শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ হোক

অমর একুশের মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দেশের ভাষা, কৃষ্টি এবং শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ভাষা, নিজেদের শিল্প-সাহিত্যকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে না পারি, এর উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে আরও উন্নত হতে পারব না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, যে বাংলাদেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম-কর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এমনকি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরাও তাদের ভাষার চর্চা করতে পারবে। বাঙালির দেদীপ্যমান বাতিঘর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, দিকনির্দেশনারও দাবিদার। মানুষের মনের অন্ধকার ঘোচাতে বই পড়া বা জ্ঞান অন্বেষণের কোনো বিকল্প নেই। নিজ দেশের ভাষা, কৃষ্টি, শিল্প, সাহিত্যের প্রতি মমত্ববোধ দেশপ্রেমের অপরিহার্য শর্ত। এর অভাব ঘটলে জাতীয় অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির জ্ঞান আহরণের বাতিঘর হিসেবে বিরাজ করছে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গা নদীপাড়ের মানুষের জ্ঞানচর্চায় গ্রন্থমেলা যেমন অবদান রাখছে, তেমন দেশের লেখক, কবি-সাহিত্যিক এবং পাঠককুলের মিলনমেলা হিসেবে জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রভূমি হিসেবে রাখছে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছিল সাড়ে ছয় দশক আগে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। বাঙালি পরিচয় সামনে নিয়ে আসতে ভূমিকা রেখেছিল সে আন্দোলন। বলা যায় ভাষা আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধেরও সূতিকাগার। বাঙালির বিকাশের প্রতিটি স্তরে ভাষা আন্দোলন ও একুশে গ্রন্থমেলা স্মরণীয় অবদান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবার এমন একসময় একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেছেন, যখন জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প দুনিয়াজুড়ে বড় সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। বিশ্বশান্তির জন্য উগ্রবাদের চর্চা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিবাদের নোংরা দানবরা বাংলাদেশের সব অর্জনকে কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিপথগামীর সংখ্যা অতি সামান্য হলেও তারা বাঙালি জাতির উদার অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। যে জাতির সন্তানরা প্রাণ দিয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য, সে জাতি সম্পর্কে বহির্বিশ্বে ভুল ধারণা সৃষ্টি করছে গুটিকয় বিপথগামীর উগ্রবাদ চর্চা। তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে এবং তরুণ প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদের কালো ছায়া থেকে মুক্ত রাখতে মুক্তবুদ্ধি চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে। বই পড়ে জ্ঞান অন্বেষণ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি তরুণদের মমত্ববোধের উন্মেষ ঘটাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর