শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইন-আদালত

বাংলা ভাষা প্রচলন আইন

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পরও এ বাংলাদেশে বিচার বিভাগসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করা এখনো সম্ভব হয়নি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ‘প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। সংবিধানের এ বিধান সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না দেখে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ (১৯৮৭ সালের ২ নম্বর আইন) প্রণয়ন করা হয়।

১৯৮৭ সালের আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হবে। এই ধারা মোতাবেক কোন কর্মস্থলে যদি কোন ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহা হইলে উহা বেআইনি ও অকার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।’ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আদালত’ অর্থ সুপ্রিম কোর্টসহ যে কোনো আদালত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩ এবং উল্লিখিত আইনের অধীন আদালতসহ প্রজাতন্ত্রের সব কার্যক্রম ও রাষ্ট্রীয় নথিপত্র বাংলা ভাষায়ই বাধ্যতামূলকভাবে সম্পাদিত হওয়ার কথা। প্রসঙ্গত, দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ করা হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়া বছরের বাকি দিনগুলোতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করা হয় না— এ অভিযোগ এনে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাই কোর্টে রিট করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে বিষয়টি আমলে নেয় হাই কোর্ট। শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে রুলও ইস্যু করেন বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বেঞ্চ। শুনানি শেষে রায় হয় ২৫ আগস্ট।  রায়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে, তাদের স্মৃতি রক্ষায় শহীদ মিনার গড়ার নির্দেশ  দেওয়া হয়

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ই-মেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর