মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের নৈরাজ্য

লুটেরা মনোভাবে বাদ সাধতে হবে

দেশের ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলোয় ভর্তি ও টিউশন ফির ক্ষেত্রে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে। যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পকেট কাটলেও তা দেখার কেউ নেই। এসব স্কুল তদারকির জন্য সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। ফলে তাদের যথেচ্ছতা বন্ধের নেই কোনো উদ্যোগ। দেশের কোনো কোনো ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে যে হারে টিউশন ফি আদায় করা হয় তাকে ডাকাতি বললেও কম বলা হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বারিধারার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেজি গ্রেড ওয়ান থেকে গ্রেড ফাইভ শ্রেণিতে টিউশন ফি নেওয়া হয় ২৬ হাজার ৩১০ ইউএস ডলার বা প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা। গ্রেড নবম থেকে গ্রেড দ্বাদশ শ্রেণির টিউশন ফি নেওয়া হয় ৩২ হাজার ৮০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এ অঙ্ক ২৭ লাখের বেশি। ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত দিল্লি পাবলিক স্কুলে প্লে শ্রেণিতে ভর্তি হতেই জমা দিতে হয় আড়াই লাখ টাকা। আর মাত্র তিন মাসের টিউশন ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গ্রেড দ্বাদশ শ্রেণিতে তিন মাসের টিউশন ফি পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৮১ হাজার টাকা। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকায় গ্রেড ওয়ান শ্রেণিতে টিউশন ফি আদায় করা হয় ১৬ হাজার ৬০০ ডলার বা প্রায় ১৪ লাখ টাকা। গ্রেড ফোর শ্রেণিতে টিউশন ফি নেওয়া হয় ২৬ হাজার ১৫০ ডলার বা প্রায় ২২ লাখ টাকা। ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসেবে জমা দিতে হয় ৫০০ ডলার বা সাড়ে ৪১ হাজার টাকা। উত্তরায় আগা খান স্কুলে প্লে ও কেজি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৮ টাকা। প্রতি মাসের টিউশন ফি নেওয়া হয় ১৩ হাজার ৫৪৫ টাকা করে। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সময় টিউশন ফি, ভর্তি ফিসহ মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৯ টাকা পরিশোধ করতে হয়। রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পকেট কেটে টাকা আদায়কারী এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। ২০১২ সালে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলো সম্পর্কে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সংশ্লিস্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে ব্যর্থ হয়। নীতিমালা প্রণয়নে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও এ বিষয়ে এগোনো সম্ভব হয়নি। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও তা ফাইলচাপা পড়ে আছে রহস্যজনকভাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও যে ইংরেজি স্কুলগুলোর কালো হাত সক্রিয় এটি হয়তো তারই প্রমাণ। ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লুটেরা মনোভাবে বাদ সাধতে সরকার সক্রিয় হবে বলে আমরা আশাবাদী।

 

সর্বশেষ খবর