রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব হারাচ্ছে তিস্তা

পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সোচ্চার হোন

উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে করালগ্রাসী তিস্তা নদী শুষ্ক মৌসুমে সরু খালে পরিণত হয়েছে। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর ১৬৫ কিলোমিটার বাংলাদেশে। বাংলাদেশ অংশের তিস্তার যেখানে সেখানে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। তিস্তা নদীর জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে নদী শুকিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা। দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ায় তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের জীবনজীবিকা গভীর সংকটে পড়েছে। তিস্তাপাড়ে চলছে হাহাকার অবস্থা। কৃষক, জেলে থেকে শুরু করে তিস্তার সুবিধাভোগী লাখো মানুষের চাপা কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ অংশে তিস্তার বুকজুড়ে বাস করত ৩৭ প্রজাতির মাছ। পানি না থাকায় আজ সেগুলো বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৯ প্রজাতির মাছ। তিস্তায় বাস করা ৬৩ প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অধিকাংশই এখন বিপন্ন। তিস্তার এ মরণদশার কারণে এ নদীর সঙ্গে যুক্ত ঘাঘট নদ, বুড়িতিস্তা, আলই কুমারী, বুড়াইল, খোকসা ঘাঘট, আখিরা নদীর অস্তিত্বও হুমকির মুখে। ইতিমধ্যে রংপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বুল্লাই, টেপা, ধুম ও ইছামতী নদী। অভিন্ন নদী তিস্তার পানি সমভাবে বণ্টনের সমঝোতা হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। আট বছর আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরকালে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে সে চুক্তি থেকে পিছিয়ে আসেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি থমকে আছে ঠুনকো অজুহাতে। তিস্তা ব্যারাজের উজানে ভারত গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করায় শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। পানি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, অবিলম্বে তিস্তা চুক্তি না হলে এ নদী পুরোপুরি মরে যাবে। হারিয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য। ভয়াবহ মরু প্রক্রিয়ার কবলে পড়বে রংপুর অঞ্চল। তিস্তাকে উত্তরের জীবনরেখা বলা হয়। বছরজুড়ে এক সময় তিস্তায় অথৈ পানি থাকত। ১৯৭৭ সালে উজানে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করে ভারত তিস্তার গতিকে থামিয়ে দেয়। তিস্তাকে বাঁচাতে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কাজ না হলে পানির হিস্যা আদায়ে প্রয়োজনে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর