শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডাকসু নির্বাচন

হাই কোর্টের রায় অভিনন্দনযোগ্য

ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার এ রায় দেন। ২৫ শিক্ষার্থীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত এই স্মরণীয় রায় দিয়েছে। স্মর্তব্য, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিষয়টি কালো চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে প্রায় ২৮ বছর ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তার আগে সামরিক শাসকদের আমলেও ডাকসুসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের নজির রয়েছে। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ সামরিকতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নতুন সোপানে পা রাখলেও অদৃশ্য কারণে রুদ্ধ হয়ে যায় ছাত্রসংসদ নির্বাচন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে যে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে তাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে কথিত গণতান্ত্রিক শাসনামলেই কৃতঘ্নতার পরিচয় দেওয়া হয়। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্র চর্চায় প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ডাকসুসহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রসংসদ নির্বাচন শিক্ষাঙ্গনে যেমন গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করত তেমন পরিশীলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টিতে অবদান রাখত। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় নেতৃত্বে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধ নেতৃত্বের বদলে টাকাওয়ালারা রাজনৈতিক অঙ্গনে উড়ে এসে জুড়ে বসার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানার্জনের মূল ধারণাও উপেক্ষিত হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। জ্ঞানার্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সহযোগিতায় পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও তা চলছে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমতা কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর সিনেট। আইন অনুযায়ী সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও বছরের পর বছর ধরে সেখানে শূন্যতা বিরাজ করছে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় পেশিশক্তির দাপটও অনুভূত হচ্ছে ছাত্ররাজনীতিতে।  রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উগ্রবাদের ধারক-বাহকরাই লাভবান হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে হাই কোর্টের রায় অভিনন্দনযোগ্য।  আমরা আশা করব ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে যে অচলাবস্থা রয়েছে তা কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর