মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আত্মত্যাগী এক রাজনীতিবিদ

মোহাম্মদ ইউসুফকে শেষ শ্রদ্ধা

নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসুফ আর নেই। গত রবিবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিঃস্ব অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন একসময়ের শ্রমিক আন্দোলনের এই তুখোড় নেতা। সৎ ও আত্মত্যাগী এই রাজনীতিবিদ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিবেচিত হতেন জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে। তার মৃত্যুতে শুধু রাঙ্গুনিয়া কিংবা চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের রাজনৈতিক সচেতন মহলে গভীর শোকের সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের তুখোড় নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাকা চৌধুরীকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। গণমানুষের এই নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও নিজের বা আত্মীয়স্বজনের ভাগ্য গড়ার চিন্তা করেননি। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন চিরকুমার। সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। থেকেছেন ছোট ভাইয়ের সংসারে। গরিব ছোট ভাইয়ের আয়ের উৎস ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। তিনি বড় ভাইকে ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসার খরচ জোগাতেন। ১৭ বছর ধরে ছোট ভাই সেকান্দরের সঙ্গেই ছিলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। গত জানুয়ারিতে হঠাৎ করে মোহাম্মদ ইউসুফের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তার পায়ে পচন ধরে; যার চিকিৎসা ব্যয় ছোট ভাইয়ের পক্ষে নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। গত ৫ জানুয়ারি এক সাংবাদিক নেতা তার ফেসবুক ওয়ালে মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস দিলে তা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। ৭ জানুয়ারি রবিবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই ত্যাগী নেতাকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার চিকিৎসা ব্যয় সরকারিভাবে বহনের ঘোষণাও দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন এই ত্যাগী রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। মোহাম্মদ ইউসুফের মৃত্যুর মাধ্যমে জাতি এমন একজন মহান সন্তানকে হারাল যিনি ছিলেন দেশ ও জাতির জন্য উৎসর্গিত প্রাণ। শ্রমিকনেতা হিসেবে, ত্যাগী রাজনীতিক হিসেবে তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন তা লোভ-লালসা, ভোগ-বিলাসিতা ও ক্ষমতার অপচর্চার এই যুগে কল্পনা করাও কঠিন। আমরা নিবেদিতপ্রাণ এই রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমাদের শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। জানাচ্ছি শেষ অভিবাদন।

সর্বশেষ খবর