মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

জৌনপুর

ফিরোজ শাহ তুঘলক তার চাচাতো ভাই ও একনিষ্ঠ সমর্থক মুহাম্মদ জুনা খান তথা মুহাম্মদ তুঘলকের স্মৃতিরক্ষাকল্পে গোমতী নদীর তীরে জৌনপুর নগর স্থাপন করেন (১৩৬০ খ্রি.)। ১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দে ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পর থেকে মাহমুদ তুঘলকের আমলে খাজা জাহানের ক্ষমতা লাভ পর্যন্ত জৌনপুরের ইতিহাসে কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি। খাজা জাহানের প্রকৃত নাম সরওয়ার। তিনি স্বীয় মেধাবলে রাজ্যে উচ্চপদ লাভ করেন। ১৩৮১ খ্রিস্টাব্দে তাকে ‘খাজা জাহান’ উপাধি দিয়ে উজিরের পদে উন্নীত করা হয়। এর কিছু দিন পরে দেশে গোলযোগ শুরু হলে তিনি মাহমুদ তুঘলকের কাছ থেকে ‘মালিক-উশ-শারক’ (পূর্বদেশের মালিক) উপাধিপ্রাপ্ত হয়ে জৌনপুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।

তিনি এতোয়া, কইল ও কনৌজের বিদ্রোহ দমন করেন এবং কনৌজ, কারা অযোধ্যা, সান্দিলা, দালমৌ, বাহরেইচ, বিহার ও ত্রিহুত জয় করে তার আয়ত্তাধীনে নিয়ে আসেন। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হিন্দু জমিদারদের তার কর্তৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য করেন। আমির তৈমুরের আক্রমণের ফলে ভারতে যে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় সে সুযোগে খাজা জাহান নিজেকে স্বাধীন শাসক বলে ঘোষণা করেন এবং ‘আতাবাক-ই-আজম’ উপাধি গ্রহণ করেন। এভাবে জৌনপুরে শারকি বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর তার পালিত পুত্র মালিক করনফুল ‘মুবারক শাহ’ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

অতঃপর সাবেক সুলতানের ছোট ভাই ইবরাহিম শাহ্ শারকি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি এই বংশের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য সুলতান ছিলেন। ইকবাল খানের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ তুঘলক দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করলে ইবরাহিম শাহ্ সেই সুযোগে কনৌজ অধিকার করেন। এই কৃতকার্যের ফলে ইবরাহিম শাহ তার সেনাদের দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য সাহসী হয়ে ওঠেন। কিন্তু গুজরাটের মুজাফ্ফর শাহের আগমন সংবাদ পেয়ে তিনি সম্বল ও বিজিত জেলাগুলো পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। মুসলমানদের প্রতি অত্যাচারী রাজা গণেশের শাস্তিবিধানের জন্য তিনি বাংলা আক্রমণ করেন। রাজা গণেশ বাধা দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং নিজের ছেলেকে ইসলাম গ্রহণ করতে অনুমতি দান করেন। ইবরাহিম শাহ নিজে সংস্কৃতিমান ছিলেন এবং শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার রাজত্বকালে বহু মক্তব ও মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছিল এবং তিনি মুক্তহস্তে শিক্ষাবৃত্তি ও অর্থ দান করতেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর