শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষা ক্ষেত্রের দুর্নীতি

সরকারকে কঠোর হতে হবে

শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক সুনীতির; দুর্নীতির সঙ্গে এর কোনো ঠাঁই থাকাই উচিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে পদে পদে ঘটছে দুর্নীতি। শিক্ষা ক্ষেত্রে সুনীতি ও সুবিবেচনার যে বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত তার বিপরীত বাস্তবতাই বিরাজ করছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের শিক্ষা সেক্টরে পদে পদে ঘুষবাণিজ্য অন্য সব দফতরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। থানা শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষা অধিদফতর সব বিভাগ, শাখা ও ইউনিটেই বিরাজ করছে ‘ঘুষ’-এর একচ্ছত্র রাজত্ব। স্কুলে ছাত্র ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, জাতীয়করণ এমনকি অবসরের পর পেনশনের টাকা তুলতেও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশনে দুর্নীতি কমলেও শিক্ষা খাতে লাগেনি তার ছোঁয়া। ঘুষ-দুর্নীতি নিশ্চিত করতে অনুসৃত হচ্ছে এমন সব কৌশল, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে কথা বলতে গেলেও নাকি ঘুষ লাগে এমন রটনা রয়েছে। সেখানে কোনো শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তা আমলে নিতে হলেও চাহিদামাফিক উেকাচ দিতে হয়। সেসব অভিযোগ তদন্ত করাতে যেমন টাকা লাগে, আবার তদন্ত টিমের কার্যক্রম থামিয়ে দিতেও লাগে ঘুষ নামের মহৌষধ। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রুটিন পরিদর্শনে গেলেও তাদের খুশি না করে উপায় থাকে না। শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিতে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত অন্তত ছয় ধাপে ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে ঘুষ দিতে হয় কমবেশি ২০টি ধাপে। এ নিয়ে তহবিল সংগ্রহের তথ্যও আছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, আগে তাদের এমপিওপ্রতি ঘুষ দিতে হতো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এখন সেই ঘুষের পরিমাণ দু-তিন গুণ বেড়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি শিক্ষাব্যবস্থার মাহাত্ম্যকেই দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতির বরপুত্রদের কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে জনগণের ট্যাক্স থেকে প্রতি বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, তা কাঙ্ক্ষিত সুফল অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষার সন্তুষ্টজনক মান অর্জনেও অর্জিত হচ্ছে না সাফল্য। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনেও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান নৈরাজ্য অনেকাংশে দায়ী। এ লজ্জা থেকে রক্ষা পেতে হলে শিক্ষা ক্ষেত্রের দুর্নীতি, অসততা রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতির যে নোংরা ভূত শিক্ষা ক্ষেত্রে জেঁকে বসেছে তাদের নিরস্ত করতে যত্নবান হতে হবে।

সর্বশেষ খবর