খেলার মাঠের অভাবে রাজধানীর শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেড় কোটি মানুষের মহানগরী ঢাকায় খেলার মাঠ ও পার্কের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় পাঁচ শতাংশেরও কম। এক সময় রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ছিল খেলার মাঠ। কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ অপদখলের শিকার। এক সময় যেসব মাঠে ছিল ফুটবল নিয়ে শিশু-কিশোরদের অনুশীলন, যেসব মাঠে ঘোরাফেরা করে মুক্তবায়ু সেবনের সুযোগ পেত এলাকার মানুষ সেগুলো এখন অপদখলের শিকার। তার কোনোটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি স্থাপনা, কোনোটিতে মার্কেট। ২০০৩ সালে রাজধানীর খেলার মাঠ ও পার্ক বেদখলের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনজীবী সমিতি হাই কোর্টে একটি রিট করে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে রিট হয়। এ দুই রিটের প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকার ৬৮টি খেলার মাঠ ও পার্কের জন্য সংরক্ষিত জায়গা ১৫ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এ সময়ের মধ্যে এসব খেলার মাঠ, খোলা জায়গা ও পার্কের সীমানা চিহ্নিত করতেও দেওয়া হয় নির্দেশ। দুটি পৃথক রিটের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ খেলার মাঠ ও পার্কের জন্য সংরক্ষিত জায়গা দখলমুক্ত করার আদেশ দিলেও আদালতের সে আদেশ যথাযথভাবে পালনে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতিই লক্ষ করা যায়নি। বরং দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। একের পর এক মাঠ অপদখল হয়ে পড়ছে। রাজধানীতে গড়ে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে একটি খেলার মাঠ। পার্কগুলো এমনই দুরবস্থার শিকার তা শিশু-কিশোরদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। কোনো কোনো পার্ক মাদকসেবী এবং অপরাধীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। শিশুরা তো বটেই, বয়স্করাও সেখানে যেতে ভয় পান। কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মাঠ ও মিনিপার্ক রিকশাভ্যানের গ্যারেজ এবং ট্রান্সপোর্টের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। রাজধানীর শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা করা ও সাধারণ মানুষের মুক্ত বায়ু সেবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির অভাবে। কর্তৃপক্ষের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙুক এমনটি দেখতে চায় নগরবাসী।