রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

বই মানব আত্মাকে মার্জিত করে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বই মানব আত্মাকে মার্জিত করে

গভীর রাত। প্রকৃতিতে বয়ে চলেছে সুনসান নীরবতা। হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন মানবতার কাণ্ডারি হজরত মুহাম্মদ (সা.)।  চোখ বন্ধ। মাথা নিচু। ভাবনার সাগরে ডুবে আছেন তিনি। রাতের আঁধার শেষে ভোরের আলো ফুটবে। মানুষের জীবনের আঁধার কবে ঘুচবে? কীভাবে সমাজের আঁধার দূর করে আলোর ফুল ফোটানো যায় এ বদ্ধ সমাজে? মানুষের মন আকাশে শান্তির পায়রা উড়ানো যায় কীভাবে? এসব ভাবনায় বিভোর মুহাম্মদ (সা.)। এক দিন দু-দিন নয়, এক বছর দু-বছরও নয়। ১৫ বছর এভাবে সাধনার সাগরে ধ্যান করেছেন তিনি।

১৫ বছর পর এক মায়াবী রাতে নূরের ঝিলিক ছড়িয়ে খোদার দূত জিব্রাইল (আ.) হাজির হলেন হেরা গুহার চূড়ায়। ধ্যানমগ্ন মুহাম্মদ (সা.)-কে বললেন, ‘ইকরা! পড়!’ সমাজের আঁধার দূর করে আলোর সূর্য জাগানোর যে স্বপ্ন তুমি দেখছ, মনের কালো মুছে ভালোর ফুল ফোটানোর যে ব্রত তুমি নিয়েছে— এ জন্য একটিই সূত্র, একটিই পথ। ‘পড়! তোমার পালনকর্তার নামে। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ পড়ার মাধ্যমেই সম্ভব আঁধার জীবনে আলোর পরশ বুলানো। বর্বর সমাজে মায়ার ফুল ফোটানো।

সেই থেকেই ‘ইকরা’ তথা পড়ার সাধনা শুরু মুহাম্মদের (সা.)। বিশ্বজোড়া পাঠশালা থেকে যে পাঠ তিনি নিয়েছেন তাতেই হয়ে ওঠলেন মানবতার মহান শিক্ষক। বীরের মতো বললেন, ‘বুইছতু মুআল্লিমান। আমি তোমাদের মাঝে শিক্ষক হয়ে এসেছি।’ জীবনভর পড়ার তাগিদ দিয়েছেন উম্মতকে। কখনো বলেছেন, ‘তালাবুল ইলমি ফারিদাতান আলা কুল্লি মুসলিম। পড়ার সাধনা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।’ আবার কখনো বলেছেন, ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান সাধনা কর।’ ‘জ্ঞান হলো মুসলমানের হারানো সম্পদ। যেখানেই পাবে সঙ্গে সঙ্গে কুড়িয়ে নেবে।’

জ্ঞান সাধনার ধর্ম ইসলামের অনুসারী আমরা। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে আমাকে আপনাকে। জ্ঞানের প্রধান মাধ্যম বই। বইয়ের পাতায় থেকেই ডুবে আমরা ফিরে যাই অতীতে, এগিয়ে যাই দূর ভবিষ্যতে। বইয়ের আলোয় চলি বর্তমানের পথ। বইহীন মানুষ যেমন অতীতের জানালা খুলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে না, তেমনি ভবিষ্যতের আলোয় সে বর্তমানে ঠিক পথে চলতে পারে না। ফলে তার জীবনে নেমে আসে এক ঘনঘোর অন্ধকার। ঘুটঘুটে কালো আঁধার।

কালোর আঁধার কেটে আলোর সূর্য আনার জন্যই চাই বই। মনের তৃপ্তি আত্মার শান্তির জন্য চাই বই। বই মানবকে ভদ্র বানাবে। গড়ে তুলবে মার্জিত মানুষ হিসেবে। আমার ভিতরের রাগ-ক্ষোভ, হিংসা-দ্বেষ এক কথায় যত আবর্জনা আছে, সব ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে আগাগোড়া সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে দেবে। আমাকে দেখে আরও ১০ জন মানুষ সুন্দর হবে। ভালো হবে। একটি ভালো বইয়ের শক্তি কত গভীর একবার ভাবুন তাহলে।

প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছে বইমেলা। জ্ঞানের মেলা। মানবের হারানো সম্পদের উৎসব। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত সাধনার উপকরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এ প্রাণের উৎসবে। আসুন! আমরা বইয়ের সাগরে সাঁতার কেটে আসি। বেছে বেছে সেরা বইগুলো কিনি। বই পড়ি। একে অন্যকে বই উপহার দিই। জ্ঞানের তৃষ্ণা জাগিয়ে দেই অন্যের মনেও। স্বপ্ন দেখাই সুন্দর জীবনের। বইয়ের ছোঁয়ায় যে আনন্দের সন্ধান আপনি পেয়েছেন সে আনন্দ ছড়িয়ে দিন মানব মনে। তবেই আমরা ভালো হব।  সুন্দর মনের মানুষ হব। আমরা সুন্দর হলেই সুন্দর হবে দেশ। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বইয়ের জোছনায় হূদয়কাড়া মানুষ হওয়ার তৌফিক দিন।  আমিন।

 

লেখক :  বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর