সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বীরশ্রেষ্ঠ রউফের স্মৃতিস্তম্ভ যেভাবে নির্মিত হলো

মেজর জিল্লুর রহমান (অব.)

বীরশ্রেষ্ঠ রউফের স্মৃতিস্তম্ভ যেভাবে নির্মিত হলো

ফেসবুকে আমার এক সহকর্মী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিস্তম্ভের ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে আমি লিখেছি এটা আমার উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে। স্বাধীন দেশের মেজর হয়েছি, কল্পনাতীত সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি, দেশে-বিদেশে মর্যাদা নিয়ে বুক ফুলিয়ে মেজর পরিচয় দিই। উন্নত দেশের মেজর আমরাও মেজর একই সম্মান সম-প্রটোকল উপভোগ করি। পরাধীন আমলে এত বাঙালি অফিসার সেনাবাহিনীতে স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। যাদের রক্তে, যাদের ত্যাগে, যাদের সম্ভ্রমের দামে কেনা স্বাধীনতা, যাদের রক্তে অর্জন এই স্বাধীনতা তাদের প্রতি মন চায় জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিই। মন চায় বলতে you have given your today, for our tomorrow. কী মহৎ সন্তান বাংলা মা জন্ম দিয়ে জাতিকে ধন্য করেছেন। একজন বীর যোদ্ধা মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মরণপণ লড়াই করে। দেহ শীতল হয়ে আসে, ধমনি স্তিমিত হয়ে আসে, শরীর দিয়ে রক্ত ঝরে, শ্বাস-প্রশ্বাস স্ফীত হয়ে যায়, দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আবার দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে বীরের মতো হাতিয়ার তুলে শত্রুর ওপর গুলি চালায়। সম্মুখযুদ্ধে কোনো একসময় সীমান্তে এভাবে লড়াকু সৈনিক দেশের তরে শাহাদাতবরণ করে। তাদের আত্মা বলে, ‘আমার এ রক্ত দিয়ে মাতৃভূমির সীমান্তে দাগ এঁকে দাও। যদি কোনো শত্রু আমার পবিত্র জন্মভূমিতে আসে সে যেন আমার রক্তের ওপর দিয়ে আসে।’ এমন সব কালজয়ী বীর এ বাংলার ঘরে জন্মেছিল। বিশ্ববাসী তা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রাণ ভরে দেখেছে। তাদের ত্যাগের উপহার আমার এ স্বাধীনতা।

সামরিক চাকরি জীবনে ১৯৯৫ সালের দিকে আমি বিডিআর রাঙামাটি সেক্টরে জি টু ২ হয়ে বদলি হই। একদিন বর্ডার এলাকায় মারিসশা ব্যাটালিয়ন পরিদর্শন করতে যাত্রা করি স্পিডবোটে। রাঙামাটি সেক্টরে একটা নৌশাখা আছে। স্পিডবোট ড্রাইভার ছিল ইউসুফ। ছোটখাটো মানুষ, মানসিক গতি খুব। খর্বাকৃতি দেহ, গায়ের রং আফ্রিকানদের মতো কালো। মারিসশা থেকে ফেরার সময় আমাকে জানাল, স্যার! বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফের কবর এখানে। তার কথা শুনে আমার বুকের মধ্যে সৈনিক হৃদয়ের আকুতি মুচড়ে উঠল তার সমাধিস্থান দেখার জন্য। বললাম, চল আমি এই বীরের কবর জিয়ারত না করে যাব না। স্কটের এক জেসিও বলল, স্যার! সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আজ না গিয়ে কাল সকালে যদি আমরা আসি তাতে নিরাপত্তার ঝুঁকিটা কম হবে। আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো সাহেব! তিনি যেদিন জীবন দিয়েছিলেন আমাদের মতো নিরীহ মানুষকে হেফাজত করতে সেদিন কি তিনি তার নিরাপত্তার কথা ভেবে পালিয়ে ছিলেন, না শত্রুর বুলেট বীরের মতো বুকে নিয়ে এই বাংলাকে মুক্ত করেছিলেন।

ওয়ারেন্ট অফিসার আবেগী হয়ে কণ্ঠ সরব করে বললেন, চলেন স্যার। স্পিডবোট নোঙর করেই ড্রাইভার ইউসুফ দৌড়ে কবরের কাছে ছুটে গেল। কবরের ওপর পুরনো কিছু পাহাড়ি গাছের শুকনা পত্রপল্লব। কিছু মৃত-অর্ধ মৃত জংলি গাছ এই বীর সেনানীর কবরের ওপর দণ্ডায়মান হয়ে সালাম জানাচ্ছে। কবরটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। সব সৈনিক এক কাতারে আমরা কবর জিয়ারত করলাম।

ফরিদপুরের কৃতীসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ। পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর অবস্থান সাতটি স্পিডবোট ও দুটি লঞ্চ নিয়ে ঘিরে ফেলে। পাকিদের মিশন ছিল রাঙামাটি থেকে মহলছড়ি পর্যন্ত পানিপথ উন্মুক্ত রাখা। মুক্তিবাহিনী এই পানিপথের দুই পাড়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। পাকিস্তানিরা হেভি গুলিবর্ষণ করে প্রায় এক কোম্পানি সৈনিক আলাদা করে ফেলে। ল্যান্স নায়েক রউফ কোম্পানির আসন্ন বিপদ অনুধাবন করে তার ট্রেঞ্চ থেকে বের হয়ে সম্মুখে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানিদের ওপর উপর্যুপরি গুলি ছুড়তে থাকেন। এ অবস্থায় পাকিস্তানিরা একটু পিছু হটে আবার ভারি গুলি বর্ষণ করে। যুদ্ধের মধ্যে হঠাৎ এক মর্টার শেল তার পবিত্র দেহ ছিন্নভিন্ন করে, সেখানেই শহীদ হন। তার এই অসীম সাহসী যুদ্ধের জন্য কোম্পানির অন্য সৈনিকদের জীবন রক্ষা পায়।

ভাবতে লাগলাম এত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হয়, মুক্তিযুদ্ধ পুঁজি করে রাজনীতি হয়, ক্ষমতার অদলবদল হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জিকির গাইতে গাইতে অনেকের জীবন ওষ্ঠাগত অথচ এই বীরশ্রেষ্ঠের খবর কেউ রাখে না। কোথায় কোন জঙ্গলে অভিমানে ঘুমিয়ে আছেন চিরনিদ্রায়। বীরশ্রেষ্ঠের যদি এই দশা হয় অন্যদের কী অবস্থা। রাঙামাটির নানিয়ারচরে মহলছড়ি থানাধীন বুড়ির ঘাটে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের সমাধি। লেকের সঙ্গে ছোট ছোট টিলাজাতীয় পাহাড়। এমন একটা টিলার জঙ্গলে ছিল তার সমাধি। কোনো মানুষ সেখানে সাধারণত যায় না। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, এই বীরের প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলা আমার মনের মধ্যে এক হার না মানা জেদ তৈরি করে। বোটে ফেরার পথে সুবেদার সাহেব অশ্রুসিক্ত হয়ে বললেন, স্যার! আপনার মোনাজাতের দোয়ায় আমরা সবাই কেঁদেছি। বিডিআর সৈনিক হয়ে খুব অন্যরকম গর্ববোধ করছি আজ। অফিসে এসে পরদিন সকালে প্রথমেই একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব তৈরি করলাম। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল মতিন, অফিসে এসে কিছু সময় কোরআন শরিফ পড়তেন, তারপর দিনের কাজ শুরু করতেন। ওইদিন প্রথমে স্যারের মন-মেজাজ ভালো দেখে আমার প্রস্তাবিত প্রজেক্ট ফাইল নিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের অবহেলায় শায়িত থাকার করুণ অবস্থা বর্ণনা করে তুলে ধরলাম। বললাম, স্যার! আমরা এখানে থাকব না, এমনকি চাকরিতে চিরদিন থাকব না, কিন্তু এমন মহৎ কাজ করার সুযোগ জীবনে আর নাও পেতে পারি। আপনি অনুমতি দিলে আমি প্রসেস করি। স্যার বললেন, খুব মহৎ উদ্যোগ, করতে পারলে খুব ভালো হতো, ইতিহাস হতো। কিন্তু ডিজি বিডিআর ভীষণ কৃপণ মানসিকতার মানুষ। অর্থ খরচ দেখলে তার মাথা গরম হয়ে যায়। হাজার প্রশ্ন করা শুরু করবেন। অফিসের সব কাজ বাদ দিয়ে দিনে ডজন ডজন চিঠি লিখতে হবে তাকে বোঝাতে, তার প্রশ্নের উত্তর দিতে। ঠিক আছে ব্যবস্থা কর— Take up a case with BDR HQ. আমি ফাইল সামনে দিয়ে বললাম, স্যার! আমি একটা ড্রাফট রেডি করেছি একটু দেখে দিন। চোখ বুলিয়ে দু-তিনটি শব্দ সংশোধন করে হাস্যচিত্তে নিজে যত্নের সঙ্গে ফাইলটি আমার হাতে দিলেন। মনে হলো তিনি আমার উদ্যোগে খুশি হয়েছেন।

আমার এক বন্ধু ছিল মইনুল ইসলাম জুয়েল, বনিয়াদি পরিবারের সন্তান ঢাকার রামপুরায় বাড়ি। তার ছোট ভাই এখানে কমিশনার ছিল। আদি ধনী মানুষ। বিডিআরে ৪০টি বাটালিয়নে ঠিকাদারি করত, খাদ্য সরবরাহ করত। তার ম্যানেজারকে বলে তাকে রাঙামাটি হাজির করি। তাকে এই প্রজেক্টে সহযোগিতার আহ্বান জানাই। সে সানন্দে এই উদ্যোগের অংশীদার হতে চায় অর্থ দিয়ে এবং ডিজাইনটা তার নিজ টাকায় তৈরি করে এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান নিবেদন করে ধন্য হতে চায়। বিডিআরে তার সব ব্যবসার অংশীদার ও তদারককারী ছিলেন রাঙামাটির জনাব কামাল। তিনিও অনেক আগ্রহ নিলেন এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে। তিনি অনেক খাটাখাটি করেছেন এই প্রজেক্ট নিয়ে। ঢাকা থেকে আর্কিটেক্ট নিয়ে সরেজমিন আমি ও কমান্ডার পরিদর্শন করেছি। সেক্টর কমান্ডার এই বীরের কবরের কাছে এসেই শিশুর মতো হাউমাউ করে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। কবর জিয়ারতে অনেক বড় মোনাজাত করলেন বুক ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, তখন আমরা সবাই কাঁদলাম কমান্ডারের সঙ্গে। কমান্ডারের আবেগ, বিচলতা দেখে আমার মনে ভাবের উদ্রেক করল, এই বীর তার অধিনায়কত্বের ইগোতে চরম আঘাত করেছেন। মনে হলো তার আত্মা প্রশ্ন করেছে তুমি কেমন কমান্ডার, তোমার অপারেশন এরিয়ায় একজন দুঃসাহসিক যোদ্ধা, জাতীয় বীরের এমন বেহাল অবস্থায় থাকা তোমার জন্য গ্লানিকর, অমর্যাদার নয় কি। আমার প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন দেশের কমান্ডার তোমরা, আমাদের প্রতি কি কোনো দায়িত্ব নেই তোমাদের? বোটে উঠে কমান্ডার বললেন, কত অভাগা জাতি আমরা! মনটা বিষাদে ব্যথিত! এ কী দেখলাম! একজন বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার এই অবহেলা কিছুতেই সহ্য হয় না। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, যত দ্রুত সম্ভব এ কাজ শেষ করার ব্যবস্থা কর। আমার মনে হলো মহৎ কাজে বেশি বাধা, কিন্তু এ কাজ আর কেউ থামাতে পারবে না।

আমার সেক্টর উপ-অধিনায়ক ছিলেন মেজর বারেক সিকদার, আমাকে খুব আদর করতেন। মেজর বারেক সিকদারের সেনা অফিসারের যত না গুণাগুণ তার চেয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুখোড়, রাজনীতিতে পাকা মুনশিয়ানা। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, আওয়ামী লীগের সব মন্ত্রীর সঙ্গে স্যারের ভাই ভাই, দোস্তি দোস্তি ভাব। দিনে দু-চার জন মন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে তার কথা না বললে পেটের ভাত হজম হতো না। কমান্ডারও ব্যঙ্গ করে বলতেন ও তো সেনা অফিসার নয়, রাজনৈতিক নেতা। আমাদের কারও পরিবার কাছে থাকত না। তাই সারাক্ষণ একসঙ্গে রাতে দিনে মিলেমিশে থাকতাম। মেজর বারেক সিকদারকে বললাম, স্যার! বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতির জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি, আপনার সহযোগিতা চাই। তিনি খুশিতে আবেগে চোখের কালো চশমা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ছোট ভাই! তুমি আমার বুকে আসো। চেয়ার থেকে উঠে আমার কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণ মমতা দিলেন। বললেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এ কাজের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লেগে যাব। তোমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমি সব করব। প্রয়োজনে আপার কাছে (প্রধানমন্ত্রীর) যাব। মেজর বারেক সিকদার দিনের অনেক সময় আর্কিটেক্ট, ঠিকাদার, প্ল্যান সংযোজন-বিয়োজন, কখনো নিজে নকশাবিদ হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাতেন। স্মৃতিস্তম্ভে একটা রাইফেলের ছবি দেখা যায়, এটা তার মাথা থেকে এসেছে। নির্মাণস্থানে ব্যাঘাত ছাড়া কার্য সম্পাদনের জন্য এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার রাজনৈতিক অতীত থাকায় অনেক জটিল বিষয় তিনি সহজ করতে পারতেন। অফিশিয়াল চিঠির পাশাপাশি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মতিন টেলিফোনে সদর দফতরের সব অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিজিকে নীতিগতভাবে সম্মত করান।

বিডিআর সদর দফতর স্মৃতিসৌধের যে বাজেট তৈরি করল, তাতে কোনো ঠিকাদার কাজ করতে আগ্রহী নয়। ফলে আইনি জটিলতা এড়িয়ে সরকারি নীতি মেনে কীভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যায় সেটাই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিল। কমান্ডার খুব দেমাগি মানুষ ছিলেন, আমাকে, মেজর বারেক সিকদার ও এডি মজিদকে ডেকে বললেন, তারা (সদর) যা দেয় আর আমরা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করে স্মৃতিসৌধ করতে পারি কিনা দেখ। এডি মজিদ বিডিআরের একজন সৎ অফিসার। কোনো হারাম সারা জীবন পেটে ঢোকাননি। বরিশালের মানুষ, পরহেজগার। আমি তার সততাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সারা জীবন স্মরণ করব। সবাই জানালাম এভাবে সম্ভব নয়। সমস্যা হলো দুর্গম এলাকা, সেখানে যেতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। তার ওপর শান্তিবাহিনীসহ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে চাঁদা না দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারে না। চাঁদা না দিলে জিম্মি করে আরও বেশি টাকা আদায় করবে। অনেক লেখালেখি করার পর সিদ্ধান্ত হলো, বিশেষ এলাকার বিশেষ বিবেচনায় বাজেট বাড়ানো হবে। সেক্টরের নিজস্ব তহবিল আর বিডিআর সদর দফতরের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণকাজ চলবে। এটুকু সিদ্ধান্তে আসতে কয়েক রিম কাগজের চিঠি লেখালেখি করতে হয়েছে। এই প্রজেক্টে বড় ভূমিকা রেখেছেন দয়াল চাকমা। তার বাড়ি এই স্মৃতিসৌধের পেছনে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা অপারেশন শেষে মহলছড়ি যাওয়ার পর তিনি বাড়ি থেকে এসে মুন্সী আবদুর রউফের নিথর দেহ বাংকারের পাশে মাটিচাপা দিয়েছিলেন। এই নির্মাণের লে-আউট খননের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। তার বাংকারে অনেক গুলি পাওয়া যায়। ৭.৬২ পিএফ গুলি। মনে হয় রাইফেলের গুলি। সেই গুলি মেজর বারেক সিকদারের কাছে রাখা আছে, হয়তো তিনি মিউজিয়ামে দেবেন কোনো একদিন। মহৎ কাজে অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তার প্রমাণ শান্তিবাহিনীসহ সব দল উৎপাত না করে এ কাজে সহযোগিতা করেছে। কোনো চাঁদা ছাড়াই ঠিকাদার কাজ সমাধা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অনেকের কাছে সস্তা বুলি হয়ে উঠেছে। কতজন জানে এসব উনুদ্ঘাটিত যুদ্ধকাহিনী। শহীদদের পরিবারের খোঁজখবর বা কে রাখে। শুধু বিশেষ দিনে খোঁজ নিলেই কি তাদের আত্মা শান্তি পাবে? বীরশ্রেষ্ঠ রউফরা শুধু দিয়ে গেছেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা ছিল ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। এখন আমরা যারা আছি তাদের চেতনা ভোগের সমুদ্রে ভাসছে না তো?

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর