শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভূমিকা

মুফতি মাওলানা মিযানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক আর যিনি তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-কে সমস্ত কল্যাণ দান করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘(হে নবী)! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমস্ত কল্যাণ দান করেছি।’ (সূরা কাওসার : ১)। মানব জাতির সর্বস্তরে কল্যাণ আনয়ন এবং সব অকল্যাণ দূরীভূত করতে প্রিয় নবী (সা.) আগমন করেছেন। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবনসহ মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয় নবী (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর জীবনাদর্শ। যেমন মানবাধিকারের কথা যদি বলি, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মাতৃদুগ্ধ পান করার সময় হজরত হালিমাতুস সাদিয়ার একটি স্তন থেকে দুধ গ্রহণ করে অন্যটি থেকে গ্রহণ না করে তাঁর আরেকজন দুধভাইয়ের অধিকার সংরক্ষণ করেন। এমনিভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিধান নিয়ে এসেছেন। যেমন,

১. অন্ন : পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল কোনো প্রাণী নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন।’ (সূরা হুদ : ৬)।

২. বস্ত্র : আল কোরআনের ঘোষণা : ‘হে বনি আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র ও পরহেজগারির পোশাক। এটি সর্বোত্তম।’ (সূরা আরাফ : ২৬)।

৩. বাসস্থান : মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো বাসস্থান। যেমনটা আল কোরআনের ঘোষণা: ‘আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের ঘরকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা।’ (সূরা আন নাহল : ৮০)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা করিনি?’ (সূরা নাবা : ৬)।

৪. শিক্ষা : কোরআনুল কারিমের ঘোষণা : ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক : ১-২)।

৫. চিকিৎসা : আল কোরআনে এসেছে, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের জন্য ওষুধ ও মুমিনের জন্য রহমত।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৮২)। নবী (সা.) এই পৃথিবীর মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থায় উৎসাহিত করেন এবং উন্নত চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চাঙ্গীনভাবে। যেমন, তিনি বলেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল ব্যবহার কর, কেননা এটা কল্যাণকর বৃক্ষ।’ নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকালে মধু খাবে তার কোনো কঠিন ব্যাধি হবে না।’ (ইবনে মাজাহ)। এমনিভাবে তিনি চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক অনেক বস্তু যেমন আদা, কালিজিরা, খেজুর, দুধ ইত্যাদির উপকারিতা বর্ণনা করেছেন, যা সব মানুষের জন্য কল্যাণকর।

নারীর কল্যাণে প্রিয় নবী (সা.)-এর ভূমিকা : আইয়ামে জাহিলিয়ায় কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে একে দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করে তাকে হত্যা বা জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হতো! কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (সা.) স্পষ্ট করে ঘোষণা দিলেন, কন্যাসন্তান দুর্ভাগ্যের নয় বরং সৌভাগ্যের কারণ। তাদের হত্যা করা যাবে না, অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও কন্যাসন্তানকে উত্তমরূপে লালন-পালন করলে তারা তার (লালন-পালনকারী) জন্য জাহান্নামের পথে আড়াল হয়ে (পিতা-মাতাকে) এ থেকে রক্ষা করবে। (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)। নারীদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিপূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)।

সামাজিক কল্যাণে রসুল (সা.)-এর ভূমিকা : বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে বিরাজমান ভেদাভেদ, পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহকে চিরতরে দূরীভূত করার জন্য প্রিয় নবী (সা.) সর্বোত্কৃষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। যার প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক চুক্তিসহ সবিশেষ মদিনা সনদে।

অর্থনৈতিক কল্যাণে রসুল (সা.)-এর ভূমিকা : মানবসভ্যতার আবহমান কাল থেকেই এ কথা স্বীকৃত যে, অর্থই মানব জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই এ ব্যবস্থায় অকল্যাণকর কোনো কার্যক্রম মানব জীবনে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা আনবেই! যেমন সুদ, ঘুষ, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা ইত্যাদি।

নবী (সা.) ইরশাদ ফরমান, ‘যার শরীরের মাংস হারাম খাবারে গঠিত হয়েছে, সে জাহান্নামে যাওয়ার জন্য অগ্রগণ্য।’ (বায়হাকি)।

মানব জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধির উত্তম মডেল হলেন আল্লাহর হাবিব আমাদের প্রিয় নবী (সা.)। তাঁর মাঝে রয়েছে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, সাংস্কৃতিক জীবন তথা সব ক্ষেত্রে শান্তি আনয়নের সর্বোত্তম নমুনা। তাই তাঁর পবিত্র আদর্শ অনুসরণ করে কল্যাণকর ও শান্তির জীবন গঠন করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুলের কাছে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’

প্রাক-খুতবা বয়ান করেন : মুফতি হাফিজ আহমদ নিজামী শাফি। খতিব : মসজিদে বায়তুল আকসা, ধানমন্ডি, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর