শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন বছরে পুরনো রাজনীতির বাও-বাতাস

গোলাম মাওলা রনি

নতুন বছরে পুরনো রাজনীতির বাও-বাতাস

নতুন বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাত্ করে কোনো সুবাতাস বইবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। বরং বিগত চার বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-বিক্ষোভ সরকারের শেষ সময়ে এসে বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার নিজেও খুব ভালোভাবে জানে, তীরে এসেই সাধারণত নৌকাডুবি হয়। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বিশেষভাবে এরশাদ সরকারের পতন, ১/১১-এর আগে বিএনপির পতন, ১৯৯৬ সালে বিএনপির পরাজয় এবং ১/১১-এর সরকারগুলোর আকস্মিক বিদায়ের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো হঠাত্ করেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল। তাদের পতনের ঠিক সপ্তাহখানেক আগেও কারও পক্ষে অনুমান করা সম্ভব হয়নি, কত বড় বিপর্যয় পর্দার আড়ালে ধূমায়িত হয়েছিল। বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল অতীতের সেসব ঘটনা-দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেরা যেমন অতি সতর্কতার সঙ্গে পা টিপে টিপে এগোচ্ছে, তেমনি সরকারের বিরোধী পক্ষগুলোও আকস্মিক অথবা অলৌকিক কিছু ঘটার আশায় সকাল-বিকাল মুখে ঘি মাখা শুরু করে দিয়েছে।

দেশের পত্রপত্রিকাগুলো ২০১৮ সালকে নির্বাচনের বছর বলে অভিহিত করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে অবিরতভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সবশেষে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে সরকারি দলকে অবশ্যই তাদের নিজস্ব জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমী নির্বাচনী কৌশল অবলম্বন করে জয়ী হতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন যে সম্ভব নয়, তা সরকারি দলের সবাই মোটামুটি টের পেয়ে গেছেন। অন্যদিকে, সরকারপ্রধান বার বার দলীয় সভায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, তিনি আরেকটি ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন চান না। কাজেই নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে জয়লাভ করার জন্য প্রয়োজনীয় গণসংযোগ ও জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ভালো ভালো কাজ করার জন্য তিনি নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

নতুন বছরে সরকারের প্রধান বিপদ ও বিপত্তি হবে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে বন্ধুত্ব বজায় রাখা অথবা বন্ধু নির্বাচন। সরকারের শেষ সময়ে এসে সাধারণত সুবিধাভোগীরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে আত্মপ্রবঞ্চনা শুরু করে। কেউ কেউ মোনাফেক হয়ে পড়ে, কেউ আগাম গা-ঢাকা দেয়, আবার কেউ কেউ এমন সাধু-সজ্জন ও নিরপেক্ষ হয়ে পড়েন, যা দেখে কেউ হয়তো ভুলেও চিন্তা করবেন না যে, লোকটির সঙ্গে সরকারের কোনোকালে কোনো সুসম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেল, সচিবালয়ে মাত্র চারজন সচিব রয়েছেন, যারা যে কোনো মূল্যে সরকারের স্বার্থে কাজ করতে বদ্ধপরিকর। বাকিরা সবাই নিরপেক্ষ হয়ে গেছেন। পত্রিকার প্রতিবেদনমতে, সরকার সমর্থক চার সচিব শত চেষ্টা করেও বাকি সচিবদের সরকারের পক্ষে কাজ করানোর ব্যাপারে রাজি করাতে পারছেন না।

সরকার গত চারটি বছর মূলত আমলানির্ভর রাজনীতি করেছে। আমলাদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দানের পাশাপাশি তাদের অনেকের ব্যক্তিগত এবং প্রায় সবার গোষ্ঠীগত দাবি-দাওয়া সরকার অকৃপণভাবে পূরণ করে দিয়েছে। কিন্তু কোনো কিছু শেষ অবধি সরকারের জন্য সুবিধাজনক বিবেচিত না হয়ে বরং ক্ষেত্রবিশেষ বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। যারা অতিরিক্ত দালালি করেছেন বা বেশি বেশি সুযোগ নিয়েছেন, তারা নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনে সরকারকে বিপদে ফেলতেও কুণ্ঠিত হবেন না। অন্যদিকে, বেশি সুবিধাভোগী বনাম কম সুবিধাভোগীদের রশি টানাটানিতে সরকার যে কোনো সময় ফেঁসে যেতে পারে।

সরকার তার সুসময়গুলো হয়তো হূদয়ঙ্গম করেনি যে, তাদের প্রকৃত শক্তি হলো রাজনৈতিক। কাজেই রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি যত পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী হবে, ততই সরকার নিরাপদে থাকতে পারবে। সরকার হয়তো একটি নির্মম বাস্তবতা জানা সত্ত্বেও সুশিক্ষিত আমলাতন্ত্রের তেলবাজির কারণে তা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। সেই নির্মম বাস্তবতা হলো, বেশির ভাগ আমলা রাজনীতিবিদদের নিজেদের তুলনায় হীনতর, অযোগ্য ও অদক্ষ মনে করেন। কিছু আমলা রাজনীতিবিদদের রীতিমতো ঘৃণা করেন। তারা অত্যন্ত সুকৌশলে যুগ-যুগান্তর ধরে শীর্ষ ক্ষমতাধর এমপি, মন্ত্রী, সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে চরম তেলবাজি করে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক সংযোগগুলো একের পর এক বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পদ-পদবিতে নিজেদের পছন্দমতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে বসিয়ে দেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত চার বছরে আমলাতন্ত্র দ্বারা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত হয়েছে, তা আমি বলতে পারব না। তবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের আরেকটি রিপোর্টে পুলিশ প্রশাসন সম্পর্কে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর ও উদ্বেগজনক। পত্রিকাটি জানিয়েছে, পুলিশ প্রশাসনে বিএনপি ও জামায়াতের কালো ছায়া আড়ালে-আবডালে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। সচিবালয়, পুলিশ ছাড়াও রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের প্রভাবশালী অংশটি অতিমাত্রায় এমনভাবে আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে, যেখান থেকে চটজলদি রাজনীতির মাঠে-ময়দানের হতোদ্যম ও ম্রিয়মাণ হয়ে পড়া কর্মীদের কাছে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।

ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিকরা বিগত বছরগুলোয় সরকার থেকে নজিরবিহীন সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অমূল্যায়ন লাভ করেছেন। সময়ের বিবর্তনে তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধা গৌণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা এখন সুযোগ বুঝে সরকারকে নতুনভাবে চাপে ফেলবেন এবং কেউ কেউ সরকারকে ত্যাগ করে বিরোধী শিবিরে চলে যাবেন— এমন সম্ভাবনাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিজ দলের অভ্যন্তরেও সরকারের জন্য নানামুখী সমস্যা, চক্রান্ত ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বাহারি উপাদান গিজগিজ করছে। ফলে নতুন বছরে এসে ক্ষমতার চেয়ারটি খুব বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়বে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

সরকারের জন্য আপাতদৃষ্টিতে বিরোধী দলসমূহ কোনো সমস্যা নয়। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাস কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো চাপ এ মুহূর্তে সরকারকে বিব্রত করছে না। দেশের মুদ্রাবাজার, শেয়ারবাজার, খাদ্যের জোগান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ নিয়েও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বিশ্বাসের সংকট ও আস্থার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কারণে সরকার এক ধরনের অস্থিরতায় ভুগছে। অন্যদিকে, একটি বিতর্কিত নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচন, সরকার ও তথাকথিত বিরোধী দল আমদুধের মতো একত্রে মিলেমিশে সরকার পরিচালনার প্রথাবিরুদ্ধ নজির সৃষ্টির কারণে দেশ-বিদেশের নানা খোটা, কটূক্তি এবং ইমেজ সংকট সরকার ও তাদের তাঁবেদার সহযোগীদের হামেশা নানাভাবে বিব্রত হতে হচ্ছে। ফলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে আসার জন্য যে আত্মবিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি আস্থা থাকা দরকার, তা যে তাদের নেই— সে কথা বোঝার জন্য খুব বেশি পাণ্ডিত্যের দরকার নেই।

আলোচনার এ পর্যায়ে এবার বিরোধী দলগুলোর সম্ভাব্য রাজনীতির হালহকিকত নিয়ে আলোচনা করা যাক। প্রথমেই বিএনপি-জামায়াত জোটের কথা বলি। নতুন বছরে দেশবাসীর কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, বিএনপি অবশ্যই আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু একটি বিষয় এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না যে, বিএনপি কি সরকারের বর্তমান তাঁবেদারদের মতো নতুন একটি টিম হিসেবে নির্বাচনে সংযুক্ত হবে, নাকি দলটি তার আপন ঐতিহ্য অনুসারে লড়াকুর ভূমিকা নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে! বিএনপি সম্পর্কে এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মূল কারণ হলো, জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের শীতলতা ও উষ্ণতার ব্যারোমিটারের ঘন ঘন ওঠানামা, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। এ ছাড়া নিজ দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার গতিবিধি, কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড নিয়েও সর্বমহলে রয়েছে নানামুখী সন্দেহ ও অবিশ্বাস। বিএনপি-জামায়াতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি এবং লক্ষ্যহীন অভিযাত্রার কারণে দল দুটির নেতা-কর্মীদের পারস্পরিক রাজনৈতিক সম্পর্ক সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের মতো হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকত তাহলে তারাও হয়তো আমলানির্ভর হয়ে পড়ত। কারণ, বিরোধী দলে থেকে যতটা আমলানির্ভর হওয়া সম্ভব ঠিক ততটাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। এর বাইরে তারেক রহমানপন্থি তরুণ তুর্কি ও বেগম জিয়াপন্থি প্রবীণ রাজনীতিবিদদের দুটি ধারা ছাড়াও আরও দুটি নতুন ধারা বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে। একটি গ্রুপ নিজেদের উদারপন্থি বলে মনে করে। তাদের মতে, অতীতে যারা বিএনপি থেকে বেরিয়ে গেছে তাদের সবাইকে দলে ফিরিয়ে এনে দলকে শক্তিশালী করা দরকার। এ ছাড়া কিছুটা ভিন্নমতের হলেও যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন রয়েছে, সেসব দলকে দ্রুত নিজেদের জোটে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলে উদারবাদীরা মনে করেন।

উপরোক্ত গ্রুপগুলোর মধ্যে আরেকটি গ্রুপের নাম সুবিধাবাদী গ্রুপ। এরা দলের সুসময়গুলোয় সর্বাধিক বৈধ-অবৈধ কায়দায় লুটেছে। তখন সরকারকে ম্যানেজ করে লন্ডন, আমেরিকা, দুবাই, মক্কা-মদিনায় অহরহ সফর করে। তারা দিনে বিএনপি করে আর রাতে শুরু করে সরকারি লীগ। রাজনৈতিক আকাশে বিএনপির জন্য কোনো অশুভ সংকেত আন্দাজ করা মাত্র ওরা লাপাত্তা হয়ে যায়। আবার সামান্য দখিনা বাতাস দেখলে কোত্থেকে যেন হঠাত্ করে উদিত হয়ে সামনের সারির আসনগুলো দখল করে বসে পড়ে। এরা বিএনপি নেতৃত্বকে নানা সময়ে মোনাফেকির মাধ্যমে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে এবং সময় ও সুযোগমতো প্রতিপক্ষের কাছে দলকে বিক্রি করে নিজেদের ফায়দা উসুলের চেষ্টা চালায়। গত চার বছরে বিএনপির এই সুবিধাবাদী গ্রুপটির আকার, আয়তন, শক্তিমত্তা ও প্রভাব ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। চলতি বছরে এসে তারা নিঃসন্দেহে আরও শক্তিশালী আকার ধারণ করবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক জোট হৈহৈ করে হচ্ছে না, অথবা হয়ে গিয়েও এগোতে পারছে না। কারণ, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সফলতা ও ব্যর্থতা টার্গেট করে এগোতে চাচ্ছে। তাদের মধ্যে এক দল মনে করছে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং বিএনপি শক্তভাবে তুমুল প্রতিযোগিতা করবে। সে ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী মনোভাবের কারণে বিএনপির শত দুর্বলতা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে জিতে যেতে পারে। এ সম্ভাবনা মাথায় রেখে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করার জন্য নিজেরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। অন্যদিকে, আরেক গ্রুপ মনে করছে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো আগামী দিনে এমন কিছু কটূক্তি করবেন, যা শুনে বেগম খালেদা জিয়া মাথা গরম করে বলবেন, ‘নাঃ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না।’ সেই পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সরকার চাইবে ছোট ছোট দলগুলো ছোট আকারে অথবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে আসুক। তারা এই সুযোগ গ্রহণ করে সম্মিলিত বিরোধী মোর্চার মাধ্যমে সংসদে বিরোধী দলের আসনগুলো দখল করে ফেলবেন।

রাজনীতির উল্লিখিত হিসাব-নিকাশ ও সম্ভাব্য মেরুকরণ বেশ পুরনো। নতুন বছরে সেই পুরনো কাহিনীগুলোর চিত্রনাট্যই রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে প্রদর্শিত হবে। বিগত বছরে পুরনো কাহিনীগুলো সাড়া ফেলতে না পারলেও নতুন বছরে নতুন কিছু ঘটেও যেতে পারে। কারণ প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রতিটি সৃষ্টি, ঘটনা ও কাহিনীর মধ্যে পরস্পরকে আকর্ষণকারী কতগুলো চৌম্বকশক্তি থাকে। মানবদেহ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সর্বত্র রয়েছে একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে রাখার মহাকর্ষ অথবা মাধ্যাকর্ষণের শক্তি। রাজনীতির ক্ষেত্রে কতগুলো নিয়ামক চৌম্বকশক্তি রয়েছে, যার কারণে নেতা-কর্মীরা দলের জন্য নিজের প্রাণটি পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে দেয়। রাজনীতির চৌম্বকশক্তি হ্রাস পেলে প্রাণ দেওয়া বা প্রাণ নেওয়ার লোক পাওয়া যায় না। ফলে শুরু হয়ে যায় অরাজকতা যার পরিণতিতে ক্ষমতা লাভ করে অরাজনৈতিক শক্তি।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইদানীংকালে না আছে অভ্যন্তরীণ চৌম্বকশক্তি বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, কিংবা না আছে কোনো মহাকর্ষের শক্তি। দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা, শ্রদ্ধাবোধ, মায়াদয়া, বিনয়-ভদ্রতা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তা দেশবাসী খুব ভালো করেই জানে। ফলে অরাজক পরিস্থিতিতে কী পরিমাণ জুলুম-অত্যাচার যে হতে পারে, সেই শঙ্কার সর্বোচ্চ মাত্রার ভয় হূদয়ে ধারণ করেই নববর্ষের রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হবে। ভয়ার্ত হূদয়ের মানুষ সাধারণত দুটি কর্ম করতে পারে— প্রথমত লম্ফঝম্ফ এবং দ্বিতীয়ত পলায়ন। কাজেই আগামী দিনগুলোয় ভয় পেয়ে কে লাফ মারবে আর সেই লাফ দেখে কে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালাবে, তা দেখার জন্যই নিরীহ ও গোবেচারা জনগণ অধীর আগ্রহ নিয়ে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

 

সর্বশেষ খবর