করেছি। আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে সর্বাগ্রে ঢাকার সিটি করপোরেশনের মাথাভারী প্রশাসনকে সংকুচিত করে, খরচ বাঁচিয়ে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ করে দিতাম আর বর্তমানে এদের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত লোকেরা, যারা এদের কাছ থেকে ‘হপ্তা’ আদায় করা ছাড়া আর কিছুই করেন না, তাদের চাকরিচ্যুত করে নতুন সৎ লোক নিয়োগ দিতাম। আর? আর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা জানাতাম, আমাদের জিনে গণ্ডগোল, তিনি যেন মেহেরবানি করে আমাদের জিন পরিবর্তন করে দেন।

পরিশেষে, সার্বিক বিবেচনায় আমার মনে হয়েছে, একসময়ের আফিমখোর লোকেরা বর্তমানে অত্যন্ত কর্মঠ ও কুশলী জাতি। তা যে জাতি তাদের বর্ণমালার সর্বনিম্ন তিন হাজার সর্বোচ্চ আট হাজার অক্ষর স্মরণে রাখতে পারে, সে জাতি কর্মঠ ও কুশলী হবে না-ইবা কেন? আর স্রষ্টার কৃপায় বর্তমানে বাংলাদেশে বিত্তশালী লোকের অভাব নেই এবং এরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণও করে থাকেন। যেহেতু প্লেন থেকে শুরু করে সর্বত্র মুসলিম খাবার পাওয়া যায়, অতএব এরা একবার সাংহাই ঘুরে আসতে পারেন।

লেখক : রম্য লেখক ও ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর