বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন বছরে নতুন উদ্যমে পথচলা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নতুন বছরে নতুন উদ্যমে পথচলা

সময়ের স্রোতে বয়ে চলে মানুষের  জীবন। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার পাল তুলে জীবন নৌকাটি পৌঁছেছে ২০১৮-এর বন্দরে। ভাবতেই অবাক লাগে কতগুলো বছর ঝরে গেল জীবনের ঝাঁপি থেকে। সেই দুরন্ত শৈশব, অপ্রতিরোধ্য কৈশোর, মাথা না নোয়ানো দুঃসাহসিক যৌবনের মতো সোনালি অতীত আজ মনে পড়ছে খুব করে। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আঁতকে উঠলাম নিজের অজান্তে। চেহারায় বার্ধক্যের স্পষ্ট ছাপ পড়েছে। মৃত্যু উঁকি দিচ্ছে কালো চুলের আড়ালে থাকা সাদা চুলের ঝিলিকে। পরিবর্তনের এই ধারায় একদিন দেহখাঁচা ছেড়ে পাখি (রুহ) উড়াল দেবে জনমের বিদায় নিয়ে। সেই অনন্ত-অসীম সফরের জন্য প্রস্তুত হওয়ার এখনো সময় আছে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনে আল্লাহর ইবাদতের পানি ঢালতে হবে রুহুপাখির তৃষিত হৃদয়ে। তবেই দেহ-মন-আত্মায় ঝরবে প্রশান্তির ঝরনা। সেই ঝরনা স্রষ্টার সব সৃষ্টির মাঝে বর্ষিত হবে দয়া আর ভালোবাসার বৃষ্টি হয়ে। এ কথাই আল্লাহ রব্বুল আলামিন আল কোরআনে বলেছেন এভাবে— ‘সব সৃষ্টি ও জাতির মধ্যে তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ ও উপকারের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ইমান রাখবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)।

বিদায়ী বছরের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছর নতুন উদ্যমে পথ চলতে হবে সবাইকে। ভুলতে হবে বিদায়ী বছরের কষ্টগুলোও। মনের ভিতর কষ্ট পুষে সুন্দর জীবনযাপন করা যায় না। গেল বছরটা যে মুসলমানদের জন্য সুখকর ছিল তা আমি বলছি না। সত্যি বলতে বিশ্ব মুসলমানের জন্য বিগত বছরগুলো হতাশার কালো মেঘে ছেয়ে ছিল। পুবাকাশে নতুন বছরের রক্তিম সূর্য উঠেছে ঠিক, কিন্তু তা যে মুসলিম বিশ্বে কতটুকু রৌশনি ছড়াবে সে কথা সূর্যের স্রষ্টাই ভালো জানেন। আমরা শুধু জানি আশায় বুক বাঁধতে; কারণ আমাদের প্রভু হতাশ হতে নিষেধ করেছেন। কোরআনের ভাষায়, ‘বান্দা! তোমরা আল্লাহর অসীম দয়া থেকে নিরাশ হ’য়ো না।’ আমরা হতাশ নই। বিজয় একদিন আমাদের হবেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা হতাশ হ’য়ো না, চিন্তিতও হ’য়ো না, বিজয় তোমাদেরই হবে। যদি তোমরা সত্যিকারের মুমিন হতে পারো।’

পুরনো বছরের ভুলের ক্ষমা নিয়ে নতুন বছর শুরু করুক বান্দা, এটাই যেন আল্লাহর ইচ্ছা। নতুন বছর আসা মানেই নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাওয়া। প্রিয় পাঠক! একটি কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সময়ের সঙ্গে কোনো অমঙ্গল বা অকল্যাণের সংযোগ নেই। মঙ্গলামঙ্গল মানুষের কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত,  যেমন হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সময়কে দোষারোপ করো না, কাউকে গালমন্দ করো না কারণ আমিই মহাকাল, সময়ের নিয়ন্তা।’ তাই সময়কে দোষারোপ না করে সবসময়ই নিজেকে পরিবর্তন ও উন্নয়নের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করা উচিত। নদীর জীবনে যেমন জোয়ার-ভাটা আছে, মানুষের জীবনেও আছে, তাই মনের দিক থেকে কখনো দুর্বল হওয়া চলবে না, তাহলে কর্মক্ষেত্রেও সেই দুর্বলতা বিরাজ করবে সবসময়ই। বাধা-প্রতিবন্ধকতার চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজেকে আলোকিত করার স্বপ্ন দেখতে হবে নতুন বছরে। নিজেকে নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচর্যা করতে হবে জীবনের লালিত্য বৃদ্ধি পেতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনের অনুভূতি পরিবর্তন করা শিখতে হবে এবং মনের সৌন্দর্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, আমরা যেন আগামী দিনগুলোয় নিজেকে ভালোবাসার সঙ্গে দেশ, মাটি ও মানুষকেও ভালোবাসতে পারি। যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক সে মাঠে যেন আমরা নেশার হাট বসতে না দেখি। জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’ আমরা যেন এই বাংলাদেশের সৌন্দর্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে পারি নতুন বছর ২০১৮ সালে। হে প্রভু! নতুন বছর আমাদের জন্য সুখকর করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

www.selimazadi.com

 

সর্বশেষ খবর